কলকাতা: ‘ঝড়তো এসেই চলেছে। কখনও বুলবুল-আইলা আসছে, কখনও আবার আম্পান-ইয়াস।
বুধবার (২ জুন) বিকেলে রাজ্যের প্রশাসনিক ভবন নবান্ন থেকে সেচ দপ্তর বৈঠকে এমনই নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস উড়িষ্যায় আছড়ে পড়লেও, মমতার কথা মতন সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, রাজ্যে ২০ হাজার কোটি রুপির সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে। তখনই পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, যেভাবে বালিয়াড়ি অঞ্চল এবং সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অঞ্চল স্বেচ্ছাচারিতার বশে ধ্বংস করা হচ্ছে। তারই খেসরাত দিতে হয়েছে পশ্চিমবঙ্গকে। রাজ্যকে ঝড়ের হাত থেকে একমাত্র রক্ষা করতে পারে বালিয়াড়ি এবং ম্যানগ্রোভ অঞ্চল। গড়ে তুলতে হবে বনসৃজন। এরপরই মুখ্যমন্ত্রী এ দিন নির্দেশ দেন, এবার থেকে নজর দিতে বনসৃজন এবং সমুদ্র সৈকতগুলোতে।
তিনি বলেন, সমুদ্র থেকে একটা নির্দিষ্ট জায়গা বাদ দিয়ে হোটেল তৈরি করতে হবে। এক একটা সমুদ্রতটের দায়িত্ব নিতে কর্পোরেট এবং ব্যবসায়ীদের। দীঘার সৌন্দর্যায়ন নষ্ট হয়েছে। দীঘার জন্য একটা পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। যেসব হকারদের দোকানগুলো নষ্ট হয়ে গেছে আবাসন দপ্তর এবং দীঘা উন্নয়ন পর্ষদকে তা তৈরি করে দিতে হবে। সৈকতের পাড়ে বোল্ডালগুলো (পাথর) ঠিকমতো লাগানো হয়নি। এটা নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। ফাউন্ডেশনটাই ভুল হয়েছে। এটা দেখতে দীঘার চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে দায়িত্ব দিচ্ছি। এরপরই বৈঠকের শেষপর্য়ায়ে বিরক্তর সুরে হঠাৎ তোলেন আম্পানের বিষয়ে। মমতা বলেন, আম্পানতো কয়েক মাস আগেই হয়েছে। গাদা গাদা গাছ পড়েছিল। সেই গাছগুলি এখন কোথায় আছে? বছর বছর বাঁধ মেরামত সম্ভব নয়। ওই গাছগুলি দিয়ে নদীর ভাঙন আটকানো যেতে পারে। সেগুলি কি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে? বন দপ্তর, কলকাতা পুরসভা, সেচ দপ্তর গাছগুলি তুলে নিয়ে যায়। কোনো হিসাব দেয় না। একটা স্বচ্ছতা রাখা উচিত। তিনদিনের মধ্যে রিপোর্ট দিন। বসে থাকলে চলবে না। তারপর সেগুলি কিভাবে কাজে লাগানো হবে, তা ঠিক করা হবে। তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর করোনার মধ্যে রাজ্যে ইয়াসের কারণে এত বড় দুর্য়োগ, সামাল দেওয়াই দায় হয়ে উঠছে সরকারের। এখন অনেক অঞ্চলে অবস্থা শোচনীয়। তবে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে উড়িষ্যাতেও। কিন্তু তা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক প্রধানমন্ত্রী মোদীকে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘কোভিড পরিস্থিতির জন্য ভারতে আর্থিক অবস্থা এমনিতেই খারাপ। তাই ঝড়ের কারণে উড়িষ্যার সমস্যার জন্য প্রধানমন্ত্রীর থেকে আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন নেই। ’অপরদিকে, মোদীর থেকে প্রথমে ২০ হাজার কোটি রুপির দাবি করলেও নবীনের চমকে মমতাও প্রধানমন্ত্রী আর্থিক সহযোগিতা থেকে পিছিয়ে এসেছেন। মমতা জানিয়েছেন, ‘আমি শুধু হিসাব দিয়েছি। কিন্তু ও টাকার দরকার নেই। ’ তারইমধ্যে বিজ্ঞানীদের মমতার সরকারের উদ্দেশ্যে তীর্য়ক মন্তব্য করে চলা। যার ফলে সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গের অর্থায়নে ম্যানগ্রোভ এবং বালিয়াড়ি বাঁচাতে নড়েচড়ে বসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩২ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০২১
ভিএস/এএটি