ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চমেক কর্মচারী ও দালালদের বিরুদ্ধেই যত অভিযোগ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৭
চমেক কর্মচারী ও দালালদের বিরুদ্ধেই যত অভিযোগ অভিযোগের প্রেক্ষিতে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বি. জেনারেল মো. জালাল উদ্দীন

চট্টগ্রাম: ১৩১৩ শয্যার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের কর্মচারী ও দালালদের বিরুদ্ধেই সবচেয়ে বেশি অভিযোগ সেবাগ্রহীতাদের। এর বাইরে ডাক্তার-নার্সদের নামসহ ইউনিফরম না পরা, রোগীদের হয়রানি, পদে পদে টাকা আদায়, দুর্গন্ধ, অপরিচ্ছন্নতাসহ নানা অভিযোগও রয়েছে।

রোববার (২৪ ডিসেম্বর) চমেক হাসপাতালের সেবা ও সুবিধাদি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে উদ্ভূত সমস্যাদি শ্রবণ ও নিষ্পত্তি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে আয়োজিত গণশুনানিতে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন ভুক্তভোগীরা। বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় দুর্নীতি দমন কমিশন ও মহানগর দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি এ শুনানি করে।

আগ্রাবাদের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিজয় হলে অনুষ্ঠিত শুনানিতে প্রধান অতিথি ছিলেন দুদকের কমিশনার ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদ। শুনানিতে ২০ জন ভুক্তভোগী বক্তব্য শোনা হয়।

স্বাগত বক্তব্যে দুদক কমিশনার বলেন, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আমরা গণশুনানি করছি। যাতে সমস্যাগুলো সমাধান করে কীভাবে চিকিৎসার মান বাড়ানো যায় সে পথে যেতে পারি।

অভিযোগের মধ্যে ছিল ড্রেসিং করে টাকা আদায়, দালালদের খপ্পরে পড়ে ওষুধের দোকানে ঠকানো, আয়া-ওয়ার্ডবয়-আনসারদের কাছ থেকে টাকা ছাড়া সেবা না পাওয়া, হাসপাতালের কর্মীদের দুর্ব্যবহারের শিকার হওয়া, দুর্বোধ্য প্রেসক্রিপশন লেখা, নিম্নমানের খাবার পরিবেশন, অজ্ঞাত রোগী বা এতিমদের জরুরি সেবায় দীর্ঘসূত্রতা, ওষুধ কোম্পানির লোকজনের প্রেসক্রিপশনের ফটো তোলার হিড়িক ইত্যাদি।    

অভিযোগের প্রেক্ষিতে চমেক হাসপাতাল পরিচালক বি. জেনারেল মো. জালাল উদ্দিন বলেন, চমেকে ৫০০ শয্যার অবকাঠামোতে শুধু প্রশাসনিক আদেশে ১৩১৩ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। অবকাঠামো ও সাংগঠনিক কাঠামোর উন্নতি হয়নি। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগ বন্ধ কয়েক বছর। এ দুটি পদে অবসর ও মৃত্যুজনিত কারণে জনবল শুধু কমছে। ৪০০ টয়লেট আছে, ক্লিনার মাত্র ১৩৬ জন। রোগী অভিভাবক মিলে ৮ হাজার মানুষ ব্যবহার করছে এসব টয়লেট।

তিনি বলেন, ১৮ জন নিরাপত্তা রক্ষী দিয়ে ৮৭ একরের হাসপাতাল এলাকা পরিচালনা কঠিন। ২৫টি অপারেশন থিয়েটার, ৫৯টি ওয়ার্ড আছে। দামি দামি সব যন্ত্রপাতি পাহারায় রাখতে হচ্ছে। রোগীদের নিরাপত্তা বিধান করতে হচ্ছে। তাই দালাল, মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ, ভবঘুরেসহ অনাকাঙ্ক্ষিত লোকজনের দৌরাত্ম কমানো যাচ্ছে না। আমাদের সাধ আছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার। কিন্তু এ কাজে শুধু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নয়, সহযোগিতা করতে হবে রোগী, অভিভাবক, স্বজনদেরও। আমরা দেয়ালে রং করব, মানুষ পানের পিক, কফ ফেলবে তা-তো হয় না। আমরা জনবল চাই। আমরা ৬৫০ শয্যার শিশু হাসপাতাল, ৩৫০ শয্যার হৃদরোগ হাসপাতাল, ৫০০ শয্যার ট্রমা হাসপাতাল চাই। এসব হলে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাবেন বৃহত্তর চট্টগ্রামের মানুষ।  

দুদক কমিশনার তিন মাস পর মার্চে আবার শুনানির অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখার ঘোষণা দিয়ে চমেক হাসপাতাল পরিচালককে জরুরি কিছু নির্দেশনা দেন।

এর মধ্যে রয়েছে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে হলেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা, অফিস দুর্নীতিমুক্ত সাইনবোর্ড লাগানো, সচেতনতামূলক ভিডিও প্রদর্শন করা, ডাক্তারদের ইউনিফর্ম পরা ও আইডি কার্ড রাখা, অভিযোগ কেন্দ্র স্থাপন, একটি শিশু হাসপাতালের জন্য জায়গা নির্ধারণ ইত্যাদি।

বক্তব্য দেন স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যা বিভাগের প্রধান ডা. শাহানারা চৌধুরী। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রামের সভাপতি ডা. মুজিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল ইকবাল, ক্যাবের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন দুদক চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক মো. আক্তার হোসেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৭

এআর/টিসি

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।