ঢাকা, শনিবার, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জুন ২০২৪, ২১ জিলহজ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সেদিন কী ঘটেছিল শাটলে

মোহাম্মদ আজহার, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২১
সেদিন কী ঘটেছিল শাটলে

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: শাটল ট্রেনে এক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অভিযুক্ত আনিস অভি। অন্যদিকে ছুরির আঘাতের বিষয়টি সত্য নয় বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী সুজিত চৌধুরী।

 

মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) বাংলানিউজকে এসব তথ্য জানান ভুক্তভোগী ও অভিযুক্ত দুইজনই।  গতকাল সোমবার দুপুর দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছেড়ে আসা শাটল ট্রেনে এক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, ঘটনায় অভিযুক্ত আনিস অভি শাখা ছাত্রলীগের বগি ভিত্তিক উপগ্রুপ সিক্সটি নাইনের অনুসারী। ট্রেন থেকে আনিস অভিকে ফেলে দেওয়ার পর সিক্সটি নাইনের অনুসারী বেশ কয়েকজন এসে ট্রেন থামিয়ে এ ঘটনা ঘটায়।

প্রকৃতঘটনাটি কি ছিল তা জানতে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে বাংলানিউজ। তারা বর্ণনা করেন পুরো ঘটনাটি।  

বগিতে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী মেরি আরজু নামে এক শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, আমি সেই বগিতেই ছিলাম। সিট নিয়ে ঝামেলা হওয়ার পর আনিস অভি নামে ছেলেটাকে কয়েকজন ট্রেন থেকে নামিয়ে দেন। এরপর ফতেয়াবাদ স্টেশনে কিছু ছেলে উঠে সবাইকে জিজ্ঞেস করেন কে তাকে ট্রেন থেকে নামালো? তারা সবাইকে মারধরের হুমকি দিচ্ছিলো। সামনের সিটে বসা ছিলেন একজন (সুজিত চৌধুরী)। উনাকে ৫/৬ জন ধরে নাম বলতে বাধ্য করছিলেন। উনি নাম বলতে না পারায় মারধর করা হয়। তবে ভিড়ের কারণে মাথা ফেটেছিলো কিভাবে সেটা আমি দেখিনি। অক্সিজেন এলাকায় আমার একটা টিউশন ছিলো। তাই আমি উনাদের সঙ্গে হাসপাতাল পর্যন্ত গিয়েছিলাম। আনিস অভি ভুক্তভোগী  সুজিত চৌধুরীর চিকিৎসা ভার বহন করেছিলেন।

ওই বগিতে থাকা আরও এক প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশ না করা শর্তে বাংলানিউজকে জানান ট্রেনে ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনাটি। তিনি বলেন, সিট নিয়ে তর্ক বিতর্কের পর আনিস অভিকে ট্রেন থেকে কয়েকজন ফেলে দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশনেই। এরপর আনিস সম্ভবত পরের বগিতে উঠে পড়েছিলো। ট্রেনটি যখন ফতেয়াবাদ স্টেশনে থামলো, তখন ২০-২৫ জন ছেলে নিয়ে আনিস অভি ঐ বগিতে উঠে সবাইকে জেরা করতে থাকে। নাম না বললে পুরো ট্রেনের সবাইকে মারধরের হুমকি দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে ট্রেনের চারটা সিট তারা সনাক্ত করে। এ চার সিটের সবাইকে মারধরের হুমকি দেওয়া হয়। আনিস অভি তখন বলছিলো, ‘যে তাকে ধাক্কা দিয়ে ট্রেন থেকে ফেলছিলো, তাকে না পেলে সবাইকে মারধর করবে। প্রয়োজনে সে বহিষ্কার হবে। ’ একপর্যায়ে আমার সামনে থেকে একটা ছেলে গিয়ে ঐ চার সিটে বসা একজনের (সুজিত চৌধুরীর) মাথায় কিছু একটা দিয়ে আঘাত করেছিলো। তবে আমি তার হাতে কিছু দেখতে পাইনি। ট্রেনে আরও কয়েকজনকে ফোনে বলতে শুনেছি-আঘাত করা ছেলেটার নাম আকিব জাভেদ। সে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী। পরে আকিব জাভেদকে তাদের মধ্য থেকেই কেউ একজন চড়থাপ্পড় মেরেছিলেন। রক্তক্ষরণ শুরু হওয়ায় তারা সবাই ট্রেন থামানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু এর কয়েক মিনিট পরেই ট্রেনটি ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় থামে। আকিব জাভেদ তখন বগির অপর দরজা দিয়ে নেমে যায়। পুরো ঘটনা আমার সামনেই ঘটেছিলো। বগির সবাই আতঙ্কিত ছিলো। কার সঙ্গে কি হবে, এমন দুঃশ্চিন্তা ছিলো সবার মধ্যে। শাটলে এমন ভয়ংকর কিছু ঘটবে, আমরা ভাবতেও পারিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আকিব জাভেদ আঘাতের বিষয়টি অস্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, আমি সেখানে ছিলাম না। এগুলো প্রোপাগান্ডা ছাড়া কিছুই না।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী সুজিত চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, পুরো ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিলো না। তবে দূর্ভাগ্য, আমাকেই ভুক্তভোগী হতে হলো। কেউ আমাকে মারধর করেনি ঠিক কিন্তু জিজ্ঞেসাবাদের এক পর্যায়ে কেউ একজন পেছন থেকে কিছু একটা দিয়ে আঘাত করেছিলো মাথায়। অবশ্য এখানে আনিসের কোনো দোষ ছিলো না। তবে সে বুঝতে পারেনি ঘটনাটা এত বড় হয়ে যাবে। সে আমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলো। গতকাল সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত আমি হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম।

চবির আধুনিক ভাষা ইনিস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আনিস অভি বাংলানিউজকে বলেন, দুপুর দেড়টার ট্রেন ছাড়ার আগে শাটল ট্রেনে আমার দুই বন্ধুর জন্য সিটে জায়গা রাখি। পরে আইইআর’র একজন আপু এসে বসতে চাইলে আমি নিষেধ করেছিলাম। এসময় তিনি বকাঝকা করে ভিডিও করা শুরু করেন। আমি উনাকে ভিডিও করতে নিষেধ করি এবং উনাকে সিটেও বসতে বলি। পরে উনার বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের সুজিত চৌধুরী ভাইসহ কয়েকজন ঐ বগিতে ছিলেন, উনারা আমাকে ফতেয়াবাদ স্টেশনের আগে নন্দীর হাট এলাকায় ট্রেন একটু স্লো হলে ধাক্কা দিয়ে ট্রেন থেকে ফেলে দেন।  

আনিস অভি বলেন, আমি কোনোমতে আবারও ট্রেনে উঠি। আমাকে ফেলে দিতে দেখে ফতেয়াবাদ স্টেশনে ট্রেন থামার পর আমার কিছু বন্ধু বান্ধব এবং পরিচিত কয়েকজন এসে সুজিত ভাইকে জিজ্ঞেস করেন। আমি উনার পাশেই ছিলাম, এসময় শাটলের জানালায় ধাক্কা লেগে সম্ভবত উনার মাথা ফেটে যায়। রক্তবন্ধ করার জন্য আমি তাৎক্ষণিক আমার শার্ট খুলে উনার মাথায় বেঁধে দেই। পরে উনাকে অক্সিজেন এলাকার নাগরিক হাসপাতালে নিয়ে ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করি এবং সকল খরচ নিজে বহন করি। আমি অনাকাঙ্ক্ষিত এ ঘটনার জন্য উনার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি। কিন্তু অনেকে বিষয়টি না জেনে ছুরির আঘাতে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করেছেন।

আরও >>> ছুরির আঘাত নয়, শাটলে শিক্ষার্থীর মাথা ফেটেছিল যেভাবে

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২১
এমএ/টিসি
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।