উড়িষ্যা থেকে: লিঙ্গরাজ মন্দিরে ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশের অনুমতি নেই। অন্য মন্দিরগুলোর মতো জুতা নিয়েও ঢোকা যায় না অনেকখানি।
নাম লিঙ্গরাজ মন্দির। উড়িষ্যার রাজধানী শহর ভুবনেশ্বর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরত্ব। সারাবিশ্বের পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রে রয়েছে এই মন্দির। এটিকে বলা যেতে পারে মন্দিরের মন্দির, যেমন দেবতাদের দেবতা। বিশেষত ভ্রমণের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক পর্যটনকেন্দ্রগুলো যাদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব পায়, তারা তো অবশ্যই একবার হলেও আসেন এখানে।
বাইরে মোবাইল, ব্যাগ সব জমা দিয়ে এই মন্দিরে ঢুকলে সবার প্রথমে চোখে পড়বে নাগেসওয়ান মন্দির। এরপর একে একে প্রায় শত মন্দির। এখান থেকেই বোঝা যায় কেন ভুবনেশ্বরকে বলা হয় মন্দিরের শহর।
এ শহরের অলিতে-গলিতে রয়েছে আরও অনেক মন্দির। এমনকি রাস্তার বাঁকে বাঁকে মন্দির স্থাপনা। কেউ যদি ইচ্ছে করেন, ভুবনেশ্বরের সব মন্দির ঘুরে দেখবেন, হলফ করে বলতে পারি- সেটি এক বছরেও সম্ভব করা কষ্ট হবে! কারণ এখানে গাছের গোড়াতেও রয়েছে মন্দির। এখানকার মানুষও বেশ ধর্ম-কর্মের সঙ্গে যুক্ত।
আবার ফিরি লিঙ্গরাজ মন্দিরে। এই রহস্যের মন্দিরের প্রেক্ষাপটে রয়েছে বহু যুগের অতীত গাঁথা৷ মন্দিরে প্রবেশের পর এদিক-ওদিক সর্বত্রই সেই অতীতের বর্ণময় দিনগুলোর ছায়া চোখে পড়ে৷ অপরূপ মূর্তি, ভাস্কর্যের অনন্য নিদর্শনে সজ্জিত ইতিহাসের সাক্ষী। প্রসঙ্গত, শিব ঠাকুরের অন্য নাম ‘হরিহর’–তারই অধিষ্ঠান ভুবনেশ্বরের অন্যতম প্রাচীন এই মন্দির।
একদিকে, প্রাচীনতা; অন্যদিকে বিশাল আকৃতি৷ কলিঙ্গ যুগের স্থাপত্যে মহীয়ান লিঙ্গরাজ মন্দির আজও পুরোটা ইতিহাসের সুরভিতে আচ্ছন্ন৷ উড়িষ্যা সরকারের পর্যটন বিভাগ যথেষ্ট যত্ন ও আন্তরিকতার সঙ্গে রক্ষণাবেক্ষণ করছে। যার ফলে মন্দিরটির গঠন সৌন্দর্যের পাশাপাশি বজায় রয়েছে প্রাচীনতাও। ভেতরে কর্মরত বহু মানুষ৷ মন্দিরেরই নানা কাজ করছেন তারা৷ দর্শনার্থীরাও আসা-যাওয়া করছেন৷ ভিড় আছে, তবে সুশৃঙ্খল৷ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, ফুল-ধুপ-ধুনোর গন্ধে বেশ শান্ত এক পরিবেশ।
সোম বংশের রাজা যযাতি (১০২৫-১০৪০) এর প্রতিষ্ঠা করেন ১১ শতকে৷ উচ্চতা ১৮০ ফুট৷ নানা পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের মধ্য দিয়ে আজকের চেহারা নিয়েছে লিঙ্গরাজ টেম্পল, যা নতুন সময়ে দাঁড়িয়েও প্রাচীনকে কুর্নিশ জানাবার কথা বলে৷
সপ্তাহের সব দিনই খোলা থাকে এই মন্দির–সকাল ৫টা থেকে রাত ৯টা৷
আমাদের ছয়জনের দল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব নিরোধ চন্দ্র মন্ডলের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের এই দলে আরও রয়েছেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সেকেন্ড সেক্রেটারি মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-পরিচালক মাকসুদুর রহমান, বাংলাদেশ ফ্রেড ফরোয়ারডার্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক (পোস্ট অ্যান্ড কাস্টমস) সাইদ মো. বখতিয়ার এবং শ্যামলী পরিবহনের ম্যানেজার নয়ন কুমার রায়।
জুতা খোলার কষ্টে সবার মন্দিরে প্রবেশ করা হলো না। নিরোধ দা, নয়ন দা আর রিপোর্টার হিসেবে কৌতুহলের বশে আমার মন্দিরে প্রবেশ।
মন্দিরের ভেতরে আরও অনেকগুলো মন্দিরের অবস্থান। ভেতরে না ঢুকলে বোঝা যেতো না। সব দেবতাকেই স্থান দেওয়া হয়েছে এখানে।
ইয়ামা রাজা, সাবিত্রী, ভিদ্দানাথ, ভিবাকুরমা, জগন্নাথ, সোমনাথ, সিভাকল, পারবতি, সীতা নারায়ন, নান্দি, দূর্গা- কার মূর্তি নেই এখানে, সবাইকেই আগলে রেখেছে শ্রী লিঙ্গ মন্দির।
শ্রী লিঙ্গ মন্দিরের সব মন্দির দেখা মনে হয় না একদিনে সম্ভব। তবে নিরোধ দা বললেন, এখানে ব্রাহ্মণদের খুব খাতির, দেখতেই পাচ্ছো।
দিনটি শুধুই মন্দির দেখার। শুরুটা রাজারানি মন্দির থেকে। এটি এগারো শ’ শতকে তৈরি হয়। আকারে ছোট হলেও কিন্তু বেশ সাজানো। রাজারানি নামটি উৎপত্তি হয়েছে বিশেষ ধরনের পাথর থেকে। যেটি স্থানীয় রাজারানী নামে পরিচিত। ওই পাথর দিয়েই মন্দিরটি নির্মাণ করা। এটি দেখতে সেন্ট্রাল ইন্ডিয়ান মন্দিরের মতোই। এর অসাধারণ নির্মাণ শৈলী আকর্ষণ করে সবাইকেই। সার্ক দেশের নাগরিক হিসেবে ৫ রুপিতেই প্রবেশ করি আমরা।
এরপর ভ্রামেসভারা মন্দির। রাজারানি মন্দির থেকে অটোতে ১০ মিনিটের পথ। এখানে প্রবেশে কোনো মূল্য নেই। হয়ত এ কারণেই রাজারানি মন্দিরের মতো কপোত-কপোতির দেখা মেলে না। মন্দিরের ভেতরে যজ্ঞ চলছিল দুপুরে। তবে ছবি তুলতে নেই কোনো বাঁধা।
এরপর অনন্ত বাসুদেব টেম্পল, অষ্টশম্ভু টেম্পল, ব্রহ্ম টেম্পল, বিন্দু সরোবর, ইস্কন মন্দির, শ্রী রাম মন্দিরসহ যত মন্দির রয়েছে তার নাম লিখলেও এক হাজার শব্দে শেষ হবে না।
বাংলাদেশ সময় ০৭৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৫
এমএন/আইএ
** ওড়িশায় বিবিআইএন র্যালির উদ্বোধন
** পুরির বাতাসে....
** ১৯ দিনে ৩ দেশে ৪২২৩ কিলোমিটার মোটর র্যালি
** বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল মৈত্রী মোটর র্যালিতে মাজেদুল নয়ন
** আই.আই..আই...চেন্নাই এক্সপ্রেস!
** রামহরি মিস্ত্রী লেনের কথা
** রাস্তায় দাঁড়িয়ে স্যান্ডউইচ আর ভেলপুরি
** নিউমার্কেটে হ্যাপি দিওয়ালি
** পুরুষ প্রবেশ নিষেধ
** ‘আমি সীমানায় বিশ্বাসী নই’