ঢাকা, বুধবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ মে ২০২৪, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

অতিরিক্ত দেনমোহর, চট্টগ্রামে বাড়ছে তালাকের প্রবণতা 

মিজানুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০২২
অতিরিক্ত দেনমোহর, চট্টগ্রামে বাড়ছে তালাকের প্রবণতা  ...

চট্টগ্রাম: মুসলিম বিবাহরীতিতে দেনমোহর নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অন্যতম নিদর্শন। বিয়ের সময় ধার্যকৃত দেনমোহর নারীর অর্থনৈতিক অধিকার।

যা পরবর্তীতে অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।  

কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত দেনমোহর ধার্য করার ফলে স্ত্রী কর্তৃক তালাকের প্রবণতা বাড়ছে।

শুধু তাই নয়, বিবাহবিচ্ছেদ হওয়ার পর বিশাল অংকের দেনমোহরের বোঝা টানতে গিয়ে স্বামীকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়।  

সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। আইন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুদ্দীন ও পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ভূঁইয়ার এ গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ পেয়েছে দক্ষিণ এশিয়াভিত্তিক আইন বিষয়ক জার্নাল ‘বাংলাদেশ জার্নাল অফ ল’-তে।  

সাধারণত দেনমোহর ধার্যের কোনও নির্দিষ্ট সীমা নেই। বরের আর্থিক সামর্থ্যের ওপর ভিত্তি করে দেনমোহর নির্ধারিত হয়। কিন্তু সামাজিক প্রথা, কনের পারিবারিক ঐতিহ্য ও সামাজিক সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখতে অনেক সময় মাত্রাতিরিক্ত দেনমোহর ধার্য করা হয়।  

গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত দেনমোহর ধার্যকরণ এবং কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামে ‘স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাক দেওয়ার ক্ষমতা প্রদান’ এই দুইয়ের প্রভাবে চট্টগ্রামে বিবাহবিচ্ছেদের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। যার বেশিরভাগই স্ত্রী কর্তৃক তালাক প্রদান। এই তালাক প্রদানের ক্ষেত্রে দেনমোহর গড়ে ৯ লাখ ৯৭ হাজার ৭৮৯ টাকা। পুরুষ কর্তৃক তালাক প্রদানের ক্ষেত্রে গড় দেনমোহর ৭ লাখ ২১ হাজার ৩৪৬ টাকা।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, গ্রামের তুলনায় শহরে দেনমোহরের পরিমাণ বেশি। শহরাঞ্চলে স্বামী কর্তৃক তালাক প্রদান করার ক্ষেত্রে গড় দেনমোহর ৬ লাখ ৩০ হাজার ৮৯ টাকা এবং স্ত্রী কর্তৃক তালাক প্রদানের ক্ষেত্রে গড় দেনমোহর ১১ লাখ ৫৬ হাজার ২১৪ টাকা।

তালাকপ্রাপ্ত ১৭৮ জন নারী-পুরুষের তথ্য সংগ্রহ করে এবং চট্টগ্রামের পারিবারিক আদালতের নথি ও কাবিননামা পর্যালোচনা করেন গবেষকরা।  

আদালতের নথি বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৫৫.৯ শতাংশ তালাক প্রদান করা হয় স্ত্রীর পক্ষ থেকে। ৪৪.১ শতাংশ তালাক প্রদান করা হয় স্বামীর পক্ষ থেকে। কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামের মাধ্যমে ৯৯.৫ শতাংশ পুরুষ তালাক প্রদানের ক্ষমতা প্রদান করেছেন স্ত্রীকে। আর স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা প্রদান করেননি মাত্র ০.৫ শতাংশ পুরুষ।  

নথির তথ্য বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, স্ত্রী কর্তৃক তালাকের ক্ষেত্রে গড় দেনমোহর ছিল ৮ লাখ ৮২ হাজার ২৮০ টাকা এবং স্বামী কর্তৃক তালাকের ক্ষেত্রে গড় দেনমোহর ছিল ৭ লাখ টাকা।

তাছাড়া উচ্চশিক্ষিত নারীর ক্ষেত্রে দেনমোহরের পরিমাণ সাধারণ নারীর চেয়ে বেশি। আবার বিয়ের এক বছরের মধ্যে তালাক সংঘটিত হওয়ার ক্ষেত্রে স্ত্রী কর্তৃক তালাকে গড় দেনমোহর, স্বামী কর্তৃক তালাকে গড় দেনমোহরের তুলনায় বেশি বলেও গবেষণায় উঠে আসে।  

গবেষকরা বলছেন, স্ত্রী কর্তৃক তালাক প্রদানকে অনেকেই নারীর ক্ষমতায়ন হিসেবে বিবেচনা করেন। কিন্তু অধিক হারে দেনমোহর ধার্য করে বিয়ের অল্প সময়ে মধ্যে স্ত্রী কর্তৃক তালাক প্রদান করার ফলে ধার্যকৃত দেনমোহর আদায়ে ক্ষমতার অপব্যবহার হচ্ছে। অতিরিক্ত দেনমোহর স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে একচেটিয়া তালাক প্রদানের ক্ষমতাকে রহিত করে বলে মনে করেন অভিভাবকরা। পাশাপাশি অতিরিক্ত দেনমোহর স্বামীর অর্থনৈতিক সক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করছে, যা স্বামীর জন্য মানসিক ও অর্থনৈতিক নির্যাতনের কারণ।  

গবেষক দলের সদস্য সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া বাংলানিউজকে বলেন, এ গবেষণা শুধু চট্টগ্রামের প্রেক্ষাপটে। সারা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরা হয়নি। ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে পুরো দেশের অবস্থা নিয়ে কাজ করবো।  

তিনি বলেন, দেনমোহর দুই পক্ষের উপস্থিতিতে তৎক্ষণিকভাবে আদায় করা উচিত। তাছাড়া বরের সামর্থ্যকে প্রাধান্য দিয়ে এই দেনমোহর নির্ধারণ করা উচিত। তা না হলে দেনমোহর আদায় নিয়ে বরকে আইনি জটিলতায় পড়তে হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১২১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০২২
এমআর/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।