চট্টগ্রাম: ‘বিধাতায় বিশ্বাসী হই নতুন দিনের আশায়, দরিদ্রদের সেবা করি গভীর ভালোবাসায়’ এ মূল সুরের আলোকে চট্টগ্রামে হয়ে গেল ব্যাতিক্রমী আলোচনা। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মের চারজন বক্তা এক মঞ্চে বসে, আলোচনা করে সম্প্রীতির বার্তা ছড়ালেন।
কারিতাসের ত্যাগ ও সেবা অভিযান ২০২১ উপলক্ষে রোববার (১৪ মার্চ) কারিতাস চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
বক্তারা বলেন, সব ধর্মই মানুষের সেবার কথা বলে, মানবতার অমিয় বাণী প্রচার করে।
যিনি যত বেশি প্রতিবেশী ও দরিদ্রদের ভালোবাসাপূর্ণ সেবা দিতে পেরেছেন এবং আত্মত্যাগী হয়েছেন তিনিই যুগে যুগে মহান হয়েছেন। সৃষ্টিকর্তার ভালোবাসা লাভের অন্যতম উপায় হলো দরিদ্র প্রতিবেশীর বিশ্বাস ও ভালোবাসা অর্জন করা। পৃথিবীতে আমরা যেভাবেই বা যে পরিবারেই জন্মগ্রহণ করি না কেন সবাই আমরা ভাইবোন। খাঁটি ও মুক্তমনের মানুষ কখনো সাম্প্রদায়িক বা ধর্মান্ধ হতে পারে না।
শুরুতে মূল সুরের তাৎপর্যের আলোকে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কারিতাস চট্টগ্রাম অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক রিমি সুবাস দাশ। প্রধান অতিথি পাথরঘাটার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন আর্চডায়োসিসের প্রশাসক ফাদার লেনার্ড সি রিবেরু। অতিথি ছিলেন ইলমার প্রধান নির্বাহী পরিচালক জেসমিন সুলতানা পারু, উন্নয়ন সংস্থা মমতার প্রধান নির্বাহী ও কারিতাস চট্টগ্রাম অঞ্চলের আরপিইসি সদস্য রফিক আহমদ, মি. লিটন গোমেজ, এসডিজি ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি নোমান উল্লাহ বাহার, কারিতাস চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন প্রকল্পের কর্মীরা।
আলোচনা করেন চট্টগ্রামের ক্যাথিড্রাল প্যারিস ফাদার পিন্টু কস্তা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নুর হোসাইন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনবোধি ভিক্ষু, ধর্মতত্ত্ববিদ অধ্যাপক স্বদেশ চক্রবর্তী।
তারা স্বার্থপরতা ত্যাগ করে কীভাবে দয়া ও শান্তির সমাজ গড়া যায় এ বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করে নিজ নিজ ধর্মের মর্মবাণীগুলো তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে কারিতাসে কর্মী হিসেবে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত কর্মরত ৩৩ জনকে লং সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন অতিথিরা।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা ও দারিদ্র্য নির্মূলে একে-অপরের প্রতি সহযোগিতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। সমাজে একদিকে দারিদ্র্য অন্য দিকে ভোগ-বিলাস যার মূলে রয়েছে স্বার্থপরতা। কিন্তু আমরা যদি প্রতিবেশীর প্রতি দয়াবান হই তাহলে এ পৃথিবীতে অভাব বলতে কিছুই থাকবে না।
কারিতাস বাংলাদেশের ৯০টি প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম হলো ‘ত্যাগ ও সেবা অভিযান’। আমার প্রতিবেশীর জন্য আমি ক্ষুদ্রতম যা কিছু করি, তা সৃষ্টিকর্তার জন্য করি- এমন মূলমন্ত্রের ওপর ত্যাগ ও সেবা অভিযান প্রকল্পটি প্রতিষ্ঠিত। অসহায় ও দরিদ্র মানুষের সেবা কাজে দেশের সাধারণ জনগণকে অংশগ্রহণে অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে গত ১ মার্চ শুরু হওয়া তিন মাসব্যাপী এ কার্যক্রম চলবে আগামী ৩১ মে পর্যন্ত। কারিতাস কর্মীদের বেতনের অংশ এবং বিভিন্ন দানশীল ব্যক্তিদের কাছ থেকে সংগৃহীত অর্থ দ্বারা সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত এ প্রকল্পটি শুরু হয় ১৯৮০ সালে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে সংগৃহীত অনুদানের অর্থ প্রতিবছর দুস্থ ও পীড়িত মানুষের সেবায় ব্যয় করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২১
এআর/টিসি