ঢাকা, বুধবার, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ০৩ জুলাই ২০২৪, ২৫ জিলহজ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

কম্বল-ম্যাট্রেসের দাপটে কমেছে লেপ-তোষকের চাহিদা 

সোহেল সরওয়ার, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২, ২০২২
কম্বল-ম্যাট্রেসের দাপটে কমেছে লেপ-তোষকের চাহিদা  ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: একজন মানুষ যদি আট ঘণ্টা ঘুমায়, তাহলে তার জীবনের তিন ভাগের একভাগ সময় কাটে বিছানায়। বিছানাকে আরামদায়ক করতে তাই সবার চেষ্টা থাকে।

শহুরে বাসিন্দাদের অনেকে শীত মোকাবিলার প্রস্তুতি হিসেবে কিনে রাখেন লেপ-তোষক। আবার কেউ করেন পুরনোগুলোর পুনঃমেরামত।

একসময় ধুনকরদের (লেপ-তোষক কারিগর) দিয়ে লেপ-তোষক তৈরি করার ব্যস্ততা ছিল চোখে পড়ার মতো। এখন বাজার দখল করছে আধুনিক কারখানায় মেশিনে তৈরি জাজিম বা ম্যাট্রেস।

তারপরও শীতের আমেজের সঙ্গে সঙ্গে কার্তিক মাসের শুরু থেকেই ব্যস্ততা বেড়ে যায় ধুনকরদের। কেউ দোকানে আবার কেউ পাড়া-মহল্লায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করেন।

নগরের চকবাজার, হালিশহর, ষোলশহর, মোহরা, পাথরঘাটা সহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা দোকানগুলোতে চলছে লেপ-তোষক তৈরির কাজ। এবার শীত দেরি করে আসায় ব্যস্ততা তেমন একটা নেই।

চকবাজার তেলিপট্টি সড়কের আজমীর ম্যাট্রেস হাউজ এর মালিক মোহাম্মদ ইব্রাহিম সুমন বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি বছর শীতের শুরু থেকেই ক্রেতারা লেপ-তোষকের দোকানগুলোতে আসতে থাকে। শীতের মাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতাদের ভিড়ও বাড়তো। এখন আর তেমন ক্রেতা নেই, বিক্রিও কমে গেছে।

এই এলাকার চিটাগাং ম্যাট্রেস হাউজের কর্ণধার মো. আবু তালেব বাংলানিউজকে বলেন, আগে দিন-রাত কাজ করেও গ্রাহকদের কাছে লেপ-তোষক পাঠানো দুঃসাধ্য হয়ে যেতো। আর এখন তেমন কাজ নেই। মাঝেমধ্যে দুয়েকটা অর্ডার আসে। কার্তিক গেলো, অগ্রহায়ণ গেলো, এই ভরা পৌষেও তেমন অর্ডার পাইনি।

দেখা গেছে, কারিগররা তুলার স্তূপ করে তার ওপর চ্যাপ্টা আকৃতির কাঠের পাটাতন দিয়ে তুলোধুনো করছেন। পুরোপুরি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে সেই তুলা ঢোকানো হয় নানান রঙের কাপড়ের তৈরি লেপ-তোষকের কভারে। এরপর শুরু হয় সুঁই-সুতোর কাজ। সেলাইয়ে বাঁধা পড়ে যায় সেই তুলা। আর এভাবেই তৈরি হয় একেকটি লেপ-তোষক।

ষোলশহর এলাকার ধুনকর খায়ের আহম্মদ জানান, লেপ-তোষকের দাম সাধারণত নির্ভর করে তুলা ও কাপড়ের ওপর। আবার একেক দোকানে একেক ধরনের দাম নেওয়া হয়। ভালোমানের একটি তোষক বানাতে ১৫শ টাকা, মধ্যম মানের ১ হাজার টাকা, ৬ ফুট ৭ ইঞ্চির ভালোমানের লেপ ২ হাজার ৫শ’ টাকা, মধ্যম মানের ১ হাজার ৫শ টাকা, শিমুল তুলার বালিশ সাড়ে ৬শ টাকা এবং কটন সুতার বালিশ বানাতে খরচ পড়ে দেড়শ টাকা।

জুবিলী রোড এলাকার ব্যবসায়ী নাজির উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, ম্যাট্রেসের দাম ঠিক হয় এর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও পুরুত্বের ভিত্তিতে। সাত ফুট দৈর্ঘ্য ও পাঁচ ফুট প্রস্থের একটি খাটের জন্য মাঝারি পুরুত্বের একটি ম্যাট্রেস কিনতে ক্রেতাকে ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা খরচ করতে হবে। তবে একই আকারের ভালোমানের ম্যাট্রেস কিনতে খরচ হবে কমপক্ষে ৯ হাজার টাকা।

এদিকে খোলাবাজারে তুলার দাম ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। ধুনকররা জানান, বাজারে প্রতিকেজি গার্মেন্ট তুলা ৮০ থেকে ৯০ টাকা, শিমুল তুলা ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, কার্পাস তুলা ও শিশু তুলা ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে।  

তারা জানান, সারাবছর তেমন একটা ব্যবসা হয় না। পুরো বছরের ব্যবসা শীতের এই ৩-৪ মাসে করতে হয়। এজন্য শ্রম দিতে হয় বেশি। সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে ব্যবসায় লাভ কমে এসেছে। বেড়ে গেছে প্রতিযোগিতাও।

জানা যায়, লেপ-তোষক তৈরিতে গার্মেন্টের ঝুট ও কার্পাস তুলা ব্যবহার করা হয়। একটি সিঙ্গেল লেপ তৈরিতে ৬শ-৮শ টাকা, সেমি-ডাবল লেপ তৈরিতে ৮শ-১২শ টাকা এবং ডাবল লেপ তৈরিতে ১২শ-১৫শ বা ততোধিক টাকা খরচ হয়। এরমধ্যে রয়েছে সুতা, কাপড় ও মজুরি ব্যয়। এছাড়া তুলার মান, পরিমাণ, নারিকেলের ছোবড়া ও কাপড়ের ওপর নির্ভর করে একেকটি তোষকের দাম।

দোকানগুলোতে শুধু রেডিমেড নয়, ক্রেতারা পছন্দমতো লেপ-তোষক কারিগর দিয়ে তৈরি করিয়ে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে তুলার মান ও পরিমাণের ওপর নির্ভর করে লেপ তৈরির খরচ। একটি ডাবল লেপ বানাতে ৩ থেকে ৪ কেজি তুলা লাগে। আর লেপ বানাতে সাধারণত কার্পাস তুলা ব্যবহার করা হয়।

ব্যবসায়ীরা জানান, জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় স্বাভাবিকভাবেই লেপ-তোষক তৈরিতে খরচ বেড়ে গেছে। একটি লেপ বিক্রি করে একশ থেকে তিনশ টাকা পর্যন্ত লাভ হয়।

গ্রামাঞ্চলেও এখন চলছে লেপ-তোষক তৈরি। পুরুষের পাশাপাশি নারীরা বাড়িতে লাল কাপড়, তুলা, সুঁই-সুতা দিয়ে লেপ তৈরির কাজ করছেন। ১টি লেপের মজুরি ৩শ থেকে ৪শ টাকা, তোষক ২শ থেকে ৩শ টাকা।

নগরের রেয়াজউদ্দীন বাজার, হকার্স মার্কেটে শীতের নানা ধরনের কম্বল বিক্রি হচ্ছে। বড় কম্বল আড়াই থেকে পাঁচ হাজার টাকা, ছোট কম্বল দেড় থেকে তিন হাজার টাকা, শিশুদের কম্বল এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকায় মিলছে। অল্প দামের কম্বলও আছে মার্কেটগুলোতে, মিলছে তিনশ থেকে এক হাজার টাকায়।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০২২
এসএস/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।