ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

মাছ নেই ভরা গঙ্গায়!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০১৮
মাছ নেই ভরা গঙ্গায়! চলতি মৌসুমে পানি থাকলেও মাছ নেই গঙ্গায়। ফাইল ফটো

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গা ভর্তি পানি। নেই শুধু পানির সম্পদ মাছ! গঙ্গার বুকে জাল বিছিয়ে, দিন শেষে হতাশ মনে ফিরছেন গঙ্গাবক্ষের মৎস্যজীবীরা। এই মৌসুম যতটা ইলিশের জন্য, ততটাই ট্যাংরা, আইড়, ভোলা বা চিংড়ির জন্য।

কিন্তু কোথায় কী? হাওড়া থেকে উত্তর চব্বিশ পরগণা- গঙ্গার গতিপথে প্রায় উধাও মাছ। চলতি মৌসুমের মতো বিগত কয়েক বছরে মাছের এতটা খরা যায়নি বলেই জানালেন মৎস্যজীবীরা।


 
কৈশোর থেকে বাপের সঙ্গে নৌকায় মাছ ধরতে যেতেন উত্তর চব্বিশ পরগণার খড়দার জেলেপাড়ার অচিন্ত্য দাস।  বয়স ৬০ ছুঁইছুঁই। অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার থেকে স্মৃতিচারণে বলেন, এখনও মনে পড়ে বছর কুড়ি আগে এই গঙ্গা থেকে জালে দু-তিন কিলো ইলিশ ধরার দিনগুলো। সেসব এখন স্বপ্ন।  

‘ফারাক্কা ব্রিজ তৈরি হওয়ার পর কয়েক বছর গঙ্গায় মাছ পাইনি। পরে অবশ্য জালে ইলিশ না পেলেও তোপসে, ট্যাংরা, চিংড়ি, ভোলা ধরা পড়তো।  কিন্তু গত কয়েক বছর ধরেই একটু করে ফের কমতে শুরু করে মাছ। এ বছর সেই পরিস্থিতি চরমে উঠেছে। এখন আমরা অমাবস্যা-পূর্ণিমা তিথির দিকে তাকিয়ে আছি, যদি দু-চারটে মাছ ওঠে। ’

এভাবে কি পেশা টিকিয়ে রাখা যায়? হাওড়ার আরও এক মৎস্যজীবীর কথায়, ভরা বর্ষায় বিগত তিন-চার মাস ধরে গঙ্গায় মাছ নেই। হয়তো সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি কিছুটা মাছ উঠতে পারে আশা করা যাচ্ছে।
 
হাওড়া থেকেই মাছের আকাল। একই সঙ্কট ব্যান্ডেলসহ উত্তর চব্বিশ পরগণার মৎস্যজীবীদের। দুটি নৌকা কিনে পেশা টিকিয়ে রাখার চেষ্টায় আছেন তরুণ খাড়া।  

তার আক্ষেপ, মাছ তো কোন ছাড়, একটা পোকা পর্যন্ত পড়ছে না জালে। আষাঢ়, শ্রাবণ ভাদ্রজুড়ে ইশিলের সঙ্গে দোসর হয় চিংড়ি। কিন্তু সেসব এবার কেন নিরুদ্দেশ, তার কোনোও কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না তরুণবাবুরা।
 
কেরেলা ও কর্ণাটকে ভয়াবহ বন্যা। পশ্চিমবঙ্গে ভরা বর্ষায় গঙ্গায় কম বেশি পানি আছে। তবে কৃষি ও শিল্পের বিষাক্ত নির্যাস মিশছে গঙ্গায়। দূষণ আটকাতে যত টাকা আসছে, তা গিলে খাচ্ছে রাঘব-বোয়ালরা। আর মাছেদের নিরুদ্দেশে গুমরোচ্ছেন মৎস্যজীবীরা।
 
অন্যদিকে আগামী ২০২০ সাল নাগাদ গঙ্গা দূষণ থেকে পুরোপুরি মুক্ত পাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ভারতের কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন ও পানিসম্পদ মন্ত্রী নিতিন গড়কড়ি।  

দূষণে বিপর্যস্ত গঙ্গার হারানো ‘যৌবন’ ফিরিয়ে আনতে নেওয়া ‘নামামি গঙ্গা মিশন’ প্রজেক্টের কাজও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে ২০২০ সালে গঙ্গা সম্পূর্ণ পরিষ্কার হবে বলে আশা ব্যক্ত করেছেন মন্ত্রী।
 
সেই সুদিনের আশায়  আপাদত বছর দুয়েক মাছের থেকে মুরগীতেই ভরসা রাখতে হবে পশ্চিমবঙ্গবাসীকে, যেমনটা রাখছে এখন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০১৮
ভিএস/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।