চট্টগ্রাম: সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পাশ ঘেঁষে ছোট একটি খোলা জায়গা। ওপরে ত্রিপলের ছাউনি।
সেখানে একপাশে বসানো হয়েছে করোনার বুথ। পাশাপাশি দুটি টেবিলে রাখা হয়েছে করোনার নমুনা নেওয়ার বিভিন্ন উপকরণ। একজন বিদেশগামী যাত্রীর নাম ডাকছেন, আরেকজন নাক ও গলার ভেতর থেকে লালা সংগ্রহ করছেন। এরপর আরেকজন নমুনা সংরক্ষণ করছেন।
ভিড়ের মধ্যে খোলা জায়গায় নমুনা নেওয়া হচ্ছে এভাবেই। নমুনা সংরক্ষণের কৌটার পাশে রাখা জীবাণুনাশক স্প্রে দিয়ে মাঝে-মধ্যে হাত পরিষ্কার করছেন দায়িত্বরত কর্মচারীরা। নমুনা সংগ্রহ থেকে সংরক্ষণ পর্যন্ত সময় লাগছে প্রায় ২ মিনিট।
রোববার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অবস্থান করে করোনার নমুনা সংগ্রহের এই প্রক্রিয়া দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উপচে পড়া ভিড়ের মধ্যে করোনার নমুনা সংরক্ষণের এই প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ। এতে করোনা পরীক্ষার ফলাফলও সঠিভভাবে নির্ণয় করা কঠিন হবে। ভিড়ের কারণে সুস্থ ব্যক্তিও সংক্রমিত হবেন। পাশাপাশি নমুনা সংরক্ষণের কৌটায় জীবাণুনাশক স্প্রের কণা পড়লে সঠিক ফলাফল আসবে না।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আব্দুর রব মাসুম বাংলানিউজকে বলেন, করোনার নমুনা সংগ্রহের কৌটা খোলা থাকা অবস্থায় পাশে জীবাণুনাশক স্প্রে করলে জীবাণু মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে ভাইরাস মরে গেলেও আরটিপিসিআর টেস্টে সঠিক রিপোর্ট আসবে। তারপরও সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
বিদেশগামী যাত্রীর জন্য একটি বুথে একজনকেই নমুনা সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেলেও বিষয়টি অস্বীকার করেন সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, একসঙ্গে চারজন নমুনা নিচ্ছেন। রোববার (২৭ ডিসেম্বর) বিদেশগামী যাত্রী বেশি ছিলো। এছাড়া আমাদের লোকবল সংকট রয়েছে।
তিনি বলেন, সংক্রমণ এড়াতে খোলা জায়গায় স্যাম্পল নেওয়াই উত্তম। তাই কার্যালয়ের বাইরে বিদেশগামী যাত্রীদের কাছ থেকে নমুনা নেওয়া হচ্ছে।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, বিদেশ যাত্রার আগে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যাত্রীকে করোনা পরীক্ষার সনদ সংগ্রহ করতে হচ্ছে। নমুনা দেওয়ার আগে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে টিকিট, ভিসা এবং পাসপোর্ট দেখিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। নগরের পাশাপাশি চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিদেশ যাত্রীরা এসে এখানে ভিড় করেন। লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে তাদের নমুনা দিতে হয়।
চট্টগ্রামে বিদেশগামী যাত্রীদের করোনার নমুনা পরীক্ষায় অব্যবস্থাপনা রোধ ও উচ্চহারে ফি আদায় প্রত্যাহরের দাবি জানিয়েছে কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম।
এক বিবৃতিতে ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, চট্টগ্রামে প্রায় ১৫ লাখ প্রবাসী রয়েছেন। তাদের বেশির ভাগ মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে কর্মরত। করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার আগে এবং পরে প্রায় এক লাখ প্রবাসী দেশে এসেছেন। বিদেশগামী যাত্রীদের অধিকাংশ প্রবাসী শ্রমিক ও রেমিটেন্স যোদ্ধা। বছরের পর বছর ধরে বিদেশে কাজ করে তারা টাকা পাঠিয়ে দেশের রিজার্ভ ও অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন। কাজে ফিরতে এখন তাদের করোনা নেগেটিভ সনদের জন্য তাদের কাছ থেকে উচ্চহারে ফি আদায় অনাকাঙ্ক্ষিত ও অমানবিক।
এদিকে বিদেশগামীদের করোনার নমুনা পরীক্ষায় ভোগান্তি কমাতে বেসরকারি শেভরণ ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে শেভরণকে বিদেশগামীদের নমুনা পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও বেসরকারি ল্যাবকে অনুমতি দেওয়া হবে। এতে ভোগান্তি কমবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২০
জেইউ/এসি/টিসি