এ বছর চট্টগ্রাম বোর্ডে পাসের হার ৮২ দশমিক ৯৩ শতাংশ। গত বছর পাসের হার ছিলো ৮১ দশমিক ৫২ শতাংশ।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ন চন্দ্র নাথ জানিয়েছেন, অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ, খাতা মূল্যায়নে আন্তরিক হওয়ার নির্দেশনা এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সংখ্যা বাড়ার কারণে জেএসসির ফলাফলে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড।
ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ বছর বোর্ডের অধীনে জেএসসি পরীক্ষার জন্য ১ হাজার ২৭৪টি বিদ্যালয়ের ২ লাখ ৮ হাজার ৯৬১ জন শিক্ষার্থী নিবন্ধন করে। তবে ২৩১টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় ২ লাখ ৫ হাজার ৮৭১ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৭৩৪ জন।
অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীর মধ্যে নিয়মিত শিক্ষার্থী ছিলো ১ লাখ ৭৮ হাজার ৩২৯ জন, অনিয়মিত ছিলো ২৭ হাজার ৫৩২ জন এবং মনোন্নয়ন দেওয়া শিক্ষার্থী ছিলো ১০ জন। যা গত ৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
নগর-জেলায় পাসের হারে বড় পার্থক্য
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত এবারের জেএসসি পরীক্ষায় বেশি পাস করেছে চট্টগ্রাম নগরের বিদ্যালয় থেকে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা। তাদের পাসের হার ৮৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। যা বোর্ডের গড় পাসের হারের চেয়ে ৪ দশমিক ৭০ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে সবচেয়ে কম পাস করেছে রাঙামাটি জেলার বিদ্যালয় থেকে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা। তাদের পাসের হার ৭৯ দশমিক ৫০ শতাংশ। যা বোর্ডের গড় পাসের হারের চেয়ে ৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং চট্টগ্রাম নগরের পাসের হারের চেয়ে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ কম।
বাকি জেলাগুলোর মধ্যে বান্দরবান জেলার বিদ্যালয় থেকে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের পাসের হার ৭৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ। যা বোর্ডের গড় পাসের হারের চেয়ে ৩ দশমিক ১৬ শতাংশ কম।
খাগড়াছড়ি জেলার বিদ্যালয় থেকে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের পাসের হার ৮০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। যা বোর্ডের গড় পাসের হারের চেয়ে ২ দশমিক ০৫ শতাংশ কম। চট্টগ্রাম জেলা থেকে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের পাসের হার ৮১ দশমিক ১৬ শতাংশ। যা বোর্ডের গড় পাসের হারের চেয়ে ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ কম।
তবে এক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম কক্সবাজার। এ জেলা থেকে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের পাসের হার ৮৪ দশমিক ১০ শতাংশ। চট্টগ্রাম নগরের পাসের হারের চেয়ে ৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ কম হলেও বোর্ডের গড় পাসের হারের চেয়ে ১ দশমিক ১৭ শতাংশ বেশি।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ন চন্দ্র নাথ জানান, সাধারণত নগরের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জেলার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা পান। ফলে জেলার চেয়ে নগরের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাসের হার এবং জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা বেশি থাকে।
তিনি জানান, রাঙামাটি, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ির পার্বত্য এলাকার অভিভাবকদের সচেতনতার অভাব রয়েছে। অনেকে দারিদ্রতার কারণে সন্তানদের পড়াশোনার সমস্ত সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে পারেন না। শিক্ষকদের সবাই প্রশিক্ষিত না। ফলে সেখানে পাসের হার কিছুটা কম থাকে।
এক বিষয়ে ফেল, তাই…
গত বছরের চেয়ে এবার পাসের হার বাড়লেও অন্য শিক্ষা বোর্ডগুলোর তুলনায় পিছিয়ে আছে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড। দেশের ৯টি শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে পাসের হারের দিক থেকে চট্টগ্রামের অবস্থান ৮ম।
বাংলা, ইংরেজি, গণিত, ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা, হিন্দু ও নৈতিক শিক্ষা, বৌদ্ধ ও নৈতিক শিক্ষা, ক্রিস্টান ও নৈতিক শিক্ষা, বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিসহ জেএসসির প্রতিটি বিষয়ে বিষয়ভিত্তিক পাসের হার ৯১ থেকে ১০০ শতাংশ। এর পরেও বোর্ডের গড় পাসের হার ৮২ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
এর কারণ হিসেবে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ন চন্দ্র নাথ জানান, সাধারণ গণিত, ইংরেজি বা বিজ্ঞানে শিক্ষার্থীরা খারাপ করে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে পুরো ফলে। তবে এবার নির্দিষ্ট একটি বিষয়ে ফেল করার চেয়ে আলাদা আলাদা বিষয়ে ফেল করার সংখ্যা বেশি। এ কারণে বিষয়ভিত্তিক পাসের হার ভালো হলেও গড় পাসের হার কম।
বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি জানান, শিক্ষার্থীরা শুধু গণিত বিষয়ে ফেল করলে গণিতে পাসের হার কমে যেতো। ইংরেজি বিষয়ে ফেল করলে ইংরেজিতে পাসের হার কমে যেতো। তবে এবার গণিত বা ইংরেজির মতো নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে ফেল না করে কেউ বাংলাতে ফেল করেছে। কেউ ইংরেজিতে ফেল করেছে। কেউ বিজ্ঞান বা অন্য বিষয়ে ফেল করেছে। ফলে বিষয়ভিত্তিক পাসের হার বাড়লেও সামগ্রিক পাসের হার কম।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৯
এমআর/টিসি