কলকাতা থেকে: হলিউডের ছায়াছবি টার্মিনেটর মানেই লোহা-লক্কর, মেশিনের যুদ্ধ। তবে পুরনো দিনের মজবুত লোহার ভেতর নিজেকে আবিষ্কার করা যায় বনগাঁও থেকে শিয়ালদহের এই ট্রেনে।
প্রায় ২০ বগির এ ট্রেন পুরোটাই লোহার। আমাদের বগির ভেতরে চারপাশে চোখ ঘুরিয়ে টিউব লাইটের কাঁচের অংশ বাদে লোহা ছাড়া অন্য কিছু চোখে পড়ল না। তবে সেই লাইটও শক্ত লোহার খাঁচায় বন্দি করে রাখা হয়েছে। ফ্যানগুলোরও একই দশা। চোরের প্রাদুর্ভাব আছে মনে হয়।
ছিট না বলে লোহার বেঞ্চই বলা ভাল আসনগুলোকে। আর লাইনকে লাইন লোহার হাতল। আমাদের পাশে বসা সুদীপ বললেন, আজ বন্ধ বলে ভিড় কম। তা না হলে বনগাঁও থেকেই ভিড় হয়ে যায় লোকাল ট্রেনগুলোতে।
বুধবার সকাল। পেট্রাপোল থেকে বনগাঁও জংশনের ভাড়া অটোতে ২৫ রুপি। এরপর দমদমের টিকিট কাটার খরচ ১৮ রুপি।
একজনকে জিজ্ঞাসা করতেই জানালেন, ২ নং প্লাটফর্মে থেমে থাকা ট্রেনটাই শিয়ালদহ যাবে। এর আগেই দমদম স্টেশন।
ওভারব্রিজ পার হয়ে ২ নং প্লাটফর্মে ট্রেনটার একটা কামরায় তাকাতেই ভেতর থেকে যেন পেট গুলিয়ে উঠল। নোংরা মেঝেতে কে যেন বমি করে রেখেছে। দ্রুত মুখ সরিয়ে সামনে হাঁটলাম।
সকালের নরম রোদ একটু আগের শীত ভাবটাকে তাড়িয়ে দিচ্ছে। চায়ের কাপগুলোতে ধোঁয়া উড়ছে। মানুষগুলোর যেন অলস সময়, একে অপরকে টিপ্পনি কাটছে। আবার ব্যস্ততার ভাব নিয়েও কাঁধে ব্যাগ নিয়েও দৌড়াচ্ছে কেউ কেউ।
প্রতি আধঘণ্টা পরপর বনগাঁও থেকে শিয়ালদহ যায় ট্রেন। এই ট্রেনগুলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনের মতোই।
একটি কম্পার্টমেন্টের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় চোখ আটকে গেলো। বেশ স্পষ্ট করেই নির্দেশনা লেখা রয়েছে, 'পুরুষ প্রবেশ নিষেধ'। হুম এটা শুধুই মেয়েদের কম্পার্টমেন্ট। তাই বলে যে অন্য কম্পার্টমেন্টগুলোতে নারী যাত্রী নেই, তা কিন্তু নয়। নারীদের জন্য আলাদা কম্পার্টমেন্ট ভারতের এগিয়ে যাওয়াকে নাকি পশ্চাৎপদতাকে নির্দেশ করে সেটা যুক্তিতর্কের বিষয়।
হাবড়া স্টেশন পেরুনোর পর থেকেই বাড়তে থাকে ভিড়। সবগুলো সিট পূর্ণ হয়ে ততক্ষণে গেটেও দাঁড়িয়ে গেছে মানুষ। লোহার হাতলগুলো আর খালি নেই।
এতক্ষণ যারা আয়েশ করে দরজায় দাঁড়িয়ে বা জানালার পাশে বসে ধুমপান করছিল, তারা এখন খোশগল্পে ব্যস্ত।
তেল লেপ্টে সিঁথি করা একজনের আজো অফিস ছিল। বারাসাতে কম্পার্টমেন্টে উঠেই অফিসের উধ্বর্তনদের গালাগাল দিতে লাগলেন। অনেকেই এ ব্যক্তিকে প্রথমবারের মতো দেখলেও বেশ সায় দিয়ে যাচ্ছেন।
বাংলার সমতল ভূমি একই ধরনের। তাই সীমানা পার হলেও ধান ক্ষেত, আখ ক্ষেত, নারিকেল গাছের বাগান এসবই চোখে পড়ে। মানুষগুলোর মধ্যেও নেই কোন মৌলিক পার্থক্য।
প্রায় দু ঘণ্টার ভ্রমণ। দমদম স্টেশন লেখাটা চোখে পড়তেই অজান্তে ঠোঁট বিড়বিড় করে অঞ্জণ দত্তের গান আওড়ালাম, 'দমদমে নামলে তোমারি বাড়িতে কফি খায় ইমরান খান...'।
নাহ, স্টেশনে নেমে কোন কফি শপ পাওয়া গেল না। আর কারো বাড়িতে কফি খেতে যাওয়ার শখও চাপাই থাক।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৫
এমএন/জেডএম
** ভাত-ইলিশের প্যাকেজ ১২০ টাকা