ঢাকা, শনিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ মে ২০২৪, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

লাখো শিক্ষার্থীর গোপন ফলাফলের তথ্য পেনড্রাইভে!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৭ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০২২
লাখো শিক্ষার্থীর গোপন ফলাফলের তথ্য পেনড্রাইভে!

চট্টগ্রাম: মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। ২০২১ সালে প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষার লাখো শিক্ষার্থীর গোপন ফলাফলের তথ্য বাইরে চলে যাওয়ায় তৈরি হয়েছে বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি।

বোর্ডের এতদিনের কষ্টার্জিত সফলতা যেন ম্লান হতে চলেছে।

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড থেকে সম্প্রতি পেনড্রাইভে করে ফলাফল বাইরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি সামনে এসেছে।

বড় ধরনের এ অনিয়মের ঘটনায় খোদ বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা সচিব অধ্যাপক আবদুল আলীমের অনুমতিতেই এ ফলাফল বাইরে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ফলাফলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা। স্থবির হয়ে পড়েছে বোর্ডের নানা কার্যক্রম।

সূত্র জানায়, পাবলিক পরীক্ষার লাখো শিক্ষার্থীর ফলাফল সংক্রান্ত যাবতীয় ডাটা (তথ্য) শিক্ষাবোর্ডের পাশাপাশি এবং ফল প্রকাশে বোর্ডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান টেলিটক ও বুয়েটের কাছেই সংরক্ষিত থাকে। প্রত্যেক শিক্ষাবোর্ড নিজেদের ফলাফল সার্ভারে সংরক্ষণ করে। প্রয়োজনে আন্ত:বোর্ড এসব ডাটা ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্রের এসব নিয়ম-নীতির কোনো ধরনের তোয়াক্কা না করে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড চট্টগ্রামের ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফল সার্ভার থেকে পেনড্রাইভে করে বোর্ডের গঠিত একটি তদন্ত কমিটির সদস্যরা বাইরে নিয়ে গেছেন। এতে করে বোর্ডের শিক্ষার্থীদের গোপনীয় তথ্যসমূহ সংরক্ষণে বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (বর্তমান সচিব) অধ্যাপক আবদুল আলীম এ অভিযোগের বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন,  বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তাই একটা তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে আমি কথা বলতে পারবো না। তথ্য বাইরে যাওয়ার এ বিষয়েও যদি কারও কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে বোর্ডে যোগাযোগ করলে আমরা দেখবো।

১৩ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড চট্টগ্রামের এইচএসসির (২০২১) ফলাফল প্রকাশের পর চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইটে পরীক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নাম্বার প্রদর্শনে অসঙ্গতির বিষয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি বোর্ড থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটির আহ্বায়ক চট্টগ্রামের পটিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, অপর দুই সদস্য হলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ এইচ এম সাজেদুল হক ও চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সহকারী সচিব সম্পাতা তালুকদার।

৭ কর্মদিবসের মধ্যে বিষয়টি তদন্ত করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবরে প্রতিবেদন প্রদানের জন্য বলা হয়। তবে ইতোমধ্যে ১১ কর্মদিবস অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও ওই তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি।

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট কিবরিয়া মাসুদ খান বাংলানিউজকে বলেন, তদন্ত কমিটির সদস্যরা আমার কাছে ফলাফলের তথ্য চেয়েছেন, আমি বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের অনুমতিক্রমে তথ্য দিয়েছি।

তদন্ত কমিটির সদস্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ এইচ এম সাজেদুল হকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাড়া দেননি।

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে পরীক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বরের অসঙ্গতির বিষয়ে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিতে যাদের রাখা হয়েছে, তাদেরমধ্যে আহ্বায়কের বিরুদ্ধে জামায়াত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘ তিন দশক পর শিবিরের আধিপত্য বিস্তার থেকে ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর সরকারি চট্টগ্রাম কলেজ ও হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ মুক্ত করে তৎকালীন আন্দোলনরত ছাত্রলীগ।

চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ছাত্রলীগ ওই সময় ৮ শিক্ষকসহ মোট ১১ শিক্ষক-কর্মচারীর নাম প্রকাশ করে। যাদের জামায়াত শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে। এরমধ্যে সম্প্রতি বোর্ড থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়কের নামও রয়েছে। তিনি যখন চট্টগ্রাম কলেজ থেকে পটিয়া কলেজের অধ্যক্ষ হন তখন বিষয়টি আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম।  

এছাড়া, ওই তদন্ত কমিটির দ্বিতীয় ব্যক্তি হলেন চবি সহকারী অধ্যাপক এ এইচ এম সাজেদুল হক। তিনি আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক মহিউদ্দিন চৌধুরীর জামাতা। বছরখানেক আগে অনিয়ম-দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে অপসারিত হন। এতে প্রশ্ন উঠেছে, নাম্বার অসঙ্গতির বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটিতে জামায়াত শিবির সমর্থিতদের রাখা নিয়ে।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়। ২৬৭টি কলেজ থেকে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২৫১ জন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ৯৯ হাজার ৬২৮ জন। এরমধ্যে ছাত্র ৪৯ হাজার ৩০৬ ও ছাত্রী ৫০ হাজার ৩২২ জন। পাসের হার ৮৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৩ হাজার ৭২০ শিক্ষার্থী।

বাংলাদেশ সময়: ০০২৭ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০২২
বিই/ টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।