কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গসহ সারা ভারতে আবারও থাবা বসিয়েছে সোয়াইন ফ্লু (এইচ১এন১ ভাইরাস)। গত কয়েকদিনে পশ্চিমবঙ্গে এ রোগে আক্রান্ত প্রায় ১০ জনের মধ্যে সরকারিভাবে দুইজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।
এ নিয়ে গোটা ভারতে ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত ২১৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলো। আর ২০১৫ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত এই ফ্লুতে মৃত্যু হয়েছে ৪০৭ জনের।
আরও শত শত মানুষের শরীর পরীক্ষা করে এ ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। দেশটিতে এ ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় সরকার এটি মোকাবেলায় কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
এ ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের অধিকাংই রাজস্থান, গুজরাট, তেলেঙ্গানা ও দেশটির রাজধানী দিল্লির অধিবাসী বলে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে। এসব এলাকায় মেডিকেল টিমকে পরিস্থিতি মূল্যায়ন ও মোকাবেলায় সতর্ক ও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
গত এক মাসেরও কম সময়ে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজস্থানে ৮১ জন, গুজরাটে ৭১ জন, তেলেঙ্গানায় ৩০ জন, কর্নাটকে ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া দিল্লি, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা ও পশ্চিবঙ্গেও আক্রান্ত হয়ে বেশ কয়েকজন মারা গেছে।
পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলায় এক নারীর সোয়াই ফ্লুতে মৃত্যু হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক মলি দে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এখন পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের সব জেলা থেকে তথ্য এসে না পৌঁছুলেও সোয়াই ফ্লু মোকাবেলায় সরকার প্রস্তুত আছে।
এ রোগ শূকর থেকে উদ্ভুত হলেও এখন এটি মানুষেরই রোগ। কাশি ও হাঁচিতে এর বিস্তার ঘটে। বায়ুবাহিত ভাইরাস হওয়ায় আক্রান্তদের সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে দ্রুত। এই ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তাররা বলছেন, এক্ষেত্রে এন্টি ভাইরাল ওষুধ কোনো কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে না।
গত দুই মাসেরও কম সময়ে হঠাৎ করেই ভারত জুড়ে সোয়াইন ফ্লু’র এমন ব্যাপক প্রাদুর্ভাবের কারণ ও এ ভাইরাস মোকাবেলার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে করছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ মহামারী ঠেকাতে মেডিকেল টিম প্রস্তুত ছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখছে তারা।
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব একে পান্ডা এক বিদেশি সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, যথাযথ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে হতাহতের সংখ্যা কমানোর জন্য যে প্রস্তুতি ও মেডিকেল টিম দরকার তেমন ব্যবস্থা আমরা নিতে পারিনি। তবে এরই মধ্যে হাসপাতালগুলোতে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সোয়াইন ফ্লু’র উদ্ভব:
২০০৯ সালে প্রথম মেক্সিকোতে সোয়াইন ফ্লু’র আবির্ভাব ঘটে এবং দ্রুত সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও গবেষকরা এইচ১এন১ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের দ্রুত প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে সতর্ক করে দেয়। কিন্তু পরবর্তী বছর এ রোগের প্রাদুর্ভাব কমে যায়।
লক্ষণ ও চিকিৎসা:
সাধারণ সিজনাল জ্বরের মতোই এ রোগের লক্ষণ। যেমন, কাশি, গলা ও শরীর ব্যথা, শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া। কারও কারও বমি বমি ভাব ও পাতলা পায়খানা হতে পারে। শিশু, গর্ভবতী নারী ও বৃদ্ধরা এ ভাইরাসে সহজে আক্রান্ত হয়।
ফ্লু’র তীব্রতা বাড়লে রোগীর শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা বা ঠোঁট নীল হতে দেখা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এ ধরনের লক্ষণের ক্ষেত্রে দুই দিনের মধ্যে অ্যান্টি ভাইরাল ড্রাগ নেওয়া উচিত।
সোয়াইন ফ্লু’র চিকিৎসা ও প্রতিরোধে টেমিফুল (Tamiflu) ও রিলেঞ্জা (Relenza) এ দু’টি ওষুধই সাধারণত দেয়া হয়। কিন্তু ওয়েব এমডি’র তথ্যানুযায়ী, একটি বার্ষিক ফ্লু ভ্যাকসিন এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে সবচেয়ে ভাল কাজ করে থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ভারতীয় পেডিয়াট্রিক্স একাডেমির (আইএপি) সুপারিশ অনুযায়ী, যারা এ রোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তাদের ট্রিভেলিন্ট (trivalent) ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন নিতে বলেছে। বাজারে বিভিন্ন কোম্পানি এ ভ্যাকসিন বিপনন ও বিক্রি করছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, ফ্রেব্রুয়ারি ১২, ২০১৫