ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ছোলার কেজি খুচরায় ৭০-৮০ টাকা, আসছে রমজান 

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২১
ছোলার কেজি খুচরায় ৭০-৮০ টাকা, আসছে রমজান  ছোলা এখনই খুচরায় বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৭০-৮০ টাকা।

চট্টগ্রাম: রমজান শুরু হতে বাকি আছে দেড় মাস। ইফতারে জনপ্রিয় উপকরণ ছোলা এখনই খুচরায় বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৭০-৮০ টাকা।

ওভার ইমপোর্ট হলে দাম পড়ে যাবে, সাপ্লাই চেন নিরবচ্ছিন্ন না হলে দাম বাড়বে। এ অবস্থায় লাভ-লোকসান নিয়ে আমদানিকারক, পাইকার, খুচরা বিক্রেতা সবার মনেই জাগছে শঙ্কা, উদ্বেগ।
 

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের তথ্য অনুযায়ী গত ডিসেম্বর থেকে রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত ছোলা আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ৩৩৯ টন। এসব ছোলার অ্যাসেট ভ্যালু ৪৮৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকার বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছে অস্ট্রেলিয়া থেকে, ১ লাখ ৭ হাজার ৪৬ টন। অন্যদিকে রোববার পর্যন্ত আগের দুই বছরে ১৬ দেশ থেকে ছোলা আমদানি হয়েছে ৫ লাখ ৩৩ হাজার ৫২২ টন। এর বাইরে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে কিছু উন্নত মানের ছোলা আমদানি হয় প্রতিবছর।   

কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. ফখরুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, গম, ছোলা ইত্যাদি কিছু অত্যাবশ্যকীয় ভোগ্যপণ্য আমদানিতে কোনো ধরনের শুল্ক দিতে হয় না। নিরবচ্ছিন্ন সাপ্লাই চেন ঠিক রাখার স্বার্থে এসব পণ্য আমদানির বিপরীতে উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বিল অব এন্ট্রি দাখিলের সঙ্গে সঙ্গে ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।  

সহকারী কমিশনার মো. জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, দুইটি এইচএস কোডে ছোলা আমদানি হয় বাংলাদেশে। এর মধ্যে একটি এইচএস কোডে বাল্ক জাহাজে, কনটেইনারে কিংবা বস্তায় ভরে ছোলা আমদানি হয় বেশি। এক্ষেত্রে শুল্ককর দিতে হয় না আমদানিকারককে। যদি আড়াই কেজি পর্যন্ত প্যাকেটজাত ছোলা আমদানি করা হয় তাহলে ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৫ শতাংশ করে এআইটি ও এটি মিলিয়ে ২৫ শতাংশ শুল্ককর দিতে হয়। সাধারণত বেশিরভাগ ছোলা আমদানি হয় খোলা।  

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, ছোলাসহ রমজানের অত্যাবশ্যকীয় পণ্যগুলো বন্দর থেকে দ্রুত খালাস দেওয়ার ক্ষেত্রে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে আমদানিকারকদের।     

সরেজমিন কাজীর দেউড়ি, মোমিন রোডসহ বিভিন্ন খুচরা দোকানে দেখা গেছে, প্রতিকেজি অস্ট্রেলিয়ান ছোলা ৭০-৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। পাকিস্তানি কাবলি ছোলা (সাদা) বিক্রি হচ্ছে কেজি ২০০ টাকা।  দেশের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে মানভেদে প্রতি মণ ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১৮৫০ থেকে ২২০০ টাকা পর্যন্ত।

চট্টগ্রামের শীর্ষ ছোলা আমদানিকারক বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর সভায় বলেন, দেশে ছোলার চাহিদা বছরে ২ লাখ থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টন। রমজান ও তার আগের মাসে ছোলা লাগে প্রায় ৮০ হাজার টন। ৯৯ ভাগ ছোলার চাহিদাই পূরণ করতে হয় অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানির মাধ্যমে। মাত্র ৫-৬ হাজার টন ছোল আসে মিয়ানমার থেকে। ইন্স্যুরেন্স, জাহাজ ভাড়া, লাইটারিং, বন্দরের চার্জ, গাড়িভাড়া, গুদামভাড়া আনুষঙ্গিক খরচ হিসাব করলে সীমিত লাভ হয় আমদানিকারকের। অনেক সময় লোকসানও দিতে হয়।  

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ছোলা নিয়ে আমাদের জাহাজ এসেছে বন্দরে। আরও বেশ কয়েকটি বড় শিল্পগ্রুপের জাহাজও ভিড়ছে। আশাকরি সব আমদানিকারকের পাইপলাইনে থাকা ছোলা সঠিক সময়ে পৌঁছালে সংকট হবে না। বাজারও স্থিতিশীল থাকবে।

চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি সোলায়মান বাদশা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ৪০ কনটেইনার ছোলা আমদানির জন্য এলসি ওপেন করেছি। দুই মাস আগে টন প্রতি ছিল ৫৮০ ডলার, এখন তা বেড়ে ৬৩০ ডলারে ঠেকেছে। কিন্তু খাতুনগঞ্জের বাজারে ছোলার দাম নিম্নমুখী।  

কাজীর দেউড়ির একজন খুচরা বিক্রেতা বাংলানিউজকে জানান, প্রতিবছর শবেবরাতের আগে থেকে ছোলার পাইকারি বাজারে ভিড় করেন খুচরা বিক্রেতা ও মুদি দোকানিরা। খুচরা ক্রেতারাও এ সময় থেকে ছোলাসহ রমজানের বাজার করা শুরু করেন। এ সময় মার্কেটে অস্বাভাবিক একটা চাপ পড়ে।  

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়কারী কামরুন্নাহার শম্পা বাংলানিউজকে বলেন, উন্নত দেশে বিশেষ দিনকে ঘিরে ছাড়ের উৎসব চলে। আমাদের দেশে উল্টো চিত্র। রমজানের শুরুতে আমরা দেখি, সবাই এক মাসের পুরো বাজার করে ফেলেন। অনেকে আত্মীয় স্বজনদের উপহারের জন্যও ভোগ্যপণ্য কিনে নেন। এর ফলে বাজারে অস্বাভাবিক চাপ বাড়ে। সাপ্লাই চেনে বিঘ্ন ঘটে। এক্ষেত্রে ভোক্তাদের সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি সরকারের উচিত বাজার মনিটরিং ও টিসিবির কার্যক্রম জোরদার করা।  

বাংলাদেশ সময়: ১১২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২১
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।