ঢাকা: পহেলা জানুয়ারি (রোববার) শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী ২৭তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা ২০২৩। দ্বিতীয়বারের মতো পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার (বিবিসিএফইসি) বাণিজ্যমেলার স্থায়ী ভবনে আয়োজন করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদিন সকালে এই আন্তর্জাতিক মেলার উদ্বোধন করবেন। এবছর মেলা প্রাঙ্গণকে দৃষ্টিনন্দন করতে শিশুপার্ক, বঙ্গবন্ধু প্যাভেলিয়নসহ সরকারের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দিয়ে মেলা প্রাঙ্গণ সাজানো হলে এখনও সাজসজ্জার কাজ শেষ করতে পারেনি আয়োজকরা। এখনও চলছে স্টল, প্যাভিলিয়নের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ। মেলা প্রাঙ্গণজুড়ে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। এছাড়া গোডাউন না থাকায় পণ্যের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কায় স্টল ও প্যাভিলিয়ন মালিকরা।
শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) উদ্বোধনের আগের দিন সরেজমিনে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, মেলার মূল আকর্ষণ প্রধান ফটক ও প্রবেশদ্বার তৈরি করা হয়েছে মেট্রোরেলের আদলে। বঙ্গবন্ধু প্যাভেলিয়নের কাজ শেষ। এছাড়া মেলা প্রাঙ্গণের মূল হলে স্টল নির্মাণ কাজ ‘এ হলের’ শেষ হয়েছে। ‘বি হলের’ কাজ এখনও চলছে। হলের বাইরে দেশি ও বিদেশি প্যাভেলিয়ন নির্মাণ কাজ শেষ হলেও সাজসজ্জার কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। এছাড়া বাইরে স্টলের পাশের রাস্তা নির্মাণ চলছে। এখন কোনো স্টলের রং দেওয়া হচ্ছে, কোনোটির বোর্ড লাগানো হচ্ছে, আবার কোনো স্টল শুধু কাঠামোটাই দাঁড় করিয়েছে। এসব স্টলের কাজ পুরোপুরিভাবে শেষ হতে আরও দুদিন সময় লেগে যাবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
ইলেকট্রনিকস পণ্য নিয়ে মেলায় অংশ নিয়েছে মাই ওয়ান। তাদের স্টল মিনিস্টার। মিনিস্টারের হেড অব ব্র্যান্ড অ্যান্ড কমিউনিকেশন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, আমাদের স্টল সম্পূর্ণ রেডি। শহর থেকে অনেক দূরে হওয়ায় এক দিনের কাজ দুই দিনে করতে হয়। যাতায়াত ব্যবস্থাও ভালো নয়, ব্যক্তিগত গাড়ি না থাকলে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। এখানে কাজের লোকেরও অনেক সংকট রয়েছে। ফলে চাইলেই অনেকে দ্রুত কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। এছাড়া গোডাউন না থাকায় সাজসজ্জার কাজ করতে সময় লাগছে৷
ঢাকা থেকে মেলায় কাজ করতে আসা কাঠমিস্ত্রী নূর আলম বাংলানিউজকে বলেন, সকাল ৮টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত টানা কাজ করছি। তারপরও কাজ শেষ করতে পারছি না। যেগুলো নির্মাণ হয়েছে সেগুলো এখনও রং করা শেষ হয়নি। রং করা হলেও পণ্য সাজায়নি। আসলে শহর থেকে অনেক দূরে, যাতায়ত ব্যবস্থা ভালো নয়। রাতে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। কোনো কিছু এনে স্টক করা যায় না। ফলে কাজ করতে সময় লাগে। কাজ করতে গিয়ে কোনো পণ্যের সমস্যা হলে কাজ থামিয়ে দিতে হচ্ছে। পণ্য আসলে তারপর কাজ করতে হচ্ছে। এভাবে দুই দিনের কাজ করতে তিন দিন লেগে যাচ্ছে।
সামনের ফাঁকা জায়গায় মেগা প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ করছেন সোহেল মিয়া ও জব্বার। তারা বলেন, ১ জানুয়ারির আগে কাজ কোনও ভাবেই শেষ করতে পারব না। কারণ ইট-সিমেন্ট জোড়া না লাগলে তার ওপর নতুন করে কাজ করা যায় না। জোড়া লাগতে কিছুটা সময় নেয়। তাই আমরা অনেক চেষ্টা করলেও চারদিনের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব না।
এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ডিআইটিএফ অনন্য ভূমিকা পালন করে। সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপ এবং সরকারি-বেসরকারি সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় আয়োজিত ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা ইতিবাচক রপ্তানি প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলছে। ডিআইটিএফ এর বিভিন্ন অবকাঠামো/প্যাভিলিয়ন/স্টল নির্মাণ ও সজ্জিতকরণ কাজে প্রচুর জনবলের প্রয়োজন হয়। এতে করে দক্ষ, অদক্ষ এবং আধাদক্ষ জনবলের মৌসুমী কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। ডিআইটিএফ-এর মাধ্যমে ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং কাজে সংশ্লিষ্ট ফার্মগুলো তাদের ইনোভেটিভ কর্মকাণ্ড ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়। এছাড়া ডিআইটিএফ দেশের সার্ভিস সেক্টর উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। আশা করা যায় ২৭তম ডিআইটিএফ অতীতের মতো এবারেও জনগণের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে।
মেলার কাজ এখনও শেষ হয়নি কাল কিভাবে মেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, আমি যখন এখানে আসি তখন আমার মনেও এই প্রশ্ন উঠেছিলো। যখন তাদের সঙ্গে কথা বলি তখন তারা জানান, প্রতিবছর এরকমই হয়। আজকে আপনারা এরকম দেখলেন কালকের দিন বাদ দিয়ে পরশুদিন আসেন দেখবেন সব প্রস্তুত হয়ে গেছে। অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ম্যাজিক জানে। দিন রাত কাজ করে তারা সব তৈরি করে ফেলবে। শেষ দুইদিনের মধ্যে তারা সব করে ফেলবে। কালকে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন। আশা করছি দুই দিনের মধ্যে সব কাজ শেষ হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে ইপিবি সচিব ও বাণিজ্যমেলার পরিচালক মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, দ্বিতীয়বারের মতো স্থায়ী ভবনে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা আয়োজন করা হচ্ছে। গত বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবছর মেলা আরও দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় করা হয়েছে। আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। প্রতিবারই কিছু কাজ বাকি থাকে। আসলে শতভাগ করা সম্ভব হয় না। দুই এক দিনের মধ্যে সব কাজ শেষ হয়ে যাবে। এবার আমাদের স্টল সংখ্যা বেড়েছে৷ আমরা আশা করছি দর্শনার্থীরা উপভোগ করতে পারবেন।
তিনি বলেন, উন্নত বিশ্ব যেভাবে মেলা আয়োজন করা হয়, এবছর আমরা সেরকম করার চেষ্টা করছি। মেলাকেন্দ্রের ভিতরে সেল স্ক্রিন দিয়ে আন্তর্জাতিক মেলাগুলোর মতো ছোট ছোট স্টলগুলো সীমানা দিয়ে দেওয়া হবে। ভেতরে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মতো করে প্রয়োজন অনুযায়ী ডেকোরেশন করবে।
জানা গেছে, এবারের বাণিজ্যমেলায় ৩৩১টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। এরমধ্যে ১০টি দেশের (ভারত, হংকং, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কোরিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, নেপাল) অংশগ্রহণে বিদেশি প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন ও স্টল সংখ্যা মোট ১৭টি।
হল- এ তে বিভিন্ন ক্যাটাগরির মোট স্টল সংখ্যা ৮৪টি। যার মধ্যে ফার্নিচার জোনের আওতাভুক্ত (৯টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে মোট ২২টি স্টল) এবং ইলেকট্রনিক্স জোনের আওতাভূক্ত (৫টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে মোট ২৩টি স্টল) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। হল-বি তে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৯০টি মোট স্টল রয়েছে। এক্সিবিশন হলের সামনে এবং পেছনে অবস্থিত প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন (ক্যাটাগরি এ, বি ও সি), সাধারণ প্যাভিলিয়ন ও প্রিমিয়ার মিনি-প্যাভিলিয়নসহ মোট সংখ্যা ৫৭টি। এক্সিবিশন হলের পেছনের মাঠে অবস্থিত প্রিমিয়ার রেস্টুরেন্ট ও প্রিমিয়ার মিনি রেস্টুরেন্ট সংখ্যা ২৩টি।
এছাড়া হল-এ এবং বি ব্যতিত হলের সামনের এবং পেছনের অংশে অবস্থিত বিভিন্ন ক্যাটাগরির মোট স্টল সংখ্যা ৬০টি। এছাড়াও মা ও শিশু কেন্দ্র-২টি, এটিএম বুথ-৪টি, বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান কেন্দ্র-২টি, নামাজের স্থান-২টি (পুরুষ ও মহিলা), রক্তদান কেন্দ্র-২টি, এক্সিবিশন হলের সামনে সিটিং জোন সহ ইত্যাদি স্থাপনা রয়েছে।
মেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির ২৩টি প্যাভিলিয়ন, ২৭টি মিনি প্যাভিলিয়ন, ১৬২টি স্টল এবং ১৫টি খাবার দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাবরের মতো এবারও মেলায় বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করা হয়েছে। মুজিব বর্ষ, মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনারবাংলা বিনির্মাণের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ শীততাপ নিয়ন্ত্রিত এক্সিবিশন সেন্টারের ১ লাখ ৫৫ হাজার বর্গফুট আয়তনের ২টি হলে সব স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কোভিড-১৯ বিবেচনায় নিয়ে মেলা চলাকালীন স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করা হবে।
উল্লেখ্য, গতবছরের মতো মেলায় প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা, অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ২০ টাকা এবং বীরমুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ফ্রি। এক্সিবিশন সেন্টারের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২২০টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে এবং সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। মেলা ০১-৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। ছুটির দিনে মেলা চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১,২০২২
জিসিজি/এসএ