ঢাকা, শনিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ মে ২০২৪, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ

‘আমার ভাইয়ের লাশটা এনে দেন’

সৈয়দ বাইজিদ ইমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০২ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০২২
‘আমার ভাইয়ের লাশটা এনে দেন’

চট্টগ্রাম: সীতাকুণ্ডের কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও খোঁজ নেই অনেকের। প্রিয় মানুষটি বেঁচে আছে, নাকি মৃত- তাও জানেন না স্বজনেরা।

এরপরেও প্রিয়জনের লাশ ফিরে পেতে মঙ্গলবার (০৭ জুন) চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভিড় করেছেন স্বজনেরা।

নিখোঁজদের একজন মো. আব্দুল মনির হোসেন।

বাড়ি সীতাকুণ্ডের উত্তর ফকিরপাড়ায়। কাজ করতেন বিএম ডিপোর এফ‌এলটি অপারেটর (ক্রেন চালক) হিসেবে। বিস্ফোরণের আগে বাড়িতে জানিয়েছিলেন বেঁচে থাকলে পরে কথা হবে। সেটিই মনিরের শেষ কথা। এরপর থেকে পরিবার জানে না তিনি বেঁচে আছেন কিনা। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী ও নিহতদের মধ্যে তাকে শনাক্ত করতে পারেনি স্বজনেরা।

তবে শেষ বারের মতো একবার তাকে দেখতে চান বড় ভাই মোহাম্মদ আলমগীর। সেজন্য ব্যানার হাতে সকাল থেকেই দাঁড়িয়ে ছিলেন চমেক হাসপাতালের সামনে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের খবর রাতেই বাড়িতে জানিয়েছিল মনির। কথা বলার একপর্যায়ে বেঁচে থাকলে পরে কথা হবে বলে ফোন কেটে দেয়। এটাই তার সঙ্গে শেষ কথা। এরপর থেকে ফোন বন্ধ’।

আলমগীর বলেন, ‘আমি চমেকসহ বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ করেও মনিরের সন্ধান পাইনি। বেঁচে আছে কিনা জানি না। গতকাল (সোমবার) ডিএনএ নমুনা দিয়েছি। অন্তত আমার ভাইয়ের লাশটা এনে দেন। কিছুটা শান্তি লাগবে। ’

অপরদিকে স্বামীর খোঁজে এসেছেন রেশমা বেগম। সঙ্গে তিন মাস বয়সী শিশু। রেশমার মতোই সাত মাস বয়সী শিশু কন্যা নিয়ে স্বামীর খোঁজ করছিলেন ইসফাহান সুলতানা। আর মেয়ে জামাইয়ের খোঁজে এসেছেন শ্বশুর মোহাম্মদ লিটন। তিনি পেশায় অটোরিকশা চালক। তার মেয়ে জামাই শাহজাহান কাভার্ডভ্যান চালাতেন। তাদের ঘরে এক মাস ও ছয় বছর বয়সী দুই ছেলে। বিস্ফোরণের সময় লিটন ফোনে যোগাযোগ রেখেছিলেন শ্বশুরের সঙ্গে।

মোহাম্মদ লিটন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আগুনের খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে জামাইকে ফোন দিই। সে প্রথমে নিরাপদ দূরত্বে ছিল। পরে আবার ঘটনাস্থলে ছুটে যায় বন্ধুর খোঁজে। আমি তাকে অনেক অনুরোধ করেছি বের হয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু সে বের হয়নি। একটু পরেই বিকট শব্দ হয়। ’

তিনি বলেন, ‘শাহজাহানের এক মাস বয়সে তার মা মারা যায়। তার বাবা অন্য জায়গায় গিয়ে নতুন সংসার শুরু করে। তার আর কেউ নেই। নিজের সংসার নিয়ে আমার হিমশিম খেতে হয়। এখন মেয়ে আর দুই নাতিকে নিয়ে কীভাবে থাকব, কই যাবো ভেবে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ছে। ’

এদিকে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থেকে ফায়ার ফাইটার শফিউল ইসলামের খোঁজে এসেছেন তার স্বজনেরা। বৃদ্ধ বাবা আব্দুল মান্নান হোসেনও ছুটোছুটি করছেন ঢাকায়। বিস্ফোরণের পর থেকে খোঁজ নেই শফিউলের। তিনি কুমিরা ফায়ার স্টেশনে কাজ করতেন।

শফিউলের বাড়িতে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রয়েছেন। গত বছরেই বিয়ে করেছিলেন শফিউল। তার স্বজনেরা জানান, পরিবারের দুই সন্তানের মধ্যে শফিউল ইসলাম বড়। তিনিই একমাত্র সংসারের হাল ধরেছিলেন।

নিখোঁজ স্বজনকে অক্ষত পাওয়ার আশা একেবারেই ক্ষীণ। তবুও তাদের আশা স্বজনকে মৃত পেলেও মনকে বোঝাতে পারবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০২২
বিই/এনএসআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।