কলকাতা: বছর ঘুরলেই ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে বিধানসভা ভোট। অপরদিকে, ২০২৪ সালে ভারতের লোকসভা ভোট।
ফলে বসে নেই বিজেপি বাহিনী। এ নিয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বার উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের বারানসী সফরে প্রধানমন্ত্রী মোদী। বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) নিজের লোকসভা কেন্দ্রের একগুচ্ছ প্রকল্পের শিলান্যাস করেন তিনি। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেস এবং সমাজবাদী পার্টির নাম না নিয়ে আক্রমণ করেছেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, বিজেপির ডিকশনারিতে ‘সব কা সাথ, সবকা বিকাশ। ’ আর কয়েকজনের ডিকশনারিতে আছে মাফিয়াবাদ এবং পরিবারতন্ত্র।
এর আগে ১৩ ডিসেম্বর কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের করিডর উদ্বোধনে বারানসী গিয়েছিলেন তিনি। সেদিন রীতিমতো গঙ্গাস্নান করে মন্দিরে পূজা দিতে দেখা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। সে সময় দুইদিনের সফরে মধ্যরাতে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে নিয়ে বারানসী স্টেশন ঘুরে দেখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
এদিকে, পশ্চিমবঙ্গে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বিজেপির। ফল প্রকাশের পর বিধায়ক থেকে দলের স্থানীয় নেতৃত্বের একটা বড় অংশ তৃণমূলে ভিড়েছেন। এমনকি, কলকাতা সিটি নির্বাচনে মাত্র ৩টি আসন পেয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে বিজেপি বাহিনীকে। তবে বসে নেই পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতারা। সব ভুলে ২০২৪-এ মোদীকে সহযোগিতা করতে চান তারা।
২০১৯ এর লোকসভা ভোটের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনে মধ্যে ১৮টা আসন পায় তারা। তাদের সবচেয়ে বেশি শক্তি রাজ্যের উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোয়। দক্ষিণে ক্ষমতা না থাকলেও কিছু জেলায় যথেষ্ট প্রভাব আছে। সে কারণে মেদিনীপুরে পরাজিত হতে হয়েছে মমতাকেও।
আবার সম্প্রতি রাজ্য বিজেপির নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে। রাজ্য সভাপতির পদ থেকে বাদ পড়েছেন দিলীপ ঘোষ। সেই স্থানে উঠে এসেছেন উত্তরবঙ্গের বাসিন্দা সুকান্ত মজুমদার। অবশ্য দিলীপ বাদ পড়লেও বর্তমানে বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি তিনি। তবে বাকি যারা বাদ গেছেন সেসব নেতৃত্ব দলের কর্মকাণ্ডে আগামী দিনে থাকবেন কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
রাজ্য বিজেপি সহ-সভাপতি প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরী, জয়প্রকাশ মজুমদার, রাজকমল পাঠক, সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুকে দলের নতুন কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়নি। এমনকি, সংখ্যালঘু মোর্চার রাজ্য সভাপতি আলী হোসেনকে সরিয়ে দলের মূল সংগঠনে স্থান দেয়নি দল। জয়প্রকাশ মজুমদার ছাড়া বাকিরা দীর্ঘদিন ধরে বিজেপিতে রয়েছেন। কমিটি ঘোষণার পর দলের সবক’টি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে নেতৃত্বের বড় অংশকে। যাদের দলের কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে তাদের অনেককে এবারের বিধানসভা নির্বাচনেও টিকিট দেওয়া হয়নি।
অভিজ্ঞমহল মনে করছে, তখন থেকেই শুরু হয়েছিল এই বাতিল প্রক্রিয়া। এবার তা সম্পূর্ণ হলো। এই অবস্থায় বাদ যাওয়া বিজেপি নেতৃত্ব কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটাই এখন দেখার।
ব্রাত্যদের ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে জানা যায়, কয়েকটা দিন তারা অপেক্ষা করতে চাইছেন। তারপর তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। কারও কারও সঙ্গে তৃণমূলের যোগাযোগ নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে। তবে বাদ যাওয়া বিজেপির একাংশের বক্তব্য, দলীয় নেতৃত্বে পরিবর্তনের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু নতুন কমিটি নিয়েও অসন্তোষ যে নেই তা কিন্তু নয়।
রাজনৈতিক মহলের মতে একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গে মন্দা চলছে বিজেপির। তৃণমূল-বিজেপির গোপন আঁতাত নিয়ে অনেক আগেই প্রশ্ন তুলেছিল বামফ্রন্ট। নেতৃত্ব ও বিজেপি কর্মীদের একটা বড় অংশ তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। শতাংশের হিসাবে কলকাতার সিটি ভোটও কমেছে বিজেপির। তবে সহজে দমবে না তারা। ফলে আবারও ময়দানে নামার প্রস্তুতি চলছে। যাই হোক না কেন, পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দল এখন বিজেপি। একসময় এই আসনে ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২১
ভিএস/এনএসআর