ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

নিয়মিত হয় টহল, তবু ধরাছোঁয়ার বাইরে মাদকসেবীরা

মোহাম্মদ আজহার, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪১ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২২
নিয়মিত হয় টহল, তবু ধরাছোঁয়ার বাইরে মাদকসেবীরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: ক্যাম্পাসের অন্তত ২০টি স্পটে মাদকসেবীদের নিয়মিত আসর বসে। মাদকের এমন ছড়াছড়িতেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) কর্তৃপক্ষ এখনো অপেক্ষায় আছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের।

কর্তৃপক্ষ বলছে- মাদকসেবীদের ধরতে নিয়মিত প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা টহল দেন। অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল, রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে অবাধে মাদকসেবন করছে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা এসব মাদকসেবীরা।
 

কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে বিভিন্ন সোর্সের তথ্যের ভিত্তিতে প্রায় সময় অনেক স্পটে অভিযান চালানো হয়। তবে মাদকের বিরুদ্ধে শুধু অভিযান চালালেই মাদকসেবন বন্ধ করা যাবে না। তাই শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজন কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা।  

ক্যাম্পাসে মাদকসেবীদের আসরগুলো যেসব স্থানে বসে, এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের পশ্চিম পাশ, শাহজালাল ও শাহ আমানত হলের সামনের বেশ কয়েকটি কটেজ, বিশ্ববিদ্যালয় রেলস্টেশনের পূর্বপাশে, আইন অনুষদ ক্যান্টিনের পাশে, এএফ রহমান হলের বিপরীতে ট্যাঙ্কির পাহাড়, টেনিস কোর্ট, স্লুইস গেইট, চবি কলেজের পেছনে, জাদুঘরের সামনে, ফরেস্ট্রি হেলিপ্যাড, ফরেস্ট্রি গ্যারেজের পেছনে, কলা অনুষদ ঝুপড়ির পাশের পুকুর, চাকসুর পেছনে, উস-প্রাইমারি স্কুল এবং হিল সাইড স্কুলের গলির ভেতর, লেডিস ঝুপড়ির পেছনে, শহীদ মিনার চত্বর এবং মুক্তমঞ্চে আড্ডায় বসে মাদকসেবন করেন মাদকাসক্তরা। তবে দীর্ঘদিন মাদকবিরোধী কোনো অভিযান না হওয়ায় এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতেই অবাধে মাদকসেবন করছেন অনেকে।  

এদিকে মাদকের চাহিদা বাড়ায় ক্যাম্পাসকে ঘিরে মাদক ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটও দিনদিন বড় হচ্ছে। করোনা মহামারির পর উল্লেখযোগ্য কোনো অভিযান না হওয়ায় কর্তৃপক্ষের নির্লিপ্ততার সুযোগে আরও সরব হয়েছে এ সিন্ডিকেট। জানা গেছে মাদক সরবরাহের মূলে পরোক্ষভাবে রয়েছে ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপ-উপগ্রুপের নেতারা। যাদের মদদে ক্যাম্পাসে নিয়মিত ঢুকছে মাদক। এছাড়া নিরাপত্তারক্ষীদের কেউ কেউ এসব সিন্ডিকেটের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন বলেও জানা গেছে।

কোনো বাধা ছাড়াই মাদকাসক্তরা এখন মদ, গাঁজা, হেরোইন, ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য অবাধে সেবন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে। ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে অবাধে মাদক সেবনের সুযোগে বহিরাগত মাদকসেবীরাও এখন ক্যাম্পাসে ঢুকছে দলবেঁধে। বহিরাগতদের বড় একটি অংশ ক্যাম্পাসের পাশের জোবরা গ্রাম, রেলগেইট, মদনহাট, ফতেয়াবাদ এলাকা থেকেই আসেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত পার্বত্য অঞ্চলের কিছু শিক্ষার্থীও মাদক সরবরাহের সঙ্গে জড়িত আছে বলে জানা গেছে। যার ফলে সন্ধ্যা হলেই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত বসছে মাদকের আসর। সম্প্রতি মাদকসেবন করে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন আবাসিক হলে মাতলামো করতেও দেখা গেছে অনেককে।  

বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মহিউদ্দিন সুমন বাংলানিউজকে বলেন, ক্যাম্পাসের হলগুলোতে সাধারণত আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া অভিযান চালাতে পারি না। তাই কর্তৃপক্ষ যদি মাদকবিরোধী কোনো অভিযান চালাতে চায় সেক্ষেত্রে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো। এছাড়া হলের বাইরে কোথাও যদি মাদকসেবনের তথ্য আমাদের কাছে আসে, সে বিষয়েও আমরা সচেতন থাকবো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া  বাংলানিউজকে বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সবসময় কঠোর। প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা প্রতিদিন রাতে গুরুত্বপূর্ণ স্পটগুলোতে টহল দেন। হতে পারে মাদকসেবিরা আমাদের টহল শেষ হওয়ার পরে এসব করে। এছাড়া আবাসিক হলগুলোতে মাদক নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আমরা হল প্রভোস্টদের বলেছি। হল কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের সহযোগিতা চায় অথবা আমরা যদি কারও কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ বা তথ্য পাই আমরা তাৎক্ষণিক মাদকবিরোধী অভিযান চালাবো। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কীভাবে কাউন্সেলিং করা যায়, সেটাও ভাবতে হবে আমাদের।

চবি ছাত্র-ছাত্রী পরামর্শ ও নির্দেশনা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মামুন বাংলানিউজকে বলেন, সাধারণত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়তে আসেন, তাঁদের মধ্যে একটি বড় অংশ মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়ে। তাঁরা হয়তো নিজেরা কষ্ট করে চলেন, না হয় তাঁদের পরিবার কষ্ট করে পড়াশোনার খরচ বহন করে। এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ভালোমানের বিভাগ রয়েছে, যেখানে সারাবছর তাদেরকে পড়াশোনা চাপে থাকতে হয়। এমন মেধাবী ছাত্ররা যদি মাদকের কারণে হারিয়ে যায়, তাহলে দেশ-জাতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতি।  

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মাদক নির্মূলে আগেও অনেক অভিযান চালিয়েছে। শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে এ ধরনের অভিযান ভবিষ্যতেও অব্যহত রাখবে। এছাড়া আমরাও এ বিষয়ে খুব উদ্বিগ্ন। শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং করার জন্য কী ধরনের পরিকল্পনা করা যায়, সেটাই ভাবছি আমরা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২২
এমএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।