চট্টগ্রাম: শরৎ মানেই কাশফুল, পরিষ্কার নীল আকাশ আর দিগন্তজোড়া সবুজের সমারোহ। বাংলার সবুজ-শ্যামল প্রকৃতিতে শরতের আগমন মুগ্ধ করে আমাদের।
প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী নগরের অনন্যা আবাসিক এলাকার আশপাশের কাশবনগুলো জেগে উঠেছে।
শরৎ নিয়ে কবিতা, গান, গল্পের কমতি নেই। সাহিত্যে প্রসঙ্গক্রমে এসেছে শরতের কাশফুল। ভালোবাসা বিনিময়ে কাশফুলের ভূমিকাও কম নয়। গ্রাম বাংলার নদীর কূলে, বিলজুড়ে, খালের পাড়ে কাশফুলের ছড়াছড়ি শুধু চোখেই পড়তো না, মনও কেড়ে নিতো নিমিষেই।
কাশফুল একান্তই আমাদের নিজস্ব ফুল, জন্ম এ উপমহাদেশেই। ভারত, নেপাল, ভুটান, আফ্রিকা প্রভৃতি দেশেও কাশফুল ফোটে। তবে ফুল হিসেবে কাশফুলের কোনও কদর নেই, কেউ তা চাষও করে না।
নদীর চরে বা তীরে, জলাডোবার ধারে ঘাসের মতো আপনা আপনি জন্মে এই ফুল। ঘাসগোত্রীয় এই গাছের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Saccharum spontaneum ও পরিবার Poaceae. এ উদ্ভিদটি উচ্চতায় সাধারণত ৩ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। গাছটির চিরল পাতার দুই পাশ বেশ ধারালো।
সবুজ চিরলপাতার ফাঁকে ফাঁকে দেখা দেয় কাশফুল। নরম পালকের ন্যায় ধবধবে সাদা কাশফুল পাতার ফাঁকে ফাঁকে বাতাসের দোলায় নুইয়ে পড়ে। কখনও দূর থেকে দূরে বাতাসে ভর করে উড়ে বেড়ায় ফুলের পালক।
রুক্ষ, চরাঞ্চল এলাকাতে অথবা পাহাড়ের ঢালে দেখা যায় কাশফুল। অন্যদিকে নদীর কাছেই কাশফুলের বেড়ে ওঠার জন্য সবচেয়ে উপযোগী স্থান। নদীর পাড়ে জমে থাকা পলিমাটিতে খুব সহজে বেড়ে ওঠে কাশফুলের গাছ।
কাশফুলের ঔষধি গুণও রয়েছে। পিত্তথলিতে পাথর হলে নিয়মিত গাছের মূলসহ অন্যান্য উপাদান দিয়ে ওষুধ তৈরি করে পান করলে পাথর দূর হয়। কাশমূল বেটে চন্দনের মতো নিয়মিত গায়ে মাখলে গায়ের দুর্গন্ধ দূর হয়। এছাড়াও শরীরে ব্যথানাশক ফোঁড়ার চিকিৎসায় কাশের মূল ব্যবহৃত হয়।
কাশফুল আগাছা হিসেবে বিবেচিত হলেও শুকনো কাশগাছ দিয়ে গ্রামের মানুষ ঝাঁটা, ডালি, মাদুর ইত্যাদি তৈরি করে। চারাগাছ একটু বড় হলেই এর কিছু অংশ কেটে গরু-মহিষের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
ঘরের চাল, বাড়ির সীমানার বেড়া ও কৃষকের মাথার মাথাল তৈরিতেও কাশগাছ ব্যবহার করা হয়। গ্রামবাংলায় বিশ্বাস করা হয়, কাশফুল মনের কালিমা দূর করে। তাই শুভ কাজে কাশফুলের পাতা বা ফুল ব্যবহার করা হয়।
কাশফুলের আছে আরও একটি প্রজাতি। এ প্রজাতিটিকে বলা হয় কুশ। এরা দেখতে কাশফুলের মতোই। এই আলাদা বৈচিত্র্যতার জন্য শরতের নীল আকাশে শুভ্র কাশফুলের ছোঁয়া প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে কাশফুলকে করে তুলেছে অনন্য।
চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষার্থী আনিকা নাওয়ার, চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী তানভিন রেজা ঈশা ও আসমাউল হুসনার ভাষায়, শরৎ এলে বাংলা এক অমল শোভায় জাগ্রত হয়। সাদা-সবুজ শাড়ি পড়ে প্রকৃতি উদ্ভাসিত হয় দুনিয়ার আঙিনায়।
কাশবনে শিশুদের উচ্ছ্বাস দেখে প্রবীণরাও ভাসেন স্মৃতিকাতরতায়। যত দূরই হোক না কেন, খোলা আকাশের নিচে বা ইট দেওয়ালে অবগুণ্ঠন হোক না কেন, গাঁও বা নগর যা-ই হোক না কেন, এই প্রকৃতি টোকা দেয় দেবীর আঙুলে।
তাই যুগ যুগ ধরে কবিতায় কিংবা নারী নিজেকে শরতের শুভ্রতায় সাজিয়ে তুলতে চেয়েছে প্রিয় মানুষের কাছে। কবিগুরু লিখেছিলেন: ‘আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ, আমরা গেঁথেছি শেফালিমালা। নবীন ধানের মঞ্জরী দিয়ে সাজিয়ে এনেছি ডালা’।
শরৎ ও কাশফুলের বন্দনা করা হয়েছে কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায়- ‘কাশফুল মনে সাদা শিহরণ জাগায়, মন বলে কত সুন্দর প্রকৃতি, স্রষ্টার কি অপার সৃষ্টি। ’ কবি জীবনানন্দ দাশ শরৎকে দেখেছেন এভাবে- ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর। ’
বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১
এসএস/এসি/টিসি