ঢাকা: দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী আরবিন্দ কেজরিওয়ালকে সনাতন রাজনৈতিক ধারাতেই কাজ করতে হবে বলে মনে করছেন দেশটির রাজনীতি বোদ্ধারা। তাদের মতে, নিরঙ্কুশ জয় পেলেও ভারতের রাজধানী দিল্লি যে প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হয় তা রাতারাতি বদলে ফেলার কোন ক্ষমতাই নেই কেজরিওয়ালের।
দিল্লিতে কর্মরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরাও অনেকটা একই মত পোষণ করছেন।
শহরের ডিপ্লোম্যাটিক জোন খ্যাত চানক্যপুরিতে অবস্থিত এক কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, আমরা গভীরভাবে ভারতের এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছি। ভারতের গণতন্ত্র খুব শক্তিশালী এবং তার চেয়েও শক্তিশালী কেন্দ্রীয় আমলাতন্ত্র।
অনেকটা যেনো এ ধারণারই প্রতিধ্বনি পাওয়া গেলো শনিবার দুপুরে দিল্লির রামলীলা ময়দানে। মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়ে কেজরিওয়াল বললেন, ২৪ বা ৩০ ঘণ্টায় লোকপাল বিল পাশ করা সম্ভব হবে না। সরকারের বিভিন্ন কাজে কিছু নিয়ম নীতি মেনে চলতে হয়। তাছাড়া আমার দলকে দিল্লির জনগণ ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত করেছেন।
কার্যত বেশ কিছু বিষয়ে অঙ্গীকার করে কেজরিওয়াল শুধু যে নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছেন তাই নয়, ৭০টির মধ্যে ৬৭টি আসনেই জয় পেয়েছে তার দল।
এ জয়ের প্রতিক্রিয়ায় প্রথম যে শব্দটি তিনি বলেছেন তা হল- ভয় জাগানিয়া জয়।
বুঝতে অসুবিধা হয় না, তার এই ভয় হলো, নিরঙ্কুশ জয়ে জনমনে তৈরি হওয়া অসীম প্রত্যাশা পূরণের চাপ।
কেজরিওয়াল প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সবার জন্য বিনামূল্যে মাসে ২০ হাজার লিটার পানি ঠিকমতো সরবরাহের ব্যবস্থা করবেন, বিদুৎ বিল অর্ধেকে নামিয়ে আনবেন, দিল্লিকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যদা পাইয়ে দেবেন, সমস্থ দিল্লি ওয়াই-ফাই এর আওতায়া আনবেন, ২০টি কলেজ প্রতিষ্ঠা করবেন, নারীদের নিরাপত্তা ছাড়াও ভারতের রাজধানী থেকে দুর্নীতি সমূলে উৎপাটন করবেন।
কিন্তু রাতারাতি এতো কিছু পালটে ফেলা সম্ভব নয়। কেননা দিল্লি সম্পূর্ণ রাজ্য নয়, অর্ধরাজ্য। ১৯৯৩ সালে এই রাজ্য প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর গত ১৫ বছর ধরে কংগ্রেসই ছিলো ক্ষমতায়।
সে সময় বিজেপি পূর্ণ রাজ্যের দাবি তোলায় তারাও বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে আছে বটে, কিন্তু তারপরও কেজরিওয়ালের জন্য কাজটা খুব একটা সহজ হবে না।
এর প্রধান কারণ দিল্লিতে যে পুলিশ রয়েছে তা সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করে কেন্দ্রীয় সরকার।
প্রায় ২৫ হাজার পুলিশ বিভিন্ন ভিআইপি কর্মকাণ্ডে জড়িত। আর কেজরিওয়াল চান ভিআইপি সংস্কৃতি দিল্লি থেকে তুলে দিতে।
দিল্লি পূর্ণ রাজ্য না হওয়ার কারণে বিদেশি কোন দেশ থেকে অর্থ নিয়ে বিনিয়োগেরও সুযোগ নেই কেজরিওয়ালের। তাই কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতা ছাড়া তার চলা কঠিনই বটে।
কেননা ভ্যাট, রাজ্য কর ও রেভিনিউ ছাড়া দিল্লির আয় নেই বললেই চলে। গত বছর দিল্লির বাজেট ছিল মাত্র ৩৬ হাজার ৭৬৬ কোটি রুপি। এর মধ্যে শুধু পুলিশের পেছনেই বাজেট ছিল সাড়ে ৫ হাজার কোটি রুপি।
এর বাইরে দিল্লিকে ৭০০ কোটি রুপি দিয়েছে কেন্দ্র। এখানে রাজ্য সরকারকে ৯০ শতাংশ নিজস্ব আয় করতে হবে। কিন্তু দিল্লি নিজস্ব কিছু উৎপন্ন করে না। তাই রাজধানীবাসীর ওপরই ট্যাক্স বসবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
কেজরিওয়াল বিদ্যুতে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত ২ রুপি এবং ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত ২.৯০ রুপির যে দর ঠিক করেছেন তা বাস্তবায়ন করতে রাজ্যকে বছরে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা খরচ করতে হবে। তারওপর সবাইকে বিনামূল্যে প্রতিমাসে ২০ হাজার লিটার পানি দিতে গেলে বাড়তি খরচ হবে ৩৫০ কোটি রুপি। দিল্লির বাজেটের ১১ শতাংশই চলে যাবে এসবের ভর্তুকিতে।
আইন-শৃঙ্খলা ও নারীদের সুরক্ষার জন্য প্রতিশ্রুত ১৫ লাখ সিসি ক্যামেরা লাগাতে হলে প্রায় ১০০ কোটি রুপি ও বিনামূল্যে ওয়াই ফাই দিতে আরো ২০০ কোটি রুপি খরচ করতে হবে কেজরিয়ালকে।
তবে এখানেই শেষ নয়। ওয়াই-ফাই পাওয়া গেলেও তা হবে নিয়ন্ত্রিত। যেমন ইমেল, ফেসবুক, টুইটার ও হোয়াটসঅ্যাপ সুবিধা কেবল উন্মুক্ত স্থানে পাওয়া যাবে, বাসা-বাড়িতে নয়।
এমন পরিস্থিতিতে তাই কেজরিয়ালকে নিরঙ্কুশ জয় পাইয়ে দেওয়া দিল্লিবাসী তার প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য কতদিন অপেক্ষা করে সেটাই দেখার বিষয়।
বাংলাদেশ সময়: ০০৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৫