কলকাতা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছাত্র জীবনের প্রসঙ্গ উঠে এলে অবশ্যই উঠে আসবে তৎকালীন ইসলামিয়া কলেজের নাম, যার বর্তমান নাম মৌলানা আজাদ কলেজ। যেটি কলকাতার (৮ স্মিথ লেন, কলকাতা ১৩) পার্কস্ট্রিট অঞ্চলে অবস্থিত।
ফলে ছাত্র জীবনে বঙ্গবন্ধুর কলকাতায় অবস্থান এক গুরুত্ববহ অধ্যায়। শহর কলকাতার তৎকালীন ইসলামিয়া কলেজ থেকে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ওই সময় তিনি জাতীয় পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং শুদ্ধ রাজনীতিচর্চা ও গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেন।
সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের অনন্য সম্মিলনে ধর্মনিরেপক্ষতা কীভাবে সমাজ জীবনকে বদলে দিতে পারে, তা তিনি কলকাতা শহরে ছাত্রাবস্থায় রপ্ত করেন। আর ১৯৪২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান ইসলামিয়া কলেজে ইন্টারমিডিয়েটের জন্য যখন ভর্তি হলেন তখন তিনি থাকতেন বেকার হোস্টেলের ২৪ নম্বর কক্ষে। সে কারণে যখনই বঙ্গবন্ধুর ছাত্রজীবন প্রসঙ্গ উঠে আসবে তখনই ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে আসবে তার স্মৃতিবিজড়িত এই বেকার হোস্টেলের প্রসঙ্গ।
বঙ্গবন্ধুকে সহপাঠী হিসেবে না পেলেও সেদিনের আর এক তরুণ অর্থাৎ আজকের বর্ষীয়ান নেতা বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু এই বেকার হোস্টেল সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যে কলেজে পড়তেন আমিও সেই কলেজের ছাত্র ছিলাম। কলেজ তৈরি করার ক্ষেত্রে ফজলুল হকের এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তখন কলেজের নাম ছিল ইসলামিয়া কলেজে। ’
‘এরপর সেই কলেজের নাম পরিবর্তন হয়ে সেন্ট্রাল ক্যালকাটা কলেজে হয়। পরে সেই নাম পরিবর্তন হয়ে বর্তমান নাম হয়েছে মৌলানা আজাদ কলেজ। আর বঙ্গবন্ধু যখন ওই কলেজে পড়তেন তখন তিনি থাকতেন বেকার হোস্টেলে ২৪ নম্বর কক্ষে। এক সময় বেকার হোস্টেলের ২৩ ও ২৪ নম্বর কক্ষ ছিল “সিক রুম”। পরে তৎকালীন রাজ্য সরকার ও স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার রুমটিকে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকক্ষ হিসেবে সংরক্ষিত করে। তাতে তাঁর ব্যবহৃত খাট, টেবিল, চেয়ারসহ একাধিক জিনিস স্মৃতিস্বরূপ হিসেবে এখানে রাখা আছে। ’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি বঙ্গবন্ধুর মতো বাঙালি বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদেরও। সে কারণে স্মৃতিকক্ষটি সংরক্ষণ সঠিক কাজ হয়েছে এবং এই কাজ করেছে বাংলাদেশ সরকার। যার জন্য আমারও কৃতজ্ঞ। ’
১৯৪৬ সালে তৎকালীন ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এই কলেজ থেকেই ১৯৪৭ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন বঙ্গবন্ধু।
১৯৯৮ সালে ৩১ জুলাই সংরক্ষিত হিসেবে কক্ষটির উদ্বোধন হয়। এরপর ২০১১ সালে ২৩ ফেব্রুয়ারি সেখানে নির্মিত হয় বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্য। উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তবে ভাস্কর্যটির সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর চেহারার সাদৃশ্য না থাকায় বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় তা নতুন করে প্রতিস্থাপন হয় ২০১৯ সালের ৩ আগস্ট। উদ্বোধন করেছিলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
প্রতিবছর বিশেষ দিনগুলোয় বেকার হোস্টেলের এই কক্ষে এসে শ্রদ্ধা জানিয়ে যান দূতাবাসের কর্মকর্তাসহ কলকাতার বঙ্গবন্ধু প্রেমীরা। বুধবারও (১৭ মার্চ) বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। তার আগে কলকাতাস্থিত বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিবসটির কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
ফলে কলকাতার সচেতন নাগরিকের কাছে এই কক্ষটির গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ শহরবাসী নেতাজী বলতে যেমন সুভাষচন্দ্র বোস, স্বামিজী বলতে বিবেকানন্দকে চেনেন। ঠিক তেমনি বঙ্গবন্ধু বলতে শেখ মুজিবুর রহমানকেই চেনেন কলকাতাবাসী। আর সে কারণে কলকাতা আগলে রেখেছে বঙ্গবন্ধুর এই স্মৃতিবিজড়িত বেকার হোস্টেলের ২৪ নম্বর কক্ষ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২১
ভিএস/এইচএডি