কলকাতা: চাকরিপ্রত্যাশিদের মামলায় কারণে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে আদালতের নির্দেশে একের পর এক চাকরি বাতিল হচ্ছে অবৈধদের। এ ঘটনায় আবেগপ্রবণ হতে দেখা গেল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) আলিপুর (পুলিশ কোর্ট) আদালতের একটি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, কথায় কথায় লোকের চাকরি খাবেন না। কালও দু’জন আত্মহত্যা করেছেন। হঠাৎ করে চাকরি চলে গেলে সে খাবে কী? এটা রাজনীতির বিষয় নয়। দয়া করে রাজ্যের বদনাম করবেন না।
মূলত নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এসএসসি-র গ্রুপ-ডির পর এবার গ্রু-সি-তেও সদ্য ৮৪২ জনের চাকরি বাতিল করেছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এরা প্রত্যেকেই অবৈধভাবে নিয়োগ পেয়েছিলেন বলে দাবি কলকাতা হাইকোর্টের। এর আগেও অনিয়ম করে পাওয়া প্রায় তিন হাজার চাকরি বাতিল হয়েছে রাজ্যজুড়ে। শিক্ষাক্ষেত্রে এরাজ্যে এককথায় সীমাহীন দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ বিচারপতির।
তবে পরপরর চাকরি বাতিলের ঘটনায় এদিন বেশ খানিকটা আবেগপ্রবণ হতে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রীকে। তিনি বলেছেন, এখন রোজ কথায় কথায় ৩ হাজার চাকরি বাদ, ৪ হাজার চাকরি বাদ। নীচুতলার কেউ অন্যায় করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব, এটা আমারও চিরকালের স্বভাব। তবে কালও দু’জন আত্মহত্যা করেছেন। হঠাৎ করে চাকরি চলে গেলে সে কী খাবে? যারা অন্যায় করেছে অ্যাকশন নিন। আমার কোনো দয়া নেই তাদের জন্য।
মমতার অভিমত, চাকরি বাতিল হওয়া ছেলেমেয়েদর ফের নতুন করে সুযোগ দেওয়া হোক। এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী যুক্তি, ছেলেমেয়েদের সুযোগ দিন। দরকার হলে তাদের পরীক্ষা নিন। আদালত যেটা বলবে সেটা আমরা করব। দয়া করে চাকরি খাবেন না। এটা আমার মনের ভাবনা। কথায় কথায় লোকের চাকরি খাবেন না। এটা রাজনীতির বিষয় নয়। অন্য রাজ্যে তো এটা হচ্ছে না। এরাজ্যে কেন হচ্ছে?
তিনি আরও বলেন, আমি চিফ জাস্টিসকে এখানে পেলাম না। তবে আমার অনুরোধ, আমাকে আপনাদের পছন্দ না হতে পারে। আমার পার্টিকে আপনার পছন্দ নাও হতে পারে। আমরা সরকার এত মানবিক কাজ পরেও পছন্দ না হতে পারে। যা ইচ্ছা আমাকে দুবেলা গালি দিন। দরকার হলে মারুন আমাকে। তবে প্লিজ, দয়া করে রাজ্যটার বদনাম করবেন না। ছাত্র যৌবনের খাওয়ার কেড়ে নেবেন না। এবং এসব কেসে আমি মানবিক ভাবে সবার পাশে ছিলাম এবং থাকবো।
চাকরি বাতিল ইস্যুতে বামেদেরও এদিন একহাত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, জীবেন জেনেশুনে অন্যায় করি না। ক্ষমতায় এসে একটা সিপিএম ক্যাডারেরও চাকরি খাইনি। তোমরা কেন খাচ্ছ? দেওয়ার ক্ষমতা নেই, কাড়ছ কেন?’
মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে চাকরিপ্রত্যাশিদের হাইকোর্টের আইনজীবী তথা সিপিআইএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, মুখ্যমন্ত্রী অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের চাকরি যাওয়ার কারণে কাঁদছেন। কিন্তু, ৭৩০ দিন ধরে যোগ্য চাকরিপ্রত্যাশিরা রাতের পর রাত ধরনায় বসে আছেন। হকের চাকরি থেকে তারা বঞ্চিত। তাদের কথা কে ভাবে? আইন আনুযায়ী চাকরি দেওয়ার দায়িত্ব ওনার সরকারের। আদালতের বিচারপতি, আইনজীবীদের নয়। উনি ভণ্ডামি করছেন। ভাবছেন এভাবে বললে মানুষের মন গলে যাবে? মানুষ এত বোকা নন।
বামনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন অত্যন্ত অসহায়। কারণ, চারিদিকে তৃণমূল নেতারা চাকরি পেয়েছেন টাকার বিনিময়। তাদের চাকরি চলে যেতে যেভাবে তারা প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন। সে প্রেক্ষিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ ধরনের কথা বলা ছাড়া নিজের পিঠ বাঁচানোর উপায় নেই। যারা এতদিন ভুয়া চাকরি পেয়ে বিয়ে করেছেন, সংসার করছেন, পরিবার হয়েছে তাদের এখন হঠাৎ চাকরি চলে গেলে বিপদে পড়ছেন। চাকরি চলে যেতে তারা এখন কি খাওয়াবে এটা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেই সমস্যা তৈরি হয়েছে। জানিয়ে, মুখ্যমন্ত্রীর এত চিন্তা। আচ্ছা মুখ্যমন্ত্রী কেন এটা ভাবছেন না যারা দুবছরের বেশি সময় ধরে কলকাতার বুকে যোগ্য চাকরি প্রত্যাশীরা ধরনায় বসে আছেন। কারোর বাবা অসুস্থ, কারো পরিবারের চলার মত ক্ষমতা নেই, দুমুঠো খাবার তুলে দিতে পারছে না। তাদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী চোখের পানি পড়ে না?
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২৩
ভিএস/এসএ