ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

মমতা-মোদীর বাকযুদ্ধ, আখেরে লাভ কার?

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৯
মমতা-মোদীর বাকযুদ্ধ, আখেরে লাভ কার?

কলকাতা: মমতার ‘এক্সপেয়ারি বাবু’ বনাম নরেন্দ্র মোদীর ‘স্টিকার দিদি’ কিংবা মোদীর ‘দমনপন্থি’ বনাম মমতার ‘মগজে মরুভূমি’- কথাগুলো বিভিন্ন জনসভায় কখনও মমতার উদ্দেশ্যে মোদী বলেছেন; কখনও প্রধানমন্ত্রীর ঠিকে তীর তাঁক করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 

কিন্তু এই কাদা ছোড়াছুড়িতে আখেরে কার লাভ? আক্রমণের তীক্ষ্মতা সময়ে সময়ে ব্যক্তিগত সীমা ছাড়িয়ে তো যাচ্ছেই; অনেক সময়ে তাদের বক্তব্যের সারমর্মও বুঝে ওঠা যাচ্ছে না।  

তবে রাজনৈতিক ভাষণে মুখ্যমন্ত্রীর মতো অতটা আক্রমণাত্মক নয় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ।

দুই দাপুটে নেতার ভাষণে এইটুকু বোঝা যাচ্ছে যে, তারা একে-অপরের বিরুদ্ধে তর্জন-গর্জন একটুও কমাতে রাজি নন।

এই গর্জন শুধুমাত্র আবেগ থেকে উঠে আসা ভাবলে ভুল হবে। এর পেছনে আছে রাজনৈতিক কারণও। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের ভাষণে দলীয় নেতাকর্মী-সমর্থকরা সাময়িক উত্তেজনা বাড়ে। তার প্রভাব পড়তে পাড়ে ভোটবাক্সেও।

একে অপরের বিরুদ্ধে কটুক্তি করলেও কৌশলী ভাষণে অনেকটাই এগিয়ে আছেন মোদী। অভিনেতা অক্ষয় কুমারের সঙ্গে মুখোমুখি সাক্ষাৎকারে ‘মমতা আমাকে কুর্তা, মিষ্টি পাঠান’ একথা বলে মাস্টার স্ট্রোক খেলেছেন প্রধানমন্ত্রী।  

এতে লাভ? মমতার সমালোচকদের উস্কে দেয়া ও তাদের মুখ থেকে বলানো যে, আখেরে দিদি মুখে মোদীকে তুলোধোনা করলেও আড়ালে আবডালে ভালোই সম্পর্ক রেখে চলেছেন। ফলে মমতার ভোটব্যাংক মোদীর খাতে জমা পড়তে পারে।

অন্যভাবে ভাবলে বলা যায়, রাজনীতির সঙ্গে সামাজিক সৌজন্যতার সংযোগ কোথায়? কিন্তু মাঠের বাস্তবতা হলো, ভারতের ভোটারদের কাছে এই সমস্ত ঘটনার আবেদন যে নেহাত কম নয়, তা মোদী ভালোই বোঝেন।

আর তাই তিনি ঠাণ্ডা মাথায় পাল্টা চালটি দিয়েছেন। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার জন্য পশ্চিমবঙ্গ থেকে বেশ কিছু আসনে জয়ের দরকার বিজেপির।  

অন্যদিকে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসন নিজের দখলে রেখে কেন্দ্রীয় সরকারে নিজেকে নির্ণায়ক ভূমিকায় রাখতে মরিয়া মমতা বন্দোপধ্যায়।  

তবে শুধু মরিয়া বললে ভুল হবে, রাজ্যের জনগণের নাড়ি চিনতে পারদর্শী মুখ্যমন্ত্রী মমতা জানেন, মোদীর বিরুদ্ধে সুর চড়া থাকলে পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম সংখ্যালঘু ভোটটি তার কাছে আরও সহজে আসবে।  

এছাড়া দক্ষিণপন্থি রাজনীতির এক আদর্শ বিকল্প হয়ে উঠতে চাইছেন মমতা। কেন্দ্রে ক্ষমতা দখল করতে গেলে দেশব্যাপী সংগঠন ছাড়াও বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গি এবং ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে হয়।  

এক্ষেত্রে মোদীর থেকে মমতা অনেকটাই পিছিয়ে। কারণ বিজেপি জাতীয় দল আর নিজেদের সর্বভারতীয় দাবি করলেও তৃণমূল কংগ্রেস আসলে আঞ্চলিক।

তবে এই কটুক্তি, কথার লড়াইয়ে ভোটারদের মনে কী কোনো প্রভাব ফেলে? হয়তো সাময়িক উত্তেজনা বাড়ে! দিনের শেষে বাজার দর, বেকারত্ব, ধর্মীয় আগ্রাসন, বেকারত্ব, শিল্পদ্যোগ অকেটাই প্রভাব ফেলে ভোটবাক্সে।  

তাই কটাক্ষ-পাল্টা কটাক্ষে ভোটের বাজার গরম হলেও জনগণের মতামত গড়ে ওঠে সমসাময়িক পরিস্থিতির ওপর। এক্ষেত্রে দুপক্ষই এক হলেও কিছুটা ইতিবাচক মমতা- অনন্ত এমনটা মনে করেন ভারতের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৯
ভিএস/এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।