সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠন অধ্যক্ষের এই ধরনের অপকর্মের বিরুদ্ধে দ্রুত কোন পদক্ষেপ না নিলে বৃহত্তর আন্দোলনে যাবার আভাস দিয়েছে।
বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ ডা. মো. রেজাউল করিম সাংবাদিকদের বলেন, এগুলো বানানো গল্প কাহিনী।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কমেকের অধ্যক্ষ রেজাউল করিম চাকুরিবিধির তোয়াক্কা না করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের স্ক্যানো ওয়ার্ডে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
হাসপাতালে কর্মরতদের কয়েকজন অভিযোগ করেন, স্ক্যানো ওয়ার্ডের দুজন কনসালটেন্ট থেকে একজনকে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেয়ার নিয়ম আছে। কিন্তু সেই নিয়ম উপেক্ষা করে রেজাউল করিম নিজেই দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এছাড়া তিনি কমেক হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান হিসেবে বাড়তি দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
ভর্তিবাণিজ্যের অভিযোগও উঠেছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। অভিযোগে জানা গেছে, বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকার মধ্যে ভর্তির নিয়ম আছে। কিন্তু কমেকে নেয়া হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। আর এসব ভর্তির টাকা নন অডিটেবল ফান্ড হওয়ায় এর কোন হিসাবও কলেজে সংরক্ষিত নেই। এছাড়া কমেকে শিক্ষার্থীদের নতুন হোষ্টেলে উঠতে রশিদ ছাড়াই বাধ্যতামূলকভাবে প্রতিজনকে ৫ হাজার টাকা করে দিতে হচ্ছে।
গত ৯ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ততা এবং শিবিরকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ারও অভিযোগ আনা হয়। এতে অধ্যক্ষ অতীতে বিএনপি সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাবের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিভিন্ন তথ্যও তুলে ধরা হয়।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, বর্তমান শিক্ষাবর্ষে কমপক্ষে ৩০টি আসনে অধ্যক্ষ বিশেষ কৌশলে শিবির কর্মীদের ভর্তি করিয়েছেন।
কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ শাখা ছাত্রলীগ সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেছে, কক্সবাজারের ঝিলংঝা ইউনিয়নে নির্মিত স্থায়ী ক্যাম্পাসে গত ৫ জানুয়ারি ছাত্রশিবিরকে ২২টি এবং ছাত্রদলকে ৬টি সিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অথচ ২৬ জন ছাত্রলীগের কর্মীকে সিট বরাদ্দ দেয়া হয়নি।
সিট বরাদ্দের নোটিশে অধ্যক্ষ রেজাউল করিমের স্বাক্ষর আছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানায় সংগঠনটি।
জানতে চাইলে অধ্যক্ষ রেজাউল করিম সাংবাদিকদের বলেন, সকল শিক্ষার্থী আমার কাছে সমান। যারা মেধার মূল্যায়নে টিকেছে তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।
অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে প্রগতিশীল সংগঠনগুলোর সংস্কৃতি চর্চার দুটি রুমও তালাবদ্ধ করে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্বে থাকার সময় রেজাউল করিম শিশু সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাচনে বিএনপি–জামায়াত সমর্থিত প্যানেলে সহ-সভাপতি পদে নির্বাচন করেন এবং পরাজিত হন।
এরপর বিভিন্ন কেলেংকারির কারণে তাকে চমেক থেকে নোয়াখালী মেডিক্যাল কলেজে বদলি করা হয়। এই আদেশের বিরুদ্ধে তিনি রিট করে হেরে যান। কেলেংকারির কারণে ৯৯ সালে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল থেকেও তিনি বদলি হন বলে অভিযোগ আছে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, কমেকের একটি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর রাতারাতি ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকার বিল তৈরি করে তা অনুমদনের জন্য হিসাবরক্ষণ অফিসে পাঠিয়েছে কর্তৃপক্ষ। অথচ এর বিপরীতে যে মালামাল বুঝে পাওয়ার কথা সেটা পাওয়া যায়নি। অসঙ্গতি থাকায় বিল অনুমোদন করেনি হিসাবরক্ষণ অফিস।
বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কমেকের অধ্যক্ষ ডা. মো. রেজাউল করিম সাংবাদিকদের বলেন, এখানে লুকোচুরির কিছু নেই। বরাদ্দ এসেছে এটা ঠিক। যেহেতু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ, তাই আমরা টাকাটা ধরে রাখার জন্য চাহিদাপত্র ও বিল জমা দিয়েছি। এই টাকা চলে গেলে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ক্ষতি হতো।
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে কক্সবাজার সরকারি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পদে যোগ দেন রেজাউল করিম। লতি বছরের জুন মাসে তার অবসরে যাওয়ার কথা আছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৭
টিটি/টিসি