চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) স্ট্যাটিউট অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সিলেকশন বোর্ডে (নিয়োগ বোর্ড) সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ সদস্য রাখতে হয়। তবে চবির ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে এবার ছিলেন না এ বিভাগের কোনও বিশেষজ্ঞ শিক্ষক।
এ বিষয়ে গত ২০ নভেম্বর বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর এ ‘চবির ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে নিয়ম না মেনেই নিয়োগ প্রক্রিয়া’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে চবির এ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল হাসেম বাংলানিউজকে বলেন, ‘সিলেকশন বোর্ডে সদস্যদের অবশ্যই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হতে হয়। কিন্তু এবার সিলেকশন বোর্ডের কেউ ফারসি ভাষা ও সাহিত্যের বিশেষজ্ঞ নন।
অধ্যাপক ড. মো. আবুল হাসেমের দেওয়া এ বক্তব্যের জন্য গত ২৪ নভেম্বর চবির এ অধ্যাপককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
চবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান স্বাক্ষরিত এ নোটিশে বলা হয়, গত ১৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক পদে শিক্ষক নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ড গঠন নিয়ে ২০ নভেম্বর বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর-এ আপনি বলেছেন, ‘সিলেকশন বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে অবশ্যই ফারসি ভাষা ও সাহিত্যের বিশেষজ্ঞ থাকতে হয়। কিন্তু এবারে সিলেকশন বোর্ডের কেউ ভাষা ও সাহিত্যের বিশেষজ্ঞ নন। এমন ঘটনা নিন্দনীয় ও হাস্যকর’।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ১৯৭৩ এর প্রথম সংবিধির ৫(২) ধারা অনুসারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক বিভাগে সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক পদে শিক্ষক নিয়োগের সিলেকশন বোর্ড গঠন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী পর্ষদ সিন্ডিকেট। ২০২০ সালের ১৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ৫২৮ তম সভার ৬ নম্বর সিদ্ধান্ত অনুসারে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সিলেকশন বোর্ড গঠন করা হয়।
‘আপনার উক্ত বক্তব্যের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালদের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী পর্ষদের সিদ্ধান্তকে অবজ্ঞা করা এবং নির্বাচনী বোর্ডের বিশেষজ্ঞ সদস্যগণকে অসম্মান ও অবমাননা করার সামিল। উক্ত নির্বাচনী বোর্ডে একজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডিন, যিনি সাহিত্যের স্বনামধন্য শিক্ষক এবং অপরজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের ফারসি ভাষার সিনিয়র অধ্যাপককে সিন্ডিকেট মনোনয়ন প্রদান করেছে’।
‘বিভাগের একজন সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আপনার কোনও বক্তব্য থাকলে কিংবা সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার কোনও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলে তা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানাতে পারতেন। এ ব্যাপারে আপনি এ যাবতকালে কোনও লিখিত বক্তব্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট পেশ করেননি। অথচ যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিধিবিধান মেনে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে, তখন আপনি এটাকে ‘নিন্দনীয় ও হাস্যকর’ বলে মিডিয়াতে বক্তব্য রেখে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তকে অবজ্ঞা করেছেন এবং নির্বাচনী বোর্ডের বিশেষজ্ঞ সদস্যকে অপমানিত করেছেন। যার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। এটি চট্টগ্রাম বিশবিদ্যালয় কর্মচারী (দক্ষতা ও শৃংখলা) সংবিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আপনার মন্তব্যের বিষয়ে ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দেওয়া জন্য আদেশক্রমে অনুরোধ করা হলো’।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. মো. আবুল হাসেম বাংলানিউজকে বলেন, আমাকে একটা শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমি নিয়মানুযায়ী জবাব দেব।
জানা যায়, আড়াই বছর আগে ২০১৯ সালের ১২ মে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির আলোকে তিন পদের বিপরীতে পাঁচজনকে সুপারিশ করেছে সিলেকশন বোর্ড। এছাড়া ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্ল্যানিং কমিটি থেকে সিলেকশন বোর্ড গঠনের জন্য যে চারজনকে সুপারিশ করা হয়েছিল, তাদের একজনকেও রাখা হয়নি সিলেকশন বোর্ডে। এমনকি দেশের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা ঢাবি, রাবি ও চবির ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ থেকেও কোনও প্রতিনিধি রাখা হয়নি সিলেকশন বোর্ডে। এছাড়াও আবেদনকারীদের মধ্যে পিএইচডি ডিগ্রিধারী, প্রথম শ্রেণিতে প্রথম একাধিক প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও অপেক্ষাকৃত অযোগ্যদের সুপারিশ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে আবেদনকারীদের।
এ নিয়োগে আবেদনকারী মো. কামাল হোসাইন উচ্চ আদালতে একটি রিট করেছিলেন। রিটের আলোকে উচ্চ আদালত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না মর্মে রুল জারি করেন। সেই সঙ্গে আবেদনকারীর দরখাস্ত নিষ্পত্তি করতে উচ্চ আদালত নির্দেশ দেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে আবেদনকারীর আবেদন গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। উচ্চ আদালতের রুলের একটি অংশের নিষ্পত্তি করলেও অপর অংশের নিষ্পত্তি না করেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখেন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রিট শুনানিতেও অংশগ্রহণ করেনি বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২১
এমএ/এসি/টিসি