ঢাকা: বেড়েছে শীত। রাজধানীতে রাতে-সকালে শীতের তীব্রতা টের পাওয়া যাচ্ছে বেশ ভালোভাবেই।
আবহাওয়ার এই পরিবর্তনেও রাজধানীর মার্কেটগুলোতে শীতের কাপড়ের বিক্রি বাড়েনি। এতে হতাশ বিক্রেতারা। মার্কেটে বিক্রি না বাড়লেও ফুটপাতের ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের বিক্রি বেড়েছে।
রোববার (১৮ ডিসেম্বর) দিনভর রাজধানীর ফার্মগেট, নিউমার্কেট, উত্তরা এলাকার বিভিন্ন মার্কেট ও ফুটপাত ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
রাজধানীর নিউ মার্কেটের দ্বিতীয় তলার শহিদ কর্নার ও ফেসবুক ফ্যাশন নামে দুটি দোকানের সত্ত্বাধিকারী ওবাইদুল্লাহ রণি। মূলত শার্ট-প্যান্টসহ পুরুষদের পোশাক বিক্রি করেন তিনি। শীতে লেদার ও আর্টিফিশিয়াল লেদারের জ্যাকেট, সোয়েটার, কানটুপি ইত্যাদি তুলেছেন দোকানে।
বিক্রির খোঁজ-খবর নিলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমাদের ব্যবসাটা আসলে মৌসুমি ব্যবসা। সারা বছর হয়তো মিনিমাম বেচাকেনা থাকে। তবে ঈদ, পূজা-পার্বণ আর এই শীতে আমাদের বিক্রি ভালো হয় সাধারণত। এবারের সিজনে এখনো আশানুরূপ বিক্রি হয়নি।
কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, মানুষ আসলে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতেই হিমশিম খাচ্ছে। সেজন্যই মূলত বিক্রি কম। তবে, শীত আরও বাড়লে বিক্রি বাড়বে।
কথা হয় একই মার্কেটের ডেইজি ফ্যাশন হাউসের সত্ত্বাধিকারী নাসির উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, চলতি বছর শীতের কাপড়ের দাম একটু বেশি। পাইকারি ক্রেতারা বেশি দামে কিনছেন। বাধ্য হয়ে আমাদেরও একটু বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে। এজন্য ক্রেতা কম।
তবে মার্কেটগুলোতে বেচাকেনা মন্দ হলেও ভিড় দেখা গেছে ফুটপাতে, রাস্তার পাশে ভ্যানে। এক সময়ে স্বল্প আয়ের মানুষের মূল ভরসা ছিল ফুটপাত। এখন অবশ্য মধ্যম আয়ের এবং বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে ফুটপাত-ভ্যান থেকে পোশাক কিনতে দেখা যায়।
ফার্মগেটে কথা হয় ফুটপাতে শীতের কাপড় কিনতে আসা সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধি তিনি। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমার আট বছরের একটি মেয়ে আছে। ওর জন্য সোয়েটার পছন্দ করছি। ভ্যান বা ফুটপাত থেকে দেখে কিনতে পারলে ভালো কাপড় পাওয়া যায়।
উত্তরার আজমপুরে ফুটপাতে সোয়েটার দেখছিলেন ইরানের দুই তরুণী। তারা দুজনই ঢাকার একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়েন। ফুটপাতে দাম-দর করছিলেন তারা। বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, এখানে শীতটা একটু বেড়েছে কয়েকদিন ধরে। চাচ্ছিলাম সোয়েটার কিনতে। তাই দেখছি এখানে। পছন্দ হলে নেব।
নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ড. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন বাংলানিউজকে বলেন, শীত তো আমাদের এখানে খুব দীর্ঘ সময় ধরে থাকে না। হঠাৎ করে যদি শীত বেশি পড়ে, তাহলে লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়ে শীতের কাপড় কেনার জন্য।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের যে গার্মেন্টসগুলো আছে তাদের অনেক রিজেক্টেড প্রোডাক্ট থাকে, যেগুলো সামান্য কারিগরি ত্রুটির কারণে ক্যানসেল হয়, বায়ারের কাছে যায় না। এই ধরনের প্রোডাক্ট দিয়েই অধিকাংশ মানুষ শীত নিবারণ করে।
তিনি আরও বলেন, একটু সচ্ছল যারা, তারা সোয়েটার, শাল এগুলো কিনতে পারেন। শীতের পোশাক তো এই। আর বিয়েশাদির অনুষ্ঠান মোটামুটি নভেম্বর-ডিসেম্বর জানুয়ারি পর্যন্ত থাকে। তো সামগ্রিকভাবে খুব বড় ধরনের শীতের বাজার তো নেই। পুরো বাজারটাই আসলে নির্ভর করে শীতের তীব্রতার ওপর। তবে, আমরা আশাবাদী শীত আরেকটু বাড়লে ব্যবসা আরেকটু ভালো হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২২
এমকে/আরএইচ