কর্ণফুলী থানা এলাকায় চার নারীকে ধর্ষণের ঘটনার পর ওসি সৈয়দুলকে প্রত্যাহারের দাবি উঠেছে। এমনকি সিএমপি এই ঘটনায় নিজেদের ব্যর্থতার কথাও স্বীকার করে নিয়েছে।
কর্ণফুলী থানার শাহ মীরপুর এলাকায় গত ১২ ডিসেম্বর এক প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতি ও চার নারীকে ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে। এই ঘটনায় মামলা করতে গেলে কর্ণফুলী থানার ওসি ঘটনাস্থল তাদের এলাকা নয় দাবি করে পাঠিয়ে দেন পটিয়া থানায়। পটিয়া থানা ঘটনাস্থল তাদের এলাকা না হওয়ায় মামলা নেয়নি। এরপর কর্ণফুলী থানা মামলা নিতে বিভিন্ন গড়িমসি শুরু করে।
শেষ পর্যন্ত ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের নির্দেশে ঘটনার সাতদিন পর মামলা নেয় কর্ণফুলী থানা।
পুরো বিষয়ে কর্ণফুলী থানার দায়িত্বহীন আচরণে ক্ষোভ সৃষ্টি হয় এলাকাবাসীসহ চট্টগ্রামের সচেতন নাগরিকদের মধ্যে। ইতোমধ্যে কয়েক দফা ওসি’র প্রত্যাহার দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে তীব্র সমালোচনা।
এই অবস্থায় গত ২৫ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনে ডাকেন সিএমপির উপ-কমিশনার (বন্দর) হারুন উর রশিদ হাযারী। তিনি ঘটনার পর দায়িত্বশীল আচরণের ক্ষেত্রে পুলিশের আংশিক ব্যর্থতা স্বীকার করে নেন। কিন্তু এরপরও ওসি সৈয়দুল আছেন তার চেয়ারে।
সূত্রমতে, ঘটনার পর কর্ণফুলী থানার গাফেলতির অভিযোগ উঠার পর সিএমপির কমিশনারের নির্দেশে অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) সালেহ মোহাম্মদ তানভীরকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আদেশ দেন। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং বাদিসহ ভিকটিমের সঙ্গে কথা বলেন। প্রাথমিক তদন্তে তিনি কর্ণফুলী থানার ওসি’র কোন গাফেলতি পাননি।
জানতে চাইলে সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বাংলানিউজকে বলেন, আমি বিষয়টি প্রাথমিকভাবে তদন্ত করেছি। বাদির সঙ্গে কথা বলেছি। বাদি বলেছেন, তিনি ঘটনার পর কর্ণফুলী থানায় গিয়ে ঘটনাস্থল বড় উঠান বলেছেন। স্বাভাবিক কারণেই ওসি বাদিকে পটিয়া থানায় পাঠিয়েছেন। আর প্রথমে তিনি শুধু ডাকাতির কথা বলেছেন, ধর্ষণের কথা বলেননি।
ওসি’র প্রত্যাহার দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসলে সবাই যেভাবে বলছেন বিষয়টি সেরকম নয়। পুলিশের গাফেলতির কোন অভিযোগ বাদি তো পারসোনালি করেননি।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে সিএমপির অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা তানভীর এই বক্তব্য দিয়েছেন। তবে বিকেলেই সিএমপির পক্ষ থেকে পুলিশের গাফেলতি তদন্তে দুই সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (বন্দর) আরেফিন জুয়েল এবং সহকারী কমিশনার (কর্ণফুলী জোন) জাহেদুল ইসলামকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে।
এই কমিটিকে লোকদেখানো এবং ওসি সৈয়দুলকে দায়মুক্তি দিতেই করা হয়েছে বলে আলোচনা আছে খোদ সিএমপিতেই। ঘটনার পর প্রতিবাদকারীদের মধ্যেও সিএমপির এই গড়িমসি ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, কর্ণফুলী জোন ও থানা সিএমপির বন্দর বিভাগের অধীন। এই থানার ব্যর্থতার দায় বিভাগের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের উপরও বর্তায়। অথচ সেই বিভাগের দুজন কর্মকর্তাকে সদস্য করে কমিটি করা শুধুমাত্র সময়ক্ষেপণ করে ওসিকে দায়মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা বলে মনে করছেন তারা।
জানতে চাইলে সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বাংলানিউজকে বলেন, এডিসি-এসি দুজনই তো সুপারভাইজিং কর্মকর্তা। তারা তদন্ত করুক। তাদের তদন্তে যদি গাফেলতি থাকে, সেটারও আবার তদন্ত হবে।
প্রাথমিক তদন্তে দায়মুক্তি দেওয়ার পর কমিটির করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার তদন্ত আমি করেছি। তারাও তদন্ত করে প্রতিবেদন দেবে। উভয়পক্ষের বক্তব্য বিবেচনায় নিয়েই কমিশনার স্যার একটা সিদ্ধান্ত নেবেন। ’
এদিকে মামলা নিতে গড়িমসিই শুধু নয়, এজাহারে ঘটনার সময়ও ভুল উল্লেখ করেছে কর্ণফুলী থানা। এই ভুল আমলে নিয়ে ওসিকে শোকজ করেছেন আদালত।
সূত্রমতে, আদালতের শোকজের সিদ্ধান্ত জানার পরই সিএমপি তড়িঘড়ি করে একটি আনুষ্ঠানিক কমিটি করেছে।
এদিকে পুরো ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হলেও ওসি সৈয়দুল মোস্তফা মনে করছেন, তিনি কোন ভুল করেননি।
‘আমি জ্ঞাতসারে কোন ভুল করিনি। আমি থানায় নতুন এসেছি। বাদি এসে যে ঘটনাস্থলের কথা বলেছেন, আমি খোঁজ নিয়ে সেটি পটিয়া থানায় জেনে তাকে সেখানে পাঠিয়েছিলাম। সঙ্গে আমার একটি ভিজিটিং কার্ডও দিয়েছিলাম। বাদি আবার এসেও আমাদের ধর্ষণের কথা বলেননি, শুধু ডাকাতির কথা বলেছেন। সুতরাং আমার কোন ভুল নেই। ’ বলেন ওসি
ঘটনার পর কর্ণফুলী থানা তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু এর মধ্যেই ২৬ ডিসেম্বর মামলাটির তদন্তভার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের কাছে ন্যস্ত করেছে সদর দফতর। দায়িত্ব পেয়েই পিবিআই তিনজনকে গ্রেফতার করে।
কর্ণফুলী থানা যে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে তারা কেউই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় বলে জানিয়েছে পিবিআই।
কর্ণফুলী থানার ওসি সৈয়দুল মোস্তফাও বিষয়টি স্বীকার করে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, তাদের সন্ধিগ্ধ হিসেবেই ধরা হয়েছিল।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৭
আরডিজি/টিসি