ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চার বছরের ছেলের তথ্যে বাবার খুনির সন্ধান

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭
চার বছরের ছেলের তথ্যে বাবার খুনির সন্ধান  গ্রেফতার হওয়া তিন ‘খুনি’

চট্টগ্রাম: গত ২১ ডিসেম্বর নগরীতে নিজ বাসার সামনে থেকে মো.রানা (২৮) নামে এক রিকশাচালকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।  তাকে কুপিয়ে খুনের চিহ্ন ছিল শরীরে।  শুরু থেকেই রানার স্ত্রী বেবি আক্তার ববিতাকে (২৮) পুলিশ সন্দেহের মধ্যে রাখলেও তথ্যপ্রমাণ ছিল না।  কিন্তু তদন্তে যাওয়া পুলিশকে রানার চার বছরের ছেলে হঠাৎ বলে উঠে, ‘বাবাকে মামা খুন করেছে। ’

এই একটি বাক্যে সূত্র পেয়ে যায় পুলিশ।   সেই মামার সন্ধানে নেমে ববিতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।

  ববিতা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততাসহ পুরো ঘটনা স্বীকার করে ফেলেন।  

খুলশী থানার ওয়্যারলেস কলোনির আট নম্বর গলির বাসার সামনে থেকে রিকশাচালক রানার মরদেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ।

  এই ঘটনায় ববিতাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

জানতে চাইলে খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো.নাসির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এটি একটি ক্লু-লেস মার্ডার।   শুরুতেই রানার স্ত্রীকে আমাদের সন্দেহ হয়েছিল।   সেজন্য স্ত্রী মামলা করতে চাইলেও আমরা রানার বাবা মনসুর আলীকে বাদি করেছিলাম।   মূলত অবৈধ সম্পর্কের জেরে ববিতা ও তার এক বন্ধুসহ চারজন মিলে নিরীহ রানাকে খুন করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা খুলশী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইমাম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, চার বছরের শিশুটির বক্তব্য আমাদের তদন্তের ক্ষেত্রে মূল সূত্র ছিল।   প্রায় অবুঝ শিশুটি যে বিষয়টি এভাবে বলে দেবে, হত্যাকারীরাও ভাবতে পারেনি।   এছাড়া স্ত্রীর আচরণেও শুরু থেকেই আমাদের সন্দেহ লেগেছিল।   তবে ছেলের বক্তব্যের পর পুরোপুরি নিশ্চিত হই।

সূত্রমতে, রানা ও ববিতা সাতবছর আগে ভালবেসে বিয়ে করেন।   তাদের চার বছরের ও দেড় বছর বয়সী দুই ছেলে আছে।   তাদের বাসার পাশেই আকিজ বিড়ি কোম্পানির গুদাম। সেখানে কর্মরত ছিলেন গুদামের ম্যানেজার কামরুল ইসলাম, সেলসম্যান মুন্না ও আয়াতুল্লাহ। গুদাম এলাকায় খেলতে যেতেন রানার ছেলেরা।  তাদেরকে আদর করতেন কামরুল।  রানার ছেলেরা তাকে মামা ডাকত।

কামরুলের সঙ্গে পরিচয় হয় রানার স্ত্রী ববিতার সঙ্গে।  রানার অনুপস্থিতিতে বাড়ে ঘনিষ্ঠতাও।  রানা জানতে পারলে সংসারে অশান্তি শুরু হয়। এক পর্যায়ে কামরুল ও ববিতা মিলে রানাকে খুনের পরিকল্পনা করেন।

পরিকল্পনামত ঘটনার দিন ১৯ ডিসেম্বর রাত ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে রানার বাসার সামনে আসেন কামরুল, মুন্না ও আয়াতুল্লাহ।  বাসায় ঘুমিয়ে ছিলেন রানা ও তার বড় ছেলে। তিনজন বাসায় ঢোকেন। বাইরে পাহারায় দেড় বছরের সন্তানকে নিয়ে ববিতা।

 

 

তিনজন বাসায় ঢুকে শ্বাসরোধ ও অণ্ডকোষ চেপে ধরে রানাকে খুন করে।  ধ্বস্তাধ্বস্তিতে জেগে উঠে খুনের দৃশ্য দেখে ফেলে তাদের চার বছরের ছেলেটি।   সারাদিন মরদেহ বাসায় পড়েছিল।

২০ ডিসেম্বর রাত ১২টা থেকে ১টার মধ্যে কামরুলসহ তিনজন আবার আসে।  এসময় তারা রানার দুই পায়ের রগ কেটে দেয়।  শরীরের বিভিন্ন অংশে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। রাতে মরদেহ বাসার সামনে ফেলে রাখে।

পরদিন অর্থাৎ ২১ ডিসেম্বর পুলিশ বাসার সামনে থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।  তখন তার স্ত্রী দাবি করেছিলেন, আগের দিন রিকশা নিয়ে বের হয়ে আর ফেরেননি রানা।  পরদিন খুন করে কে বা কারা তার লাশ বাসার সামনে ফেলে গেছে।

তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইমাম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমে আমরা স্ত্রীকে গ্রেফতার করি। তার দেওয়া তথ্যে কামরুল ও মুন্নাকে গ্রেফতার করেছি। আয়াতুল্লাহ পালিয়ে গেছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭

আরডিজি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।