চট্টগ্রাম: বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) চট্টগ্রাম কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত শিল্পী-কলাকুশলী ও সংস্কৃতিকর্মীদের হৃদয়ে জমে থাকা কষ্টের কথা শুনলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
শুক্রবার সকালে মন্ত্রী বিটিভির চট্টগ্রাম কেন্দ্র পরিদর্শনে এলে শিল্পীরা অতীতের অবহেলা, বঞ্চনা, দুর্নীতি, অনিয়ম তুলে ধরেন।
গীতিকার ও সুরকার ফরিদ বঙ্গবাসী বলেন, এ কেন্দ্র ছয় ঘণ্টা সম্প্রচার করুক তা একটি মহল চায় না। তারা নানাভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। চট্টগ্রামের শিল্পী হিসেবে আমরা লক্ষ করেছি, গত তিন মাসে এ কেন্দ্রে দৃশ্যমান ও গুণগতমানে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছিল। এমনকি প্রোগ্রাম বেচাকেনাও হতো। একই শিল্পী, শিশুশিল্পীর মুখ বারবার দেখানো হতো।
শিল্পী ফাহমিদা রহমান বলেন, বিটিভির তালিকাভুক্ত হওয়ার পরও ৫-৬ বছরে একবারও অনুষ্ঠানের ডাক পাইনি। ঢাকায় গান গাইতে গেছি। তাদের তো বলতে পারি না, চট্টগ্রাম কেন্দ্রে ডাক পাই না। তালিকাভুক্ত শিল্পীরা অবহেলিত, উপেক্ষিত ছিল। আমরা গাদা গাদা প্রোগ্রাম চাই না। তিন মাসে একটি দিন প্রোগ্রাম হলেও হবে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, পাঁচ বছর আমি চুপ মেরে ছিলাম। অনেক দুঃখ, কষ্ট জমেছে মনে। টিভি কর্তৃপক্ষকে গড়পড়তা গালি দিলে হবে না। শিল্পীরাও দায়ী। আলাউদ্দিন তাহের এক বছরে তিনবার গ্রেডেশন নিয়েছেন। অথচ একটি গ্রেডেশনের জন্যে তিন বছর অপেক্ষা করতে হয়। তারা ৬০-৬৪ হাজার টাকার চেক গ্রহণ করেন কীভাবে? মাননীয় মন্ত্রী, তার (আলাউদ্দিন) মতো যত গ্রেডেশন হয়েছে অচিরেই বাতিল করুন।
শিল্পী অনামিকা তালুকদার বলেন, সম্প্রতি একজন সাংবাদিক ফোন দিয়ে জানতে চাইলেন বিটিভির চট্টগ্রাম কেন্দ্রের পরিবেশ, অনুষ্ঠানের মান নাকি অত্যন্ত বাজে হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন প্রোগ্রাম করিনি। একসময় প্রোগ্রাম করতাম, কিন্তু দেখতাম না। কারণ আমি গান করলাম, পরে দেখলাম আমার সঙ্গে অখ্যাত-বেসুরো শিল্পীকে জুড়ে দেওয়া হলো।
তিনি বলেন, এ কেন্দ্রের বর্তমান মহাব্যবস্থাপক জাঁ-নেসার ওসমান পাঁচ বছর দায়িত্বে থাকলে এটি সব চ্যানেলকে ছাড়িয়ে যাবে। শিল্পীদের উনি যে সম্মান দেখান তা আমরা অতীতে দেখিনি।
আধুনিক গানের শিল্পী আলমগীর আলাউদ্দিন বলেন, গত তিন মাসে এ কেন্দ্রের অনেক অগ্রগতি, উন্নতি হয়েছে। বর্তমান মহাব্যবস্থাপক অত্যন্ত স্পষ্টবাদী। তার কারণেই প্রোগ্রামের মান, কেন্দ্রের পরিবেশ উন্নত হয়েছে।
অভিনেতা পঙ্কজ বৈদ্য সুজন নিজেকে ‘ক্ষুদ্র শিল্পী’ পরিচয় দিয়ে বলেন, গত তিন মাসে আমি সত্য সাহা ও শেফালী ঘোষ স্মরণে দু’টি অনুষ্ঠান করেছি এ কেন্দ্রে। আগে ৫-৬ মাসেও অনুষ্ঠানের চেক পেতেন না শিল্পীরা। এখন তাৎক্ষণিক পাওয়া যায়। আমরা চাই চট্টগ্রাম কেন্দ্রটি নিজের পায়ে দাঁড়াক। বিগত দিনে অনেক গোঁজামিল হয়েছে। এখন আমরা সত্যের জন্যে লড়ব, সুন্দরের পূজারী হবো। জাঁ-নেসার ওসমান যত বেশি দিন থাকবেন তত এ কেন্দ্র ভালো থাকবে।
নগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ বলেন, কিছুদিন ধরে এ কেন্দ্রে আসছি। শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট উপলক্ষে চট্টগ্রাম কেন্দ্রে একটি অনুষ্ঠান ধারণ করতে তিনজন সিনিয়র সাংবাদিক আসেন। তারা সাড়ে তিন ঘণ্টা থেকে চার ঘণ্টা বসেছিলেন। কারণ সেট তৈরি ও অনুষ্ঠান ধারণে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসহযোগিতা। কেন্দ্রের ভেতরে শিল্পী, কলাকুশলী, গুণীজনদের নানাভাবে অসহযোগিতা করা হচ্ছে। সেটের দায়িত্বে যারা থাকেন তারা একই সেটে সব অনুষ্ঠান ধারণ করেন। একই সেটে গান, নাচ, আলোচনা, বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ছয় ঘণ্টা সম্প্রচারে গেলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।
তিনি বলেন, বিটিভির চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সংবাদে চট্টগ্রামের মন্ত্রী, মেয়র, সংসদ সদস্যদের সংবাদ দেখানো হয় না। সরকারি দলের, জোটের অনুষ্ঠানের খবর দেখানো হয় না। এসব অনুষ্ঠানে ক্যামেরা পাঠানো হয় না। ক্যামেরা যায় সরকারি আমলাদের অনুষ্ঠানে।
শিল্পীদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে মন্ত্রী উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আঞ্চলিক জীবপ্রকৃতি, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, ভাষাগত বৈচিত্র্য তুলে ধরবে বিটিভির চট্টগ্রাম কেন্দ্র। সাম্প্রতিককালে কেন্দ্রটি ছয় ঘণ্টা সম্প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে।
শিল্পীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, পৃথিবী যতদিন থাকবে অভিযোগও থাকবে। সরকার এসব অভিযোগের সমাধান করবে।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বিটিভির চট্টগ্রাম কেন্দ্রের নিউজ স্টুডিও, এডিটিং রুম, টকশোর জন্য নির্মিত ক্রমা স্টুডিও, জেনারেল ম্যানেজারের কার্যালয় পরিদর্শন করেন। দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে মন্ত্রী একটি জামরুল গাছের চারা রোপণ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৬
এআর/আইএসএ/টিসি
** সিটিভি নিয়ন্ত্রণে নিতে চায় ‘হাওয়া ভবন সিন্ডিকেট’ !