চট্টগ্রাম: হুইপ সামশুলের সম্মতিতে টিকাবাণিজ্য ও রেজিস্ট্রেশন ছাড়া টিকা প্রদান ছাড়াও রবিউলের বিরুদ্ধে একের পর এক বেরিয়ে আসছে নানা অনিয়ম আর অভিযোগ। হুইপের আশীর্বাদের হাত কাজে লাগিয়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন হাসপাতালজুড়ে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রবিউল ও সাবেক উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং সাবেক মেডিক্যাল অফিসারের সিন্ডিকেট হাসপাতালে প্রতিটি ক্ষেত্রে ছিলেন সক্রিয়। করোনা শুরুর পর থেকে কর্মস্থলে যোগ দিতে যখন করোনার নেগেটিভ প্রত্যয়ন প্রয়োজন ছিল, সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতি সার্টিফিকেট প্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা নিতেন তারা। এ ছাড়া ইপিআই কার্যক্রমের অধীন যেকোনো টিকা নিতে হলে প্রকারভেদে টাকা দিতে হতো রবিউলকে। যা হাসপাতালের উন্নয়ন ফি হিসেবে দেখানো হতো।
করোনার নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে বাণিজ্যের কথা উল্লেখ করে স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এক নেতা নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, টাকার বিনিময়ে করোনা নেগেটিভ প্রত্যয়ন দেওয়া হতো। যদিও এ হাসপাতালে কখনো করোনার টেস্ট করা হয়নি। এ ছাড়াও ইপিআই কার্যক্রমের কোনো টিকা নিতে আসলে তাদের কাছ থেকেও টাকা দাবি করতেন রবিউল।
এদিকে, করোনার টিকাবাণিজ্যের অভিযোগে রবিউলকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. শেখ মোহাম্মদ হাসান ইমাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে তাকে বরখাস্ত করা হয়।
আদেশে উল্লেখ করা হয়, কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করেছে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট রবিউল হোসেন। যা সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার পরিপন্থী। যেহেতু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইপিআই কোল্ড স্টোরে সংরক্ষিত কোভিড-১৯ টিকার সংখ্যা এবং সরবরাহকৃত টিকার সংখ্যার গড়মিল পাওয়া গেছে, সেহেতু সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর ৩ (খ) ধারায় রবিউল হোসেনকে অসদাচরণের দায়ে অভিযুক্ত করা হলো এবং একই বিধির ১২(১) ধারা মোতাবেক তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।
বরখাস্তের পর আনোয়ারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) কাজল কান্তি পালকে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সংযুক্তি বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে সোমবার (২ আগস্ট) হুইপ সামশুল হকের আশীর্বাদপুষ্ট মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট রবিউলের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে টিকা নিরাপত্তার ‘কোল্ড বক্স’ ছাড়াই টিকা স্থানান্তর, রেজিস্ট্রেশন কার্ড জালিয়াতিসহ সরকারি তদন্তে ধরা পড়েছে চট্টগ্রামের পটিয়ায় ‘হুইপ বাহিনীর’ টিকাবাণিজ্য।
তদন্ত কমিটির কর্মকর্তারা জানান, অনুমতি ছাড়া ও যথাযথ নিয়ম না মেনে দেওয়া হয় ২৬শ’ টিকা। দুই দিনে দেওয়া ২৬শ’ টিকার উপস্থাপিত রেজিস্ট্রেশন কার্ডের মধ্যে অন্তত ২২শ’ কার্ডই ভুয়া। অনুমতি ছাড়াই এ টিকাদান প্রক্রিয়ায় বিশেষজ্ঞ স্বাস্থ্য সহকারীর মতোই হুইপ সামশুলের ভাই মহব্বত নিজেই টিকা পুশ করেছেন টিকাপ্রত্যাশীদের।
জানা যায়, অনুমোদন না নিয়ে ও নিয়মবহির্ভূতভাবে পটিয়ার শোভনদণ্ডী ইউনিয়নে হুইপ সামশুল হকের বাড়ি পাশে একটি অস্থায়ী ক্যাম্পে টিকাগুলো দেওয়া হয়। হুইপ এলাকার জনগণকে করোনার টিকা দেওয়ার জন্য ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করার পর তার নির্দেশনায় ৩০ জুলাই সকাল ৯টা থেকে ১টা পর্যন্ত ১, ২, ৩ নম্বর ওয়ার্ড রশিদাবাদ আরফা করিম উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং ৩১ জুলাই সকাল ৯টা থেকে ১টা পর্যন্ত ৪, ৫, ৬ নম্বর ওয়ার্ড ও ৭, ৮, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জনগণের জন্য শোভনদণ্ডী স্কুল অ্যান্ড কলেজে এ আয়োজন করা হয়।
এই অবৈধ টিকদান কার্যক্রম সফল করতে ঘটা করে হুইপ ও নেতাকর্মীদের ছবি সম্বলিত ব্যানার ফেস্টুন লাগিয়ে প্রচারণা চালানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীর ধারণকৃত স্থিরচিত্রে দেখা যায়, রশিদাবাদ আরফা করিম উচ্চ বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যকর্মীর ভূমিকায় সিরিঞ্জ হাতে হুইপের ভাই ফজলুল হক চৌধুরী মহব্বত টিকাদান করছেন। প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী কিংবা দায়িত্বশীল কেউ না হয়েও তিনি কীভাবে এ দায়িত্ব নিলেন- তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. সব্যসাচী নাথ বাংলানিউজকে বলেন, অন্য ইপিআই টিকা দেওয়ার বিষয়ে সরকারি কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। ঘটনাটি জানার পর আসলেই টিকাদান করা হচ্ছে কিনা- তা যাচাই করতে সেখানে গিয়ে সত্যতা পেয়েছি। এ ঘটনার জন্য তাকে শোকজ করা হয় এবং দুই দিনের মধ্যে চিঠির জবাব দিতে বলা হয়।
>>> হুইপ সামশুল বাহিনীর টিকা বাণিজ্যে রবিউল অবশেষে বরখাস্ত
>>> তদন্তে ধরা পড়েছে ‘হুইপ বাহিনীর’ টিকা বাণিজ্য, গায়েব সিসিটিভি ফুটেজ
>>> পটিয়ায় হুইপের সম্মতিতে রবিউলের টিকাবাণিজ্য
>>> পটিয়ায় হুইপের সম্মতিতে টিকাবাণিজ্য: ঘটনাস্থলে তদন্ত টিম
>>> পটিয়ায় টিকা কেলেঙ্কারি: স্বাস্থ্যকর্মীর ভূমিকায় হুইপের ভাই মহব্বত
বাংলাদেশ সময়: ২০১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০২১
এমএম/টিসি