ঢাকা, বুধবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ মে ২০২৪, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বিদেশির কাছে মার খাচ্ছে দেশি জুতা

সৈয়দ বাইজিদ ইমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২২
বিদেশির কাছে মার খাচ্ছে দেশি জুতা ...

চট্টগ্রাম: মোহাম্মদ আব্দুল মোতালেব এর বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। সাত বছর আগে পরিবারের সঙ্গে রাগ করে চট্টগ্রাম এসেছিলেন।

চাকরি নেন নগরের মাদারবাড়ী এলাকার জুতা তৈরির কারখানায়। সাত বছর আগে যে বেতনে চাকরি নিয়েছিলেন তা থেকে মাত্র এক হাজার টাকা মজুরি বেড়েছে তার।
 

মোতালেবের মতো অনেক শ্রমিকের সংসার বড় হয়েছে, কিন্তু বাড়েনি মজুরি। কষ্ট হলেও ছাড়তে পারছেন না পুরোনো পেশা। কোনও কোনও শ্রমিকের পুরো জীবনটাই কেটেছে এই জুতা তৈরিতে। বেশিরভাগ শ্রমিকের আজকে যা আয় হয়, আজকেই শেষ। আগামীকালের জন্য সঞ্চয় বলতে কিছু আর থাকে না।  

চট্টগ্রামে পাদুকাশিল্পে কাজ করা শত শত শ্রমিকের একই দশা। কারখানা মালিকরা বলছেন, করোনার দুই বছরের লোকসান কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। একটু ঘুরে দাঁড়াতে পারলেই শ্রমিকদের বেতন বাড়বে। তবে শ্রমিকরা বলছেন, এ কথা মালিকরা সবসময় বলেন। আজকে-কালকে করতে করতে সময় যায়।  

মাদারবাড়ি এলাকায় জুতা তৈরির কারখানায় শ্রমিকেরা চার পর্যায়ে জুতা তৈরি করেন। প্রথমে একজনে ডিজাইন করবেন, এরপর ডিজাইন অনুযায়ী আরেকজনে কাটবেন, ওপরের ও নিচের অংশ তৈরি করবেন আরেকজন। সম্পূর্ণ জুতা তৈরি করবেন সর্বশেষ ব্যক্তি। এরপর প্যাকেটজাতকরণ। এসব শ্রমিকদের সাপ্তাহিক ভিত্তিতে মজুরি দেওয়া হয়। সপ্তাহে ১ জন শ্রমিক ৩০-৩৫ জোড়া জুতা তৈরির কাজ করতে পারে। একজন শ্রমিক ১ ডজন জুতার পারিশ্রমিক হিসেবে ৪০০ টাকা পান।

ফিট রাইট সুজ কারখানার কারিগর খলিলুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমি এ কারখানায় ১৯৯৬ সাল থেকে কাজ করছি। কারখানায় নারীদের জুতার ওপরের অংশ তৈরির কাজ আমি করি। গত ১০ দিনে মাত্র ২০ জোড়া জুতা তৈরি করেছি। অথচ ঈদের এ সময়ে করোনার আগে প্রতিদিন ৫ জোড়া ‘আপার’ বানাতাম। মজুরিও কম।

পাকিস্তান আমলে চট্টগ্রামের মাদারবাড়ি এলাকায় গড়ে ওঠে হাতে তৈরি জুতার কারখানা। ২০১২ সালের আগ পর্যন্ত প্রায় ৩৫০টি কারখানা গড়ে উঠলেও করোনার কারণে ধস নামে এ ব্যবসায়। বর্তমানে ২৫০টি কারখানা রয়েছে পূর্ব ও পশ্চিম মাদারবাড়ি এলাকায়। একসময় বছরে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ জুতা উৎপাদন হতো এ শিল্পে। ২০১২ সালের আগে এ শিল্পের বার্ষিক টার্নওভার ছিল ৫০০ কোটি টাকা। গত দুই বছরে করোনায় এ খাতে লোকসান হয়েছে কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকার। মহামারির প্রভাবে বিক্রি ও কার্যাদেশ কমে গেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। এছাড়াও এ খাতের অর্ধেকেরও বেশি শ্রমিক-কর্মচারী কারখানা বন্ধের কারণে অন্য পেশায় চলে গেছেন।  

চট্টগ্রাম ক্ষুদ্র পাদুকা শিল্প মালিক গ্রুপের সভাপতি মঞ্জু খান বাংলানিউজকে বলেন, গত দুই  বছর ধরে জুতা তৈরির জিনিসপত্রের দাম যে হারে বাড়ছে সেই হারে আমরা তৈরিকৃত জুতার দাম বাড়াতে পারছি না। রমজানের ঈদেই আমাদের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার প্রধান লক্ষ্য থাকে। কিন্তু অর্ডার নেই। সবচেয়ে বড় বাধা- দেশের বাজারে চলছে চীন, ভারত ও বার্মিজ জুতা। ফলে হাতে তৈরি দেশিয় জুতার বাজার নিম্নমুখী। কারখানায় এসময়ে যেখানে বাড়তি শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে জুতা তৈরিতে ব্যস্ত থাকার কথা, সেখানে বিদ্যমান শ্রমিকরাই কাজ করছে।

রাকিব সুজের স্বত্ত্বাধিকারী মো. রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, পুরো রমজান মাসজুড়ে আমাদের ব্যবসা সরগরম থাকতো। এসময়ে সপ্তাহে ২০০ ডজন জুতা তৈরি করতে পারতাম। কিন্ত এখন সপ্তাহে ৫০ ডজন জুতারও অর্ডার আসছে না। শ্রমিকদের বেতন দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কাঁচামালের দামও বেড়েছে। কারখানা চালানো দায় হয়ে পড়েছে।  

বিতালী সুজের মালিক মো. আজহার উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, অবৈধভাবে দেশে চায়না জুতা আমদানির কারণে দেশিয় জুতার কদর কমে যাচ্ছে। বন্ধ হওয়ার পথে দেশিয় জুতা তৈরির কারখানাগুলো। অবৈধ পথে বিদেশি জুতা আমদানি বন্ধ করতে না পারলে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত শত শত শ্রমিক পথে বসবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২২
বিই/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।