চট্টগ্রাম: প্রতারণা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির সদস্য বাঁশখালীর মো. এরশাদুর রহমান চৌধুরীসহ দুইজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার জাহানের আদালতে বাঁশখালীর মুরিদুল আলম মামলাটি করেন।
মামলার আসামি করা হয়েছে- বাঁশখালী পূর্ব ডোংরা আমির হোসেন তালুকদার বাড়ির মৃত সিরাজুল ইসলাম প্রকাশ তোতা মিয়ার ছেলে মো. আল মামুন তালুকদার (৫০) ও একই থানার পশ্চিম পুঁইছড়ি আরবশাহ বাড়ির মৃত হাবিব উল্লাহ চৌধুরীর ছেলে মো. এরশাদুর রহমান চৌধুরী।
মামলায় অভিযোগ করা হয়- মামলার বাদী মুরিদুল আলম ও মামলার এক নম্বর আসামি মো. আল মামুন তালুকদার উভয়ের স্থায়ী ঠিকানা একই এলাকা হওয়ার সূত্রে একে অপরের সু-পরিচিত হন।
তারিখ নগদে ৫০ হাজার ও একই মাসের ২৫ তারিখ নগদে ৫০ হাজার টাকা এবং গত ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি নগদে ১ লাখ টাকাসহ সর্বমােট ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন।
দুই মাসের মধ্যে বাদীকে কাতারের ভিসা প্রদান করিবে মর্মে অঙ্গীকার করিলেও দীর্ঘ ৩ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও অদ্যাবধি বাদীকে ভিসা প্রদান করেননি। বাদীর কাছ থেকে গৃহীত ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও পাসপাের্টও ফেরত দেননি। পরবর্তীতে বাদী পাওনা টাকা ও পাসপাের্ট আসামির কাছে ফেরত চাইলে আজ দেব, কাল দেব, পরশু দেব বলিয়া কালক্ষেপণ করতে থাকে। বাদী কোনো উপায়ন্তর না পাইয়া প্রথমে স্থানীয় থানায় বিগত গত ৭ মার্চ লিখিত অভিযােগ দায়ের করেন। পরবর্তীতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে বাদী অভিযােগ করিলে উভয় পক্ষের হিতাকাঙ্ক্ষী ও উপস্থিত সাক্ষীগণের সাক্ষাতে বিগত গত ৬ সেপ্টম্বর মামুন বরাবরে একখানা লিখিত অঙ্গীকারনামা প্রদান করিয়া মুরিদুল আলমের কাছ থেকে গৃহীত ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং পাসপাের্ট আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ফেরত প্রদান করিবে মর্মে অঙ্গীকার করেন। সেই মােতাবেক গত ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মামলার ঘটনাস্থলে বাদীর কাছ থেকে গৃহীত টাকা ও পাসপাের্ট ফেরত প্রদান করিয়া লিখিত অঙ্গীকারনামা ফেরত নেওয়ার জন্য বলেন। নগরের পাঁচলাইশ থানার আরাকান হাউজিং সােসাইটির সম্মুখে গৌবিন্দ স্টোরের সামনে তথা ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাক্ষীগণের সম্মুখে বাদী লিখিত অঙ্গীকারনামা সঙ্গে নিয়া মামুনের কাছ থেকে পাওনা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং পাসপাের্ট ফেরত প্রদানের জন্য গেলে সেখানে বাদী দেখিতে পান মো. আল মামুন তালুকদার ও মো. এরশাদুর রহমান চৌধুরী সঙ্গে আরও ১০/১২ জন সন্ত্রাসী প্রকৃতির লােক সঙ্গে আনেন। পাওনা টাকা ও পাসপাের্ট ফেরত চাহিলে মহিদুলের সঙ্গে সব লেনদেন অস্বীকার করেন। পাসপাের্ট ফেরত প্রদানের অনুরােধ করলে আসামি সমস্বরে বলে ৫০ হাজার টাকা প্রদান করিলে বাদীর পাসপাের্ট ফেরত প্রদান করবে। অন্যথায় পুনরায় টাকা ও পাসপাের্ট খুঁজতে গেলে বাদীকে মিথ্যা মামলায় জড়াইয়া হয়রানি করবে এবং প্রয়ােজনে প্রাণে হত্যা করবে বলিয়া হুমকি ধমকি দেন।
বাদীর আইনজীবী আবু তালেব বাংলানিউজকে বলেন, মো. আল মামুন তালুকদার ও মো. এরশাদুর রহমান চৌধুরী বিরুদ্ধে অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গ, প্রতারণা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে সরোয়ার জাহান স্যারের আদালতে মামলা করেছি। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে সিআইডিকে আগামী ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। আদালতে মামলা নম্বর পাঁচলাইশ: ৫৪৩/২০২১।
মামলার বিষয়ে সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির সদস্য বাঁশখালীর মো. এরশাদুর রহমান চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, মামলার বাদী মুরিদুল আলমকে আমি চিনি না। যে কেউ আদালতে দরখাস্ত বা আবেদন করতে পারে। আমি মামলার কথা শুনেছি, মুরিদুল আলম ও ফরিদুল আলম এই ধরনের কাউকে চিনি না। মামলার আসামি মামুন তালুকদারকেও চিনি না। আমি বেড়ে উঠেছি ও পড়াশোনা করেছি ঢাকা শহরে, রাজনীতি করি কেন্দ্রে। আমার বিরুদ্ধে এলাকার কিছু লোক আমার নৈতিকতা, স্বচ্ছতা ও ইমেজে কিছু লোক ঈর্ষান্বিত হয়ে দশ-পাঁচ টাকায় বিক্রি হয় এ ধরনের লোক লেলিয়ে দিয়েছে। আমি এইগুলো কিছু মনে করি না। হয়তোবা সম্মানহানির চেষ্টা করছে। উপরন্তু আমার বিরুদ্ধে হয়রানি। আমি যাকে চিনি সে যদি আরেকজনের কথা শুনে ফুসলিয়ে আমার বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দে, বিষয়টা ফেয়ার হচ্ছে না। আমার বিরুদ্ধে এলাকার বিশাল চক্র কাজ করছে। মামলার বাদী ও আসামি কাউকে আমি চিনি না। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে মামলা করা হচ্ছে। আমি রাজনীতি করেছি ঢাকায়, হয়তো ঘন ঘন বাড়িতে যাওয়া-আসাতে এলাকায় রাজনীতিতে জড়িত হব মনে করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২১
এমআই/টিসি