কলকাতা: উত্তরের শোভাবাজার থেকে দক্ষিণের বেহালা কিংবা পূর্বের রাজারহাট থেকে পশ্চিমের মশেহতলা; কলকাতার একেকটি মণ্ডপে একেকটি ‘থিম’। তৃতীয়ার রাত থেকে শুরু হয়ে সপ্তমীর রাতে শারদোৎসব তার যৌবনে পড়েছে।
পথের পাশের আলোর নদী আর শহরের বহুতল থেকে নেমে আসা আলোর ঝরনা যেন শহর কলকাতাকে প্লাবিত করেছে উজ্জ্বলতার বাধভাঙা বন্যায়। মণ্ডপের ভিতর কোথাও কাশ ফুলের মাঠে ‘পথের পাঁচালি’, বা ইতিহাসের গর্ভ থেকে উঠে আসা প্রাচীন মন্দির আবার কোথাও শাস্ত্রীয় নৃত্য শৈলীর বিভিন্ন মুদ্রা, সুর, ছন্দ আর বর্ণে উৎসবের রঙে জারিত করেছে তিলোত্তমাকে।
একদিকে বিভিন্ন সংগঠনের দেওয়া পুরস্কার, জনতাকে সামলাতে স্বেচ্ছাসেবক আর পুলিশের নাজেহাল অবস্থা, মাইকে নিয়ম শৃঙ্খলা মানার জন্য সংগঠকদের আকুল অনুরোধ আর এর মধ্যেই অতিউৎসাহীদের লাইন টপকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা। এসব কিছুকে ছাপিয়ে যেটা সামনে এসেছে সেটা একমাত্র ‘জনপ্লাবন’।
পূজা শুরুর আগেই রীতিমতো কলকাতার পূজার ম্যাপ নিয়ে বন্ধুদের সাথে পরিকল্পনা সেরে ফেলেছিল কলকাতার সাউথ পয়েন্ট বিদ্যালয়ের ছাত্র অভীক মিত্র।
কিন্তু নতুন জুতোয় পায়ে ফোস্কা পড়ায় পরিকল্পনায় কিছুটা বাধা পড়ে। হার না মানা মনোভাব নিয়ে পায়ে ব্যান্ডেজ জড়িয়ে পুরানো জুতো পরেই সে আবারও রাস্তায় নেমেছে। পায়ে অল্প ব্যথা আছে কিন্তু পূজার আনন্দে সেই ব্যথা ভুলে গেছে।
শুধু যে তরুণরা তাই নয়, ভিড় পেরিয়ে প্রবীণদের জন্য বরাদ্দ রাখা বিশেষ গেট দিয়ে মণ্ডপে প্রবেশ করছেন বহু প্রবীণ-প্রবীণা। এই রকমই কলকাতার এক প্রবীণা রাধারানী রায় বাংলানিউজকে জানান, পূজার একটা দিন অন্তত প্রতিমা দর্শন না করতে পারলে মন খারাপ হয়ে যায়। তাই গাড়ির বন্দোবস্ত করে কয়েকটি বিখ্যাত মণ্ডপে তিনি হাজির হন।
সপ্তমীর সন্ধ্যায় কলকাতার বিভিন্ন মণ্ডপে গিয়ে দেখা গেল অন্তত পাঁচশো মানুষের লাইন, কোথাও সেটা হাজার আবার কথাও সেটা প্রায় তিন-চার হাজার মানুষের লাইনে গিয়ে ঠেকেছে। গোটা কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তের পূজা মণ্ডপ ঘুরে বোঝা গেল, থিমের নানা রকমের ভিন্নতা থাকলেও আসলে কলকাতার পূজার একটাই থিম- জনজোয়ার।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৫
ভিএস/এমজেএফ