ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড

পদোন্নতি নিয়ে অভিযোগের ‘পাহাড়’

মিজানুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৯
পদোন্নতি নিয়ে অভিযোগের ‘পাহাড়’ ---

চট্টগ্রাম: কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। সেকশন অফিসার পদ শুন্য না থাকলেও অর্গানোগ্রামের বাইরে গিয়ে ৬ কর্মচারীকে সেকশন অফিসার, যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও ডাটা এন্ট্রি কন্ট্রোল অপারেটরকে সহকারী প্রোগ্রামার পদে পদোন্নতি নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

অনিয়মের মাধ্যমে দেওয়া এসব পদোন্নতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে খোদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ড. মো. মোকছেদ আলীর সই করা এক চিঠিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পূর্ব অনুমতি ছাড়া এসব পদোন্নতির যৌক্তিক কারণ উল্লেখ করে লিখিতভাবে জানাতে বোর্ড চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

অর্গানোগ্রামের বাইরে গিয়ে ‘পছন্দের লোকজনকে’ পদোন্নতি দেওয়া হলেও অর্গানোগ্রামে পদ নেই অযুহাতে স্থায়ী করা হচ্ছে না চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বোর্ডের কম্পিউটার কেন্দ্রে ডাটা এন্ট্রি কম্পিউটার অপারেটর পদে কাজ করা উৎপল কুমার বিশ্বাস এবং মহসিন পাটোয়ারীর চাকরি। তাদের স্থায়ী করতে দুই বছর আগে হাইকোর্ট রায় দিলেও মানা হচ্ছে না সেই রায়।

৬ কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের প্রশ্ন

গত বছরের ২৮ অক্টোবর এক অফিস আদেশে বোর্ডের উচ্চমান সহকারী মো. হাছান, জসিম উদ্দিন, আতিকুর রহমান, ইমাম হোসেন পাটোয়ারী, জামশেদুল আলম এবং কুতুব উদ্দিন হাছান নূরীকে কয়েকটি শর্তে সেকশন অফিসার পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। অর্গানোগ্রামে এসব পদ না থাকায় অস্থায়ী ভিত্তিতে পদ সৃজন করে তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়।

নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষাবোর্ডের অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে পদোন্নতি সংক্রান্ত অফিস আদেশও বোর্ড কমিটির সভায় অনুমোদন নিতে হয়। তাই প্রায় এক বছর আগে জারি হওয়া ৬ কর্মচারীর পদোন্নতি সংক্রান্ত আদেশ আগামীকাল শনিবার (২৬ অক্টোবর) সকালে অনুষ্ঠিতব্য বোর্ড কমিটির ৬০তম সভায় অনুমোদনের এজেন্ডাভুক্ত করা হয়েছে।

তবে বোর্ড কমিটির সভার মাত্র ৬ দিন আগে গত ২০ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ড. মো. মোকছেদ আলীর সই করা এক চিঠিতে মন্ত্রণালয়ের পূর্ব অনুমতি ছাড়া এসব পদোন্নতির যৌক্তিক কারণ উল্লেখ করে লিখিতভাবে জানাতে বোর্ড চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। বোর্ড প্রশ্ন তুলে মন্ত্রণালয়ের পূর্ব অনুমতি ছাড়া ৬ জনের পদোন্নতি অতি জরুরি ছিলো কী না?

যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি

গত ১০ জুলাই ডাটা এন্ট্রি কন্ট্রোল অপারেটর আবুল হাসনাত মো. রাজু আহমেদকে সহকারী প্রোগ্রামার পদে পদোন্নতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে বোর্ড। ডাটা এন্ট্রি কন্ট্রোল অপারেটরদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ১৫ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক করলেও ২০০৭ সালে বোর্ড কমিটির ৪৩তম সভায় নিয়োগের অনুমোদন পাওয়া এ কর্মকর্তার চাকরির অভিজ্ঞতা ১২ বছরের।

আবুল হাসনাত মো. রাজু আহমেদকে পদোন্নতি না দিতে বোর্ড সভার সদস্যদের অনুরোধ জানিয়ে গত ২৩ অক্টোবর একটি চিঠি দিয়েছেন শিক্ষাবোর্ডের ডাটা এন্ট্রি কম্পিউটার অপারেটর পদে দীর্ঘদিন অস্থায়ীভিত্তিতে কাজ করা উৎপল কুমার বিশ্বাস।

চিঠিতে তিনি অভিযোগ করেছেন, তাকে স্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হাইকোর্ট শিক্ষাবোর্ডকে নির্দেশ দিলেও ডাটা এন্ট্রি কম্পিউটার অপারেটর পদটি শিক্ষাবোর্ডের অর্নোগ্রামে নেই অযুহাতে বোর্ড তাকে নিয়োগ দিচ্ছে না।

উৎপল কুমার বিশ্বাস বাংলানিউজকে জানান, ১৯৯৬ সালে ঢাকাস্থ চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কম্পিউটার কেন্দ্রে আমি ও মহসিন পাটোয়ারী দৈনিক ভিত্ততে যোগদান করি। ২০০৬ সালে আমাদেরকে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০০৮ সালে প্রত্যেক শিক্ষাবোর্ডের জন্য আলাদা কম্পিউটার সেল গঠন করা হলে আমরা চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের বর্তমান কার্যালয়ে যোগদান করতে আসি।

তিনি বলেন, আমাদের স্থায়ী করতে ২০১০ সালের ২ নভেম্বর বোর্ড কমিটির ৫১তম সভার ১৫ নম্বর আলোচ্যসূচি অনুযায়ী কার্যকর পদক্ষেপ শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ গ্রহণ না করলে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করি। ২০১৫ সালে হাইকোর্ট আমাদের স্থায়ী করতে নির্দেশ দেন। তবে এ রায়ও বাস্তবায়ন করছে না বোর্ড।

‘হাইকোর্টের আদেশ বাস্তবায়িত হলে সহকারী প্রোগ্রামার পদে আমিই পদোন্নতি পেতাম। সব যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আমাকে এ পদে না নিয়ে অযোগ্য একজনকে পদোন্নতি দেওয়া হলো। এটি অন্যায়। তাই সহকারী প্রোগ্রামার পদে নিয়ম বর্হিভূত এ পদোন্নতি অনুমোদন না দিতে বোর্ড সদস্যদেরকে অনুরোধ জানিয়েছি। ’

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালে অনুমোদিত বোর্ডের প্রবিধিমালায় আমার পদটি বিদ্যমান থাকলেও বোর্ডের অর্নোগ্রামে নেই অযুহাতে আমাকে চাকরিতে স্থায়ী করা হচ্ছে না। অথচ অর্নোগ্রামে না থাকলেও পদ সৃজন করে অন্য কর্মচারীদের পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। এর কারণ কি? দুদক এবং মন্ত্রণালয়কে এসব খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি।

নাসিরের ‘নজিরবিহীন’ পদোন্নতি

গত বছরের ২৮ অক্টোবর শিক্ষাবোর্ডের স্টেনোটাইপিস্ট নাসির উদ্দীনকে জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী দশম গ্রেড দিয়ে স্টেনোগ্রাফার পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। পদবি অনুসারে নিয়ম অনুযায়ী তিনি ১১তম গ্রেডে বেতন পাওয়ার কথা থাকলেও তাকে নজিরবিহীনভাবে দশম গ্রেডে বেতন ভাতা দেওয়া হবে বলে ওই আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, ফলাফল জালিয়াতি, সহকর্মীকে মারধর, হত্যার হুমকি দেওয়াসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত এ কর্মচারীকে নজিরবিহীনভাবে পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষেত্রে অনৈতিক সুবিধা এবং মোটা অঙ্কের লেনদেন হয়েছে।

শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান যা বললেন

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর শাহেদা ইসলাম এসব অভিযোগের বিষয়ে বাংলানিউজকে জানান, ৬জনকে সেকশন অফিসার হিসেবে নিয়ম মেনেই পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় পদোন্নতিকে নিয়োগ ভেবে প্রশ্ন তুলেছিলো। আমরা এর উত্তর দিয়েছি।

তিনি বলেন, ডাটা এন্ট্রি কন্ট্রোল অপারেটর পদ থেকে সহকারী প্রোগ্রামার পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ১৫ বছরের যে অভিজ্ঞতার কথা বলা হচ্ছে এটা নতুন প্রজ্ঞাপনে। আমরা আগের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এ পদোন্নতি দিয়েছি।

নতুন প্রজ্ঞাপন জারির পর পুরনো প্রজ্ঞাপনের বৈধতা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জনপ্রশাসন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেই আমরা এটি করেছি।

‘চট্টগ্রামের শিক্ষাবোর্ডে কর্মরত সবাই আমার কাছে সমান। কাউকে খুশি রাখতে বা কাউকে বঞ্চিত করতে আমি কোনো কাজ করিনি। সব নিয়ম মেনেই পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। ’ বলেন চেয়ারম্যান প্রফেসর শাহেদা ইসলাম।

বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৯
এমআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।