চট্টগ্রাম: কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল। রাজনীতি, কক্সবাজারের উন্নয়ন এবং সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন বাংলানিউজের সঙ্গে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর কক্সবাজার দীর্ঘ বছর অবহেলিত ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কক্সবাজার এসে সমুদ্রের পাড়ে ঝাউবন লাগিয়েছেন।
সংসদ সদস্য কমল বলেন, পরিবেশ ও প্রকৃতিগতভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা কক্সবাজার। ২০০৮ সালের পর আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই ব্যাপক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয় কক্সবাজার ঘিরে। ১৯৯৮ সালে পেয়েছি রেডিও স্টেশন। ২০১৮ সালে আমরা পেয়েছি কক্সবাজার মেডি্ক্যাল কলেজ এবং আড়াইশ’ শয্যার কক্সবাজার হাসপাতাল। ১৮ হাজার কোটি টাকায় নির্মিত হচ্ছে রেললাইন, যা ২০২২ সালে উদ্বোধন হবে বলে আশা করছি। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এখন স্বপ্ন নয়, বাস্তব। শুধু রানওয়ে আরেকটু প্রশস্ত করলে আন্তর্জাতিক সকল ফ্লাইট উঠানামা করতে পারবে। রাতে যাতে বিমান ওঠানামা করতে পারে সে ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।
ব্যাপক উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবকিছু মিলিয়ে কক্সবাজার এখন আগের মতো নেই। আরও পরিপাটি এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। কক্সবাজার শহরের রাস্তাগুলো প্রশস্তকরণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। বাঁকখালি থেকে শহর পর্যন্ত যে সড়ক রয়েছে তা চারলেনে উন্নীত করা হয়েছে। রামুর ভিতর মরিচ্যা সড়কও চারলেনে তৈরি করা হয়েছে। কক্সবাজারে সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিলো বন্যা। বাঁকখালী নদীতে একসময় চাল ছুঁইছুঁই পানি থাকতো। এখন ড্রেজিং করার কারণে গত ৪ বছর ধরে বন্যা থেকে রক্ষা পেয়েছে জনগণ। ২০০৮ সালের আগে কক্সবাজারের মাত্র ৩০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পেতো। এখন শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। অনেক বছর পর ঈদগাঁও থানা স্থাপন করা হয়েছে। এখন শুধু বাকি রয়েছে উপজেলায় উন্নীতকরণ এবং পৌরসভায় রূপান্তর করা। তাহলে প্রান্তিক মানুষেরা সুযোগ-সুবিধা ঘরে বসেই ভোগ করতে পারবেন।
তিনি বলেন, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ হচ্ছে। যদি চকরিয়া থেকে ২৮ কিলোমিটার পথ প্রস্তুত করা যায় তাহলে সারা বাংলাদেশের সঙ্গে কক্সবাজারের দূরত্ব প্রায় দুই ঘণ্টা কমে আসবে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটন শিল্পের আরও বিকাশ ঘটবে।
কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের আরও বিকাশের কথা উল্লেখ করে সংসদ সদস্য কমল বলেন, কক্সবাজারের আরেক অপরূপ সৌন্দর্যের স্থান পাহাড়। ওইসব পাহাড়গুলোতে যদি আমরা ইকো ট্যুরিজমের ব্যবস্থা করতে পারি তাহলে পর্যটন শিল্পের আরও উন্নয়ন করা সম্ভব হবে।
কৃষিক্ষেত্রে অপার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বছর কক্সবাজারের লবণ চাষিরা ন্যায্যমূল্য পায়নি। দেশের বাইরে থেকে লবণ আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা থাকলে দেশের বাজারে লবণ বিক্রির সুযোগ পাবে কৃষকরা। এজন্য লবণ বোর্ড গঠন করা খুবই প্রয়োজন।
কক্সবাজারে শিক্ষার উন্নয়নে তিনি প্রস্তাব করেন, কক্সবাজারে একটি শিক্ষা শহর করা জরুরি। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার ১৯টি হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করেছে। বাংলাদেশের যে সকল বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদেরকে অনুরোধ করবো- কক্সবাজারে একটি বহিঃক্যাম্পাস স্থাপন করুন। স্বাস্থ্যকর স্থানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে ছাত্রদের স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে। এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের ওশানোগ্রাফি ও মেরিন সায়েন্স বিষয়ক যেসব বিভাগ রয়েছে তার একটি শাখা কক্সবাজারে স্থাপন করলে গবেষণার দ্বার আরও উন্মোচন হবে। বর্তমান সময়ে ব্লু-ইকোনমির গুরুত্ব অপরিসীম। ব্লু ইকোনমি নিয়ে গবেষণা করে সমুদ্রের অপার সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা সম্ভব।
মাদক নির্মূলে জিরো টলারেন্স এর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাদক নির্মূলে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। স্থানীয় সকল নেতাকর্মীদের বলা হয়েছে, মাদক গ্রহণ এবং ব্যবস্থাপনার সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২১
এমএম/এসি/টিসি