ঢাকা, রবিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

লোক দেখানো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে তৎপর হতে পারে মিয়ানমার সেনাবাহিনী

জমির উদ্দিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২১
লোক দেখানো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে তৎপর হতে পারে মিয়ানমার সেনাবাহিনী মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম ও অধ্যাপক রাহমান নাসির উদ্দিন।

চট্টগ্রাম: মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানে সবচেয়ে উদ্বিগ্ন এখন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। সামরিক সরকারের কারণে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা তাদের।

তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা মুছতে চাইবেন তারা। এজন্য যত দ্রুত সম্ভব ‘লোক দেখানো’ রোহিঙ্গা ফেরাতে কাজ শুরু করবেন তারা।
 

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সামরিক শাসন আসার ফলে তারা এখন পশ্চিমাদের চাপে পড়বে। সেই চাপটা কমানোর জন্য, তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে চাইবেন। এজন্য প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখবেন তারা।  

তিনি বলেন, সম্পর্ক বজায় রাখতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করতে চাইবে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। সেক্ষেত্রে তাদের পাশে দাঁড়াবে চীন। ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে গত ২৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ-চীন-মিয়ানমার মিলে বৈঠক করেছে। তাই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা দেখছি।

এমদাদুল ইসলাম বলেন, কূটনৈতিক দক্ষতার মাধ্যমে আমরা যদি সেই সুযোগগুলো কাজে লাগাই তাহলে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে একটি সুযোগ সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়িয়ে রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের পথ খুলতে পারে।  

বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জ দেওয়ার শক্তি নেই 

মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী ক্ষমতায় আসার ফলে বাংলাদেশের জন্য কোনো হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে কী-না? এমন প্রশ্নে এমদাদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের জন্য মিয়ানমার সামরিক বাহিনী হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে না। কারণ তাদের সেই শক্তি বা অবস্থান নেই। তারা সেনা অভ্যুত্থান করে এমনিতে পশ্চিমাদের চাপের মুখে। সেক্ষেত্রে নতুন করে প্ররোচনা বা ঝামেলা সৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই।  

আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বিচার আরও জোরদার হতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলার বিচার আরও জোরদার হতে পারে। কারণ গণহত্যায় অভিযোগ ছিল দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। এতদিন তারা দেশটির সরকারের পেছনে অবস্থান নেওয়ার সুযোগ পেতো। কিন্তু এখন সেই সুযোগ নেই।

মিয়ানমারের স্পর্শকাতর বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে না

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রাহমান নাসির উদ্দিন বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের তিনটি চুক্তি হয়েছে-একটি হচ্ছে ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর প্রত্যাবাসন চুক্তি, ওই বছরের ১৯ ডিসেম্বর টাস্কফোর্স গঠন ও ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট চুক্তি। এসব চুক্তি হয়েছে রাষ্ট্রের সঙ্গে, তাই সামরিক সরকার চুক্তি মানতে বাধ্য। এছাড়া চুক্তি করার সময় সেনাবাহিনী রাজি ছিলো। সেনাবাহিনীর সমর্থন ছাড়া মিয়ানমার সরকার চুক্তি করতো না।  

তিনি বলেন, মিয়ানমারে সামরিক শাসন আসার পর প্রত্যাবাসন বন্ধ হবে না, তবে একটু মন্থর হবে। কিছুদিন মন্থর থেকে, আগের মতো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা এগিয়ে যাবে।

রাহমান নাসির বলেন, সামরিক শাসন আসার পর বাংলাদেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে না। কারণ ১৯৬২ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল এবং ১৯৮৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্তও মিয়ানমারে সামরিক শাসন ছিলো। ২০০৮ সালে সংবিধান সংশোধন করে (সংসদে ২৫ শতাংশ সামরিক সদস্য) তাও সামরিক সরকার জেঁকে বসে।

তিনি বলেন, ১৯৬২ সাল থেকে সেনাবাহিনী সরকারে আছে। নতুন আসছে তা নয়। সুতরাং আগে যেহেতু বাংলাদেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়নি, ভবিষ্যতেও হবে না। ১৯৭৮ সালে আড়াই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে, ২০১৭ সালে সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা আসে। আগেও রোহিঙ্গা ইস্যু ছিলো, এখনও আছে। তাই রোহিঙ্গাদের জন্য মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে না।

‘বাংলাদেশ সরকারের জন্য পরামর্শ থাকবে, তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যাতে মন্তব্য না করে। সুসম্পর্ক রেখে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে সরকারের জন্য সবচেয়ে ভালো মাধ্যম’ যোগ করেন রাহমান নাসির।

২০১১ সালে ৪৯ বছরের সেনাশাসন থেকে মুক্ত হয় মিয়ানমার। গত বছরের নভেম্বরে মিয়ানমারে দ্বিতীয় দফা গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এনএলডি এতে ৮০ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়। তবে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তাদের দাবি, তাদের কাছে এক কোটিরও বেশি কারচুপির ঘটনার প্রমাণ রয়েছে। মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল আগে থেকেই। সু চি তাই অভ্যুত্থানের আগেই চিঠি লিখে রেখেছেন। আটকের আগে সু চির লেখা একটি চিঠি তার দলের চেয়ারপারসন ফেসবুকে পোস্ট করেন। তাতে অভ্যুত্থান মেনে না নিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।  

নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী সু চি মিয়ানমারে বেশ জনপ্রিয়। তবে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযানের প্রতিবাদ না করায় আন্তর্জাতিক মহলে তিনি সমালোচিত হন। সেনা অভিযানে নির্যাতনের কারণে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। জাতিসংঘের তদন্তকারী দল সেনা অভিযানে গণহত্যার অভিযোগ তুলেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২১
জেইউ/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।