এসব বর্জ্য পানিতে,বাতাসে মিশে গিয়ে চারদিকে ছড়াচ্ছে প্রাণঘাতী ভয়ানক রোগব্যাধির জীবাণু। অন্যদিকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ।
২৫০ শয্যার আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের সব বর্জ্যই ফেলা হচ্ছে একটি খোলা ডাস্টবিনে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার নাথ খোলা ডাস্টবিনে মেডিকেল বর্জ্য ফেলার বিষয়টি স্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর বিষয়টি নজরে আসে। যতটুকু জেনেছি ২০১০ সালের দিকে এখানে একটি ইনসিনারেটর (বর্জ্য পোড়ানোর যন্ত্র) বসানো হয়েছিল। কিন্তু সেটি চালু করার সময়ই বিস্ফোরণ ঘটে। এখন আমরা লক্ষ্মীপুরের মতো একটি ইনসিনারেটর বরাদ্দ দেওয়ার জন্য চিঠি লিখব।
ইনসিনারেটর না আসা পর্যন্ত খোলা ডাস্টবিনে ভয়ানক ক্ষতিকর মেডিকেল বর্জ্য ফেলার বৈধতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যদি কম খরচে অনুমোদিত বেসরকারি কোনো সংস্থা এসব মেডিকেল বর্জ্য নিতে রাজি হয় তবে তাদের দিয়ে দেব। এ ব্যাপারে আমরা খোঁজখবর নেব। সিটি করপোরেশনের সঙ্গেও যোগাযোগ করব।
প্রায় একই দুরবস্থা পাশের জেমিসন রেডক্রিসেন্ট মাতৃসদন হাসপাতালেরও। এ হাসপাতাল কমপ্লেক্সে আছে ব্লাড ব্যাংক, প্যাথলজি সেন্টার, অপারেশন থিয়েটারসহ বিভিন্ন বিভাগ। প্রতিদিন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সিজারিয়ান অপারেশন হয় এখানে। প্রতিদিনের সব মেডিকেল বর্জ্য ফেলা হচ্ছে সড়কের ওপর একটি খোলা ডাস্টবিনে। সেখানে কাক আর কুকুরের লড়াই চলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আর বর্জ্য নিয়ে।
প্রতিষ্ঠানের উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে এ প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের সব বর্জ্য আমরা হাসপাতালের ডাস্টবিনে ফেলে দিই। সিটি করপোরেশনের বর্জ্যবাহী গাড়ি এসে সব নিয়ে যায়। এ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এভাবে চলে আসছে।
কিন্তু খোলা ডাস্টবিনে মেডিকেল বর্জ্য ফেলা যে জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ সে বিষয়টি তিনি জেনেও বেমালুম এড়িয়ে যান।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী নগরে বেসরকারি হাসপাতাল আছে ৮৭টি। ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে ১৮০টি। সরকারি-বেসরকারি মিলে মোট স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান আছে অন্তত আড়াইশ’।
এর মধ্যে মেডিকেল বর্জ্য সংগ্রহের জন্য একমাত্র অনুমোদিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম সেবাসংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে মাত্র ১৩০টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান।
আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র সংগ্রহের জন্য নামেমাত্র চট্টগ্রাম সেবাসংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। এরপরও মেডিকেল বর্জ্য তারা অবাধে খোলা ডাস্টবিনেই ফেলে দিচ্ছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. মুজিবুল হক বাংলানিউজকে বলেন, মেডিকেল বর্জ্য নিয়ে হেলাফেলা করার দিন আর নেই। এসব বর্জ্য যত্রতত্র ফেললে পানি, বাতাস, মাটি, খাবার, পশু-পাখি কিংবা সরাসরি মানুষ ও পরিবেশের ক্ষতি করবে।
তাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। চট্টগ্রামে যেসব প্রতিষ্ঠান খোলা ডাস্টবিনে মেডিকেল বর্জ্য ফেলবে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।
চট্টগ্রাম সেবাসংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জমির উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে ১৩০টি হাসপাতাল-ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে।
পাঁচলাইশের সেবা হাসপাতাল, হালিশহর জেনারেল হাসপাতালসহ অনেক প্রতিষ্ঠান চুক্তিবদ্ধ হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করছি। তারা চুক্তিবদ্ধ হলে তাদের মেডিকেল বর্জ্যও আমরা সংগ্রহ করব।
সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা শফিকুল মান্নান সিদ্দিকী যিশু বাংলানিউজকে বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান খোলা ডাস্টবিনে মেডিকেল বর্জ্য ফেলছে তাদের ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। মেডিকেল বর্জ্য খোলা ডাস্টবিনে ফেলাটা বেআইনি। এতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, জীবাণু ছড়াচ্ছে, পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম মহানগরী শাখার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আলতাফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মেডিকেল বর্জ্য খোলা ডাস্টবিনে ফেলাটা বিপজ্জনক। এগুলো সংগ্রহ, পরিবহন ও ধ্বংস করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান আছে। তাদের মাধ্যমেই কাজটি সম্পন্ন করতে হবে। যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হবে না, তারা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পাবে না।
বাংলাদেশ সময়: ০৪০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৭
এআর/টিসি/জেএম