ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

দু্ই চবি ছাত্রের কীর্তি

সহজলভ্য হবে ইনকিউবেটর

জমির উদ্দিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৩ ঘণ্টা, মে ৮, ২০১৯
সহজলভ্য হবে ইনকিউবেটর নিজেদের তৈরী ইনকিউবেটর সহ দুই শিক্ষার্থী।

চট্টগ্রাম: দেশের পরিসংখ্যান অনুসারে শিশু মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ৩৮ জন। মৃত্যুর প্রধান কারণ জন্মকালীন কম ওজন, জন্ডিস, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ইত্যাদি। এসব সমস্যা দূর করার জন্য প্রয়োজন ‘ইনকিউবেটর’।

কিন্তু দেশে পর্যাপ্ত সংখ্যক ইনকিউবেটর নেই। বাজারে যেসব ইনকিউবেটর পাওয়া যায়, সেগুলো বিদেশে তৈরি এবং দাম ৫ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪র্থ বর্ষের দুই ছাত্র জয়দীপ কর ও এম এ নাঈমুল ইসলাম নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি করেছেন ইনকিউবেটর।

যেভাবে শুরু

হাসপাতালে ইনকিউবেটর না থাকায় তাদের কয়েকজন আত্মীয়-স্বজনের নবজাতকের মৃত্যু হয়।

এরপর মাথায় আসে ইনকিউবেটর তৈরির চিন্তা। ২০১৭ সালের দিকে ইনকিউবেটর তৈরিতে হাত দেন তারা। চবির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এস এম আবু জাহেদ চৌধুরীর সহযোগিতায় ধাপে ধাপে কাজ এগিয়ে নেন জয়দীপ ও নাঈমুল।

২০১৮ সালের জুনের দিকে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মুনিরা খাতুনের সহযোগিতায় ইনকিউবেটর তৈরি করে ফেলেন তারা।

ইইই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এস এম আবু জাহেদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, চবিতে দুটি প্রতিযোগিতায় তাদের তৈরি করা এ ইনকিউবেটর সেরা সৃষ্টিকর্ম হিসেবে নির্বাচিত হয়।

অধ্যাপক ডা. মুনিরা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, মা ও শিশু হাসপাতালে দুটি পুরোনো ইনকিউবেটর ছিল। সেগুলো নিয়ে গিয়ে তারা গবেষণা করেছে। আমি পরামর্শ দিয়েছি। তারা অনেক পরিশ্রম করে ইনকিউবেটর তৈরি করতে পেরেছে। ইনকিউবেটরটি তারা আমার কাছে এনেছিল, সব ঠিক-ঠাক পেয়েছি। দেশের হাসপাতালগুলো চাইলে তাদের তৈরি করা ইনকিউবেটর ব্যবহার করতে পারবে।

তিনি বলেন, দেশে প্রতিবছর অনেক নবজাতক জন্মগ্রহণ করে। নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্ম নেওয়া নবজাতক পর্যবেক্ষণের জন্য ইনকিউবেটরে রাখতে হয়। কারণ এই অবস্থায় নবজাতকের শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা, চামড়ার আর্দ্রতা ধরে রাখার ক্ষমতা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম থাকে। তাই কৃত্রিম উপায়ে ইনকিউবেটরের মাধ্যমে নবজাতকের জন্য তাপ ও জলীয়বাষ্প নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ক্ষেত্রবিশেষে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হয়। আবার অনেক সময় নবজাতক জন্ডিসে আক্রান্ত হয়, তখন তাদেরকে আলাদাভাবে ব্লু-লাইট থেরাপি দিতে হয়।

তিনি আরও বলেন, উন্নত বিশ্বে যে ইনকিউবেটরগুলো ব্যবহার করা হয় সেগুলো শহরের বড় হাসপাতালগুলোতে থাকলেও উপজেলা এবং জেলা শহরের হাসপাতালে যোগান পর্যাপ্ত নেই। আবার বাইরের দেশ থেকে কিনে আনা এসব ইনকিউবেটর অনেক দামি এবং তার মধ্যে শিশুদের একদিন রাখতে গেলেও অভিভাবকদের অনেক টাকা গুনতে হয়, যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। তাদের এই আবিষ্কার দেশে যুগান্তকারী ইতিহাস সৃষ্টি করলো।

জয়দীপ কর ও এম এ নাঈমুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, তাদের তৈরি ইনকিউবেটর অল্প খরচে প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাসপাতালগুলোতে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে। এই ইনকিউবেটর খুব সহজেই পরিবহনযোগ্য এবং তাৎক্ষণিকভাবে যে কোনও জায়গায় সেটআপ করা সম্ভব। এটি এসি ও ডিসি দুই ধরনের পাওয়ার সোর্স থেকে পাওয়ার নিতে সক্ষম। সে কারণে যেসব অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ থাকে না যেমন গ্রামাঞ্চল, শরণার্থী শিবির, পাহাড়ি অঞ্চলে ইনকিউবেটরটি ব্যাটারি থেকে পাওয়ার নিতে সক্ষম।

তারা জানান, বর্তমানে ব্যবহৃত উন্নতমানের ইনকিউবেটরের সব সুযোগ সুবিধা তাদের উদ্ভাবিত ইনকিউবেটরে আছে। নবজাতককে তাপ সরবরাহ করার লক্ষ্যে দুই ধরনের হিটিং টেকনিক ব্যবহার করা হয়েছে। রেডিয়েশন এবং কন্ডাকশন- দুই প্রক্রিয়ায় নবজাতক তাপ নিতে পারবে। এছাড়া আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণের জন্যও রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। এই ইনকিউবেটরটির মধ্যে থাকা ডিসপ্লে দেখে একজন ডাক্তার বা নার্স খুব সহজেই এটি ব্যবহার এবং নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।

ইনকিউবেটরটিতে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে, যার জন্য আলাদা অক্সিজেন সিলিন্ডারের প্রয়োজন হবে না। তাদের আশা, এটি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে তৈরি করে বাজারজাত করা সম্ভব।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, উপজেলা পর্যায়ে কোনো ইনকিউবেটর নেই। তাদের এমন আবিষ্কার দেশে ইতিহাস সৃষ্টি করলো।

বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৯
জেইউ/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।