ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

মিশ্র বাণিজ্যিক জাহাজের বহর গড়তে চায় বিএসসি

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২০
মিশ্র বাণিজ্যিক জাহাজের বহর গড়তে চায় বিএসসি লোগো।

চট্টগ্রাম: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) সমুদ্রগামী মিশ্র বাণিজ্যিক জাহাজের বহর গড়ার লক্ষ্যে এগোচ্ছে। এক বছরের মধ্যে কয়লা পরিবহনের জন্য ২টি ৮০ হাজার টনের মাদার বাল্ক ক্যারিয়ার, ক্রুড অয়েলের জন্য ২টি এক-সোয়া লাখ টনের মাদার ট্যাংকার ও ডিজেল-জেট ফুয়েলের জন্য মাদার প্রডাক্ট অয়েল ট্যাংকার কেনার লক্ষ্যে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) করার লক্ষ্যে কাজ করছে।

সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বিএসসির বহরে ৪৪টি জাহাজ তালিকাভুক্ত হয়েছে। আশির দশকে একসঙ্গে ২৮টি জাহাজ ছিল।

বর্তমানে আছে মাত্র ৮টি। এর মধ্যে ২০১৮ সালে চীনে তৈরি ৩৯ হাজার ডিডব্লিউটির নতুন ৬টি জাহাজ বিএসসির বহরে প্রাণ সঞ্চার করেছে। এমভি বাংলার জয়যাত্রা, সমৃদ্ধি, অর্জন, এমটি অগ্রযাত্রা, অগ্রদূত ও অগ্রগতি নামের আধুনিক জাহাজগুলো বিশ্বের বিভিন্ন বন্দরে পণ্য ও লাল-সবুজের বাংলাদেশের সুনাম ফেরি করছে।

বাকি দুইটি অয়েল ট্যাংকার ১৪ হাজার ৫৪১ ডিডব্লিউটির বাংলার জ্যোতি ও সৌরভ ১৯৮৭ সালে ডেনমার্কে তৈরি হয়েছিল। এগুলো চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর থেকে পতেঙ্গা রিভারমুরিং জেটিতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) জ্বালানি তেল লাইটারিং করছে। পুরনো জাহাজ মেরামত, ডকিং চার্জ, বেশি জ্বালানি ব্যবহার ইত্যাদির কারণে এ দুইটি জাহাজ ইস্টার্ন রিফাইনারির জন্য বাস্তবায়নাধীন সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপ লাইন প্রকল্প অপারেশনে না যাওয়া পর্যন্ত সচল রাখতে চায় বিএসসি কর্তৃপক্ষ।

বিএসসির পরিচালক (প্রযুক্তি) প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউসুফ বাংলানিউজকে জানান, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সরকারের প্রচেষ্টায় বিএসসি অত্যন্ত সফলভাবে নতুন ৬টি সমুদ্রগামী জাহাজ বহরে যুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় আরও ৬টি বড় জাহাজ সংগ্রহের লক্ষ্যে কাজ করছে। এর বাইরে বিএসসির মিশ্র বাণিজ্যিক জাহাজের বহর গড়ার লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে আরও অনেক জাহাজ সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে।  

সূত্র জানায়, অগ্রাধিকার ৬টি জাহাজের মধ্যে রামপাল, পায়রা ও মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আমদানি করা কয়লা পরিবহনের জন্য ৮০ হাজার টনের ২টি মাদার বাল্ক ক্যারিয়ার কিনবে বিএসসি। ইস্টার্ন রিফাইনারির ক্ষমতা আগামীতে দ্বিগুণ হবে। সব ক্রুড অয়েল বিএসসির নিজস্ব জাহাজে পরিবহনের লক্ষ্যে ১ লাখ ও ১ লাখ ২৫ হাজার টনের দুইটি মাদার ট্যাংকার কেনার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিপিসি বছরে ৩০ লাখ টন ডিজেল ও সাড়ে ৩ লাখ টন জেট ফুয়েল আমদানি করে, যা বিদেশি জাহাজে আনা হয়। এসপিএম প্রকল্প অপারেশনে গেলে লাইটারিংয়ের প্রয়োজন হবে না। তাই ডিজেল ও জেট ফুয়েল বিদেশ থেকে দেশে আনার জন্য ৮০ হাজার টনের ২টি মাদার প্রোডাক্ট অয়েল ট্যাংকার কিনতে চায় বিএসসি। এসব জাহাজ বহরে যুক্ত হলে কয়লা ও জ্বালানি তেল আমদানির পরিবহন খাতে বৈদেশিক মুদ্রা যেমন সাশ্রয় হবে তেমনি নিরবচ্ছিন্ন সাপ্লাই চেন নিশ্চিত হবে।

বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর সুমন মাহমুদ সাব্বির বাংলানিউজকে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পৃষ্ঠপোষকতা, নৌ প্রতিমন্ত্রী, সচিব ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের দিকনির্দেশনা ও সক্রিয় সহযোগিতায় বিএসসি সামনের দিকে এগোচ্ছে। ইতিমধ্যে সরকারের উন্নয়ন সহযোগীর ও ব্লু ইকোনমি ধারণা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক শিপিং সংস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে মিশ্র বাণিজ্যিক জাহাজ বহর সৃষ্টিসহ নানা উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বিএসসি শুধু প্রফিট করছে না একই সঙ্গে জাতীয় স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি নারী ক্যাডেটদের ইন্টার্নশিপ ও চাকরির সুযোগ দিচ্ছে। মেরিটাইম ওয়ার্ল্ডে সুনাম অর্জনসহ দেশে এ খাতে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করছে।  

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) ২০১৯-২০ অর্থবছরে কর সমন্বয়ের পর নিট মুনাফা করেছে ৪১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। যা গত বছরের চেয়ে প্রায় ২৪ কোটি টাকা বেশি।

বিএসসির পরিচালনা আয় হয়েছে ২৭৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা, অন্যান্য খাত থেকে আয় হয়েছে ৪২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। মোট আয় ৩২২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। মোট ব্যয় হয়েছে ২৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে পরিচালনা ব্যয় হয়েছে ১৭৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, প্রশাসনিক ও আর্থিক খাতের ব্যয় ৬৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট আয় ছিল ২২২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, ব্যয় ১৮৫ কোটি ১০ লাখ টাকা। নিট মুনাফা ছিল ১৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

২০২০ সালের ৩০ জুন বিএসসির পরিশোধিত মূলধন দাঁড়িয়েছে ১৫২  কোটি ৫৩ লাখ ৫০ হাজার ৪০০ টাকা।  সরকারের শেয়ার ৫২ দশমিক ১০ শতাংশ। সাধারণ বিনিয়োগকারীর শেয়ার ৪৭ দশমিক ৯০ শতাংশ, এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার হোল্ডারদের ১৩ দশমিক ০৯ শতাংশ।  

বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২০
এআর/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।