কলকাতা: চলমান করোনার এক বছর স্থগিত থাকার পর পুরনো ছন্দেই সল্টলেক সেন্ট্রাল পার্কে আয়োজিত হতে যাচ্ছে কলকাতা বইমেলা। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে এ মেলা শুরু হয়ে চলবে ১৩ মার্চ পর্যন্ত।
বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) কলকাতা প্রেসক্লাবে বইমেলার থিম কান্ট্রি লোগো উন্মোচন করেন মেলার আয়োজক সংস্থা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডসহ বিশিষ্টজনরা। এবারে কলকাতা বইমেলার ক্যাপশান, ‘সৃজনে মননে মানবিক দেশ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বাংলাদেশ। ’
২০২২ সালের ৪৫তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার থিম কান্ট্রি হয়েছে বাংলাদেশ। বইমেলায় এই নিয়ে তিনবার কোনো দেশ সেই শিরোপা পেল। এবারে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন হচ্ছে ৭ই মার্চের ভাষণের আদলে।
জাতির পিতা ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, সেই ভাষণকেই উপজীব্য করে তৈরি করা হচ্ছে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন। এছাড়া কলকাতা বইমেলার প্রধান চারটি প্রবেশদ্বারের মধ্যে তিনটি দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশকে। এই তিনটি গেট সাজানো হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর বিখ্যাত ৩টি বইয়ের আদলে। সেগুলো হচ্ছে- বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা এবং আমার দেখা নয়া চীন।
৬শ’ বর্গফুটের বেশি জায়গা জুড়ে তৈরি হবে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন। ভেতরে মোট ৫০টি স্টলে ৭টি সরকারি ও ৩৫টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে মোট ৪২টি প্রকশনা সংস্থা অংশগ্রহন করবে। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ১০হাজারের বেশি শিরোনামে থাকবে দুই লাখেরও বেশি বই। মেলা প্রাঙ্গনে দু’দিন পালন হবে-‘বাংলাদেশ ডে’। ৩ এবং ৪ মার্চসহ বইমেলায় থাকছে মোট ১১ সেমিনার এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ৬ মার্চ পালন হবে শিশু দিবস।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মশতবর্ষ, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোসের ১২৫তম জন্মজয়ন্তী, ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর এবং ভারত-বাংলাদেশের মৈত্রীর সুবর্ণ জয়ন্তী একই সালে হওয়ায় এবারের বইমেলার থিম কান্ট্রি হবে বাংলাদেশ। এমনটি জানিয়েছে বইমেলার আয়োজক কমিটি।
এ বিষয়ে প্রধান সমন্বয়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটি, জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি তথা বিশিষ্ট কবি জনাব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুর শতবর্ষে কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশকে ঘিরে এত আয়োজন, যা আমাদেরকে আপ্লুত করেছে। কৃতজ্ঞতা জানাই পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও কলকাতা বইমেলার আয়োজন কমিটিকে। আসলে বই হচ্ছে মনের হাসপাতাল। আমরা চেষ্টা করব এবারের পুস্তক আয়োজনের মাধ্যমে যাতে পৌঁছে যেতে পারি পশ্চিমবাংলার তরুণ প্রজন্মের কাছে।
বইমেলার আয়োজক সংস্থার সভাপতি সুধাংশু শেখর দে জনিয়েছেন, এবারে কলকাতা বইমেলা মোট স্টল থাকবে ছয়শয়ের বেশি। এছাড়া লিটল ম্যাগাজিনের সংখ্যা ১৮০ থেকে বেড়ে ২০০টি স্টল হচ্ছে।
বইমেলা আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় বলেন, আমরা পশ্চিমবঙ্গবাসী মনে করি আমাদের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক রাজনৈতিক সম্পর্ক নয়। এ এক ভৌগলিক সম্পর্ক। বাংলাদেশ থিম কান্ট্রি না হলেও সবদিক দিয়ে প্রতিবছরই বাংলাদেশকে আমরা সহযোগিতা করে থাকি। কারণ বাংলা ভাষা আমাদের আত্মিক ভাষা।
এছাড়া বইমেলায় গত দেড় বছরে একাধিক শিল্পী, সাহিত্যিক, অভিনেতা এবং গুণীজনকে হারিয়েছে পশ্চিমবাংলা। সেই তালিকায় রয়েছেন- সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, কবি শঙ্খ ঘোষ, বুদ্ধদেব গুহ, পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, সাংবাদিক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়সহ বিশিষ্টজনরা। তাদের স্মৃতি এবং কর্মজীবনকে স্মরণ করে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে ১৪ দিন ব্যাপী এই বই মেলায়। প্রতিবারের মত আসন্ন বইমেলায় কেনা-বেচার পাশাপাশি চলবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। চলবে অষ্টম কলকাতা সাহিত্য উৎসব।
বইমেলায় বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন ছাড়াও থাকছে ব্রিটেন, আমেরিকা, রাশিয়া, ইতালি, স্পেন, আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো এবং লাতিন আমেরিকার দেশগুলো। এর সঙ্গে এই প্রথমবার যুক্ত হচ্ছে ইরান। এছাড়া ভারতের নানা রাজ্যের প্রকাশনা সংস্থা এবং অন্যতম জনপ্রিয় লিটল ম্যাগাজিন স্টল থাকবে মেলা প্রাঙ্গণে।
কলকাতা প্রেসক্লাবে এ দিনের আয়োজিত সাংবাদিক বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন- কলকাতাস্থ বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনার তৌফিক হাসান, জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি যুগ্ম সচিব অজয় চক্রবর্তী ও অতিরিক্ত সচিব অসীম কুমার দেসহ বিশিষ্টজনরা।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২১
ভিএস/জেডএ