ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

জৈনসূত্র গ্রন্থেও লেখা আছে জিলাপি-বৃত্তান্ত! 

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৭
জৈনসূত্র গ্রন্থেও লেখা আছে জিলাপি-বৃত্তান্ত!  জিলাপি-বৃত্তান্ত

কলকাতা:  জৈনসূত্র (জৈন ধর্মের প্রাচীন বই) অনুযায়ী একটি বিশেষ অংশে জিলাপির বর্ণনা পাওয়া যায়। সেখানে লেখা আছে মিষ্টি রস বিশিষ্ট গোলাকৃতি, চক্রাকার প্যাঁচবিশিষ্ট ভাজা সুস্বাদু এই খাদ্যের কথা।

বাঙালিকে জিলাপি চিনিয়ে দেওয়া নেহাতই বাতুলতা! এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া যাবে না যে জিলাপি খেতে ভালবাসে না।

জিলাপি এমন একটি মিষ্টান্ন যাতে কামড় দেওয়ামাত্র স্নায়ুকোষগুলিতে এক বিশেষ ভালোলাগার উপলব্ধি ছড়িয়ে পড়ে।

ঈদ বা রমজানের সময় জিলিপি একটি গুরুত্বপূর্ণ রসনাতৃপ্তিকর খাবার হিসেবে ঘরেঘরে বিরাজ করে। গরম জিলিপি সহযোগে প্রাত:রাশ পুরো দিনটাকে একটি আলাদা মাত্রা দিতে পারে। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোয়। তবে মিষ্টি হিসেবে জিলিপির কথা যে শুধু জৈন সূত্রে উল্লেখ আছে, শুধু তেমনটি নয়।

ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন পুস্তকগুলি ঘাঁটলে দেখা যায়, ১৫শ শতাব্দী নাগাদ সংস্কৃত ভাষার পুথিতে ‘কুণ্ডলিকা’ এবং ‘জালাভালিকা’ নামে দুটি মিষ্টির নাম পাওয়া যায়। গবেষকরা জানাচ্ছেন, ‘কুণ্ডলিকা’ এবং ‘জালাভালিকা’ আসলে জিলিপিরই অন্য নাম।  

দুই বাঙলার যেকোনো মেলায় জিলিপি যুগ যুগ ধরে সগর্বে নিজের জায়গা ধরে রেখেছে। মেলায় গিয়ে গরম জিলিপির স্বাদ নিতে লোভ জাগে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। সেটা যদি আবার চিকন জিলাপি হয় তাহলে তো আর কথাই নেই!

তবে শুধু ভারত বা বাংলাদেশে নয়, গোটা বিশ্বে বিশেষ করে এশিয়ায়, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে নানা নামে জিলিপি পাওয়া যায়। ইরানে এর নাম জালাবিয়া, মালদ্বীপে জিলিপি, তিউনিসিয়া, লিবিয়া এবং আলজেরিয়াতে জিলিবিয়া এবং নেপালে একে বলা হয় জেলি।

একবার জিলিপি তৈরির পদ্ধতির দিকে নজর ফেরানো যাক। প্রথমে ময়দার সাথে মেশান হয় সামান্য কিছুটা ছোলা বা বুটের গুড়ো। আবার কোথাও ভুট্টা বা চালের গুড়ো মেশানো হয়ে থাকে। অনেকে ক্ষেত্রে আবার মাসকলাই ডালের গুঁড়ো ব্যবহার হয়ে থাকে। এরপর তার সঙ্গে মেশানো হয় পরিমাণ মতো দই ও দুধ। সমস্ত মিশ্রণের সঙ্গে অবশ্যই মেশাতে হবে সামান্য বেকিং পাউডার। এরপর দিতে হবে কিছুটা ঘি অথবা মাখন এবং সামান্য জাফরান। অনেকে আবার জিলিপিকে আরও আকর্ষক ও নজরকাড়া করে তোলার জন্য হলুদ রঙও ব্যবহার করে থাকে।  

এরপর এর সঙ্গে পরিমাণমতো পানি মিশিয়ে ১২ ঘণ্টা মিশ্রণটিকে কাপড়ে ঢেকে রাখতে হয়। তারপর আলাদা করে বানিয়ে নিতে হবে চিনির রস বা সিরাপ।

এর পরেই আসল কাজ। গরম তেলে মিশ্রণটিকে জিলিপির মতো করে ঢালতে হয়। জিলিপি ভাজা অনেকেই দেখেছেন কিন্তু মনে হতেই পারে যে খুব সহজ। জিলিপির কারিগররা যেভাবে জিলিপি তৈরি করে থাকে, সেভাবে আপনি গরম তেলে জিলিপির মিশ্রণটিকে ঢালতে পারবেন না। এর জন্য দীর্ঘ অভ্যাস ও বিশেষ নৈপুণ্য প্রয়োজন।

তবে সেক্ষেত্রে কলকাতার এক শেফ শেখর আগরওয়াল জানিয়েছেন একটি সুবিধাজনক প্রক্রিয়া বা উপায়ের কথা। বাড়িতে জিলিপি তৈরি করতে হলে একটি কাঁচের বোতলে মিশ্রণটিকে রেখে বোতলের ঢাকনায় একটি ছোট ছিদ্র করে নিন। সেই ছিদ্র দিয়ে ঠিকভাবে বেরিয়ে আসবে মিশ্রণটি।

জানা যায়, মুগল যুগে বাদশাদের খাদ্যতালিকায় জিলিপির প্রবেশ ঘটে সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময় থেকে। এই মিষ্টি জাহাঙ্গীরের এতো প্রিয় ছিল যে, তিনি এই মিষ্টির সঙ্গে নিজের নাম জুড়ে দিতে দ্বিধা করেননি। তিনি নাম রেখেছিলেন ‘জাহাঙ্গিরা’। জিলিপির স্বাদ যে অতুলনীয় সেকথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।  সেই কারণেই যুগযুগ ধরে এই উপাদেয় পদটি টিকে আছে নিজের ঐতিহ্যকে বজায় রেখে। আশা করা যায় আগামী দিনেও থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ০১৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৭
ভিএস/জেএম
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।