ঢাকা, শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ মে ২০২৪, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

যৌথ পরিবারকে ফিরিয়ে আনছে কলকাতার আবাসনের পূজা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৫
যৌথ পরিবারকে ফিরিয়ে আনছে কলকাতার আবাসনের পূজা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কলকাতা: কমতে কমতে এখন প্রায় দেখাই মেলা ভার যৌথ পরিবারের। জীবনে পরিবর্তনের ছোঁয়া, পেশাগত প্রয়োজনসহ নানা কারণে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় যৌথ পরিবারের সংখ্যা বর্তমানে খুবই কম।

সমাজ বিজ্ঞানীরা মনে করেন, সময়ের সঙ্গে ব্যক্তি সম্পত্তির ধারণা সমাজের বুকে প্রবল থেকে প্রবলতর হওয়ার ফলে জন্ম হচ্ছে একক পরিবারের।

সামাজিক বা অর্থনৈতিক, কারণ যাই হোক বাস্তব পরিস্থিতির নিরিখে এখন যৌথ পরিবারের উঠোন ছেড়ে মানুষ বাসা বাঁধছে ফ্ল্যাটের চার দেয়ালের মধ্যে। ‘মাইক্রো ফ্যামিলি’তে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে সবাই। তবে উৎসবের দিন ঠিকই মনে পড়ে যায় ফেলে আসা দিনগুলোর কথা। যে যৌথপরিবারকে বিদায় জানিয়ে মানুষ একক পরিবারে আশ্রয় নিচ্ছে, সেই দিনগুলোই যেন সোনার খাঁচায় বন্দি করে রাখার দিন বলে মনে হয়। সেসব দিনে সবার সঙ্গে খুশি ভাগ করে নেওয়ার মধ্যেই যেন বেড়ে যেতো উৎসবের আনন্দ।

‘নীড় ছোট ক্ষতি নেই, আকাশ তো বড়’- এই গানের মতোই হারিয়ে যাওয়া যৌথ পরিবারের পূজা ফিরে এসেছে কলকাতায়। আর এই ফিরে আসা সম্ভব হয়েছে আবাসনের পূজার মাধ্যমে। আবাসনের পূজার মধ্যেই চার দেয়ালের সীমাবদ্ধতাকে ভেঙে ঘরের বাইরের বৃহত্তর আকাশকে খুঁজে নিয়েছেন এর বাসিন্দারা।

কলকাতার বেশিরভাগ আবাসনেই পূজার আয়োজন করা হয়। আয়োজন করেন এই আবাসনের বাসিন্দারাই। প্রতিমা আনা থেকে শুরু করে বিসর্জন পর্যন্ত সবকিছুই নিজেদের হাতে পরিচালনা করেন তারা। লক্ষণীয় বিষয়, এসব আবাসনে শুধু বাঙালি বা হিন্দুরা নন, থাকেন বিভিন্ন রাজ্যের, বিভিন্ন ধর্মের মানুষ। এমনকি পেশার কারণে কলকাতা বসবাসরত বিদেশিরাও এসব আবাসনে থাকেন। তারাও মিশে যান উৎসবে।

কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা আবাসনগুলোর পূজা আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পূজার চারদিন প্রতিটি আবাসিকের বাড়িতে চলে আবশ্যিক ‘অরন্ধন’। এমনকি বাড়িতে অতিথি আসলে তারাও সামিল হন মণ্ডপের খাওয়াদাওয়ায়।

এক সময় পূজার দিনগুলোতে পশ্চিমবঙ্গে পাড়ার যুবকদের মধ্যে নাটকের চল ছিল। আবাসনে নাটকও ফিরিয়ে আনা হয়েছে। পূজার আগে টানা তিনমাস চলে রিহার্সাল। উৎসব শুরু হতেই মঞ্চে ওঠে আবাসিকদের অভিনীত এসব নাটক। নাটকের পরিচালক থেকে অভিনেতা সবাই নির্বাচিত হন তাদের মধ্যে থেকেই। সঙ্গে থাকে অন্যান্য সাংস্কৃতিক উৎসবও। অনেক সময় বিখ্যাত শিল্পীদেরও আমন্ত্রণ জানান হয়।

পূজার ভোগ রান্না থেকে শুরু করে অতিথি-অভ্যাগতদের সামাল দেওয়া পর্যন্ত সবই করেন আবাসিকরা। দক্ষিণ কলকাতার ‘গনপতি এনক্লেভ’র বাসিন্দা সমরেশ রায় জানালেন, হারিয়ে যাওয়া দেশের বাড়ির পূজা তিনি খুঁজে পান আবাসনের পূজা উৎসবে। বিদেশে থাকায় সন্তানরা শারদ উৎসবে আসতে পারে না। আবাসনের পূজার মাধ্যমে এই অবসরপ্রাপ্ত রায় দম্পতি খুঁজে নিয়েছেন নিজেদের বৃহত্তর পরিবার।

শ্রীমতী রায় জানালেন, পূজার কাজ নিয়ে এই ক’দিন এতোটাই ব্যস্ত যে, গত এক সপ্তাহ ধরে বাড়িতে রান্না করার সময়ই পাচ্ছেন না। অগত্যা ‘হোম ডেলিভারি’র মাধ্যমে বাইরে থেকে খাবার আনিয়ে নিতে হচ্ছে।

দক্ষিণ কলকাতার অপর এক আবাসন ‘ডায়মন্ড সিটি’র বাসিন্দা সোমেন কর্মকার জানালেন, তাদের আবাসনের পূজার মূল মন্ত্রটাই হলো জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই একসঙ্গে উৎসবে মেতে ওঠা। এটাই তাদের পূজার ‘থিম’।

বাংলাদেশ সময়: ০০২৪ ঘণ্টা, ১৯ অক্টোবর, ২০১৫
ভি.এস/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।