ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

পটিয়ায় টিকা কেলেঙ্কারি: স্বাস্থ্যকর্মীর ভূমিকায় হুইপের ভাই মহব্বত 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০২১
পটিয়ায় টিকা কেলেঙ্কারি: স্বাস্থ্যকর্মীর ভূমিকায় হুইপের ভাই মহব্বত  ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম: রীতিমতো ব্যানার সাঁটিয়ে পটিয়ার শোভনদন্ডী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ব্যবস্থাপনায় দেওয়া হয়েছে করোনার টিকা। এ ঘটনায় হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এমপি নিজের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করলেও রেখে গেছেন মিথ্যাচারের প্রমাণ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এমপি এলাকার জনগণকে করোনার টিকা দেওয়ার জন্য ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করার পর তার নির্দেশনায় ৩০ জুলাই সকাল ৯টা থেকে ১টা পর্যন্ত ১, ২, ৩ নম্বর ওয়ার্ড রশিদাবাদ আরফা করিম উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং ৩১ জুলাই সকাল ৯টা থেকে ১টা পর্যন্ত ৪, ৫, ৬ নম্বর ওয়ার্ড ও ৭, ৮, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জনগণের জন্য মহাজন হাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ আয়োজন করা হয়।  

শোভনদন্ডী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে টিকা প্রদানের জন্য প্রচারণা চালিয়ে এই সময় ও তারিখে ইউনিয়নবাসীকে (৩০ বছরের ঊর্ধ্বে) আইডি কার্ড সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্রে আসার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।

এর প্রেক্ষিতে রশিদাবাদ আরফা করিম উচ্চ বিদ্যালয়ে জড়ো হয় টিকা গ্রহীতারা।  

টিকাদানের ঘটনায় অভিযুক্ত মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) রবিউল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, স্থানীয় হুইপ, চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যরা এ বিষয়ে অবগত ছিলেন। টিকা দেওয়ার বিষয়টি আমি সবাইকে জানিয়েছি। হুইপ মহোদয় এ বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন।  

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. সব্যসাচী নাথ বাংলানিউজকে বলেন, টিকা দেওয়ার বিষয়ে সরকারি কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। ঘটনাটি জানার পর আসলেই টিকাদান করা হচ্ছে কিনা- তা যাচাই করতে সেখানে গিয়ে সত্যতা পেয়েছি।

এদিকে সরকার গ্রামাঞ্চলে ৭ আগস্ট থেকে করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরুর ঘোষণা দেওয়ার পর তার আগেই পটিয়ায় টিকাদান নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। হুইপ সামশুল হক চৌধুরী নিজেকে বাঁচাতে সব দায় রবিউল হোসেনের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন। অথচ সম্মতি পাওয়ার পর ব্যানারে ছাপানো হয়েছে তার ছবিও।

প্রত্যক্ষদর্শীর ধারণকৃত স্থিরচিত্রে দেখা যায়, রশিদাবাদ আরফা করিম উচ্চ বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যকর্মীর ভূমিকায় সিরিঞ্জ হাতে হুইপের ভাই ফজলুল হক চৌধুরী মহব্বত টিকাদান করছেন। প্রশিক্ষিত  স্বাস্থ্যকর্মী কিংবা দায়িত্বশীল কেউ না হয়েও তিনি কিভাবে এই দায়িত্ব নিলেন- তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন টিকাগ্রহীতা বাংলানিউজকে বলেন, রবিউলসহ কয়েকজন ব্যক্তি টিকা পুশ করেছেন। এদের মধ্যে ফজলুল হক মহব্বতও মানুষকে টিকা দেওয়ার কাজে জড়িত ছিলেন। এসব টিকা যথাযথভাবে সংরক্ষণও করা হয়নি। টিকা নেওয়ার পর কারও বাহুতে ব্যথা বা টিকা দেওয়ার স্থানে ফুলে গেছে।

উল্লেখ্য, গত ৩০ ও ৩১ জুলাই স্বাস্থ্য সহকারী রবিউল সিনোফার্ম এর টিকা সরিয়ে নিয়ে হুইপের নির্দেশে এলাকার লোকজনকে দেওয়া শুরু করেন। এ ঘটনায় বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দফতর ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. অজয় দাশকে কমিটির প্রধান করে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিক্যাল অফিসার ডা. মো. নুরুল হায়দার ও ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আসিফ খানকে সদস্য করা হয়। কমিটিকে দুই কর্ম দিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়। এর প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে করোনার টিকাদানের ঘটনার সত্যতাও পেয়েছে।

আরও পড়ুন>>পটিয়ায় হুইপের সম্মতিতে রবিউলের টিকাবাণিজ্য

তদন্ত কমিটির সদস্য ও ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আসিফ খান বলেন, রোববার (১ আগস্ট) দুপুর ১টার দিকে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা হয়েছে। অনুমতি ছাড়া টিকাগুলো কীভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বের করা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হয়েছে।  

তিনি বলেন, আমরা অভিযুক্ত রবিউল হোসেনের বক্তব্য নিয়েছি। এছাড়াও যারা টিকা নিয়েছেন, তাদের কয়েকজনের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রধানেরও বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত সবার কাছ থেকে আমরা লিখিত ও মৌখিকভাবে বক্তব্য নিচ্ছি। করোনার টিকা দেওয়ার বিষয়ে সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় জড়িতদের তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হচ্ছে।

আরও খবর>> * পটিয়ায় হুইপের সম্মতিতে টিকাবাণিজ্য: ঘটনাস্থলে তদন্ত টিম

বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০২১
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।