ঢাকা: রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আধুনিক কৃষি উৎপাদনের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
সোমবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির চেম্বার ভবনে আয়োজিত ‘রংপুর বিভাগের বিদ্যমান ব্যবসা-বাণিজ্য পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
রংপুর চেম্বারের সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটুর সভাপতিত্বে মতবিনিসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই সভাপতি।
জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা বর্তমানে ৬০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করি। এই রপ্তানিকে আমাদের ৩০০ বিলিয়ন ডলারে নিতে হবে। রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গার্মেন্টেসের বাইরে আমাদের নতুন নতুন পণ্য নিয়ে কাজ করতে হবে। এজন্য কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, রংপুর অঞ্চল সাময়িকভাবে পিছিয়ে থাকলেও দীর্ঘমেয়াদে পিছিয়ে নেই বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশের যে উন্নয়নযাত্রা, সেই যাত্রায় সরকার রংপুরকেও সহযাত্রী করে নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে রংপুরের ৬ লেনের মহাসড়কসহ ব্যাপক পরিমাণে অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। সরকারের যে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন, সেই স্বপ্নকে সত্যি করার অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে পৃথিবীতে একটি নতুন মেরুকরণ হয়েছে। এখন জাপান, কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশগুলো তাদের ব্যবসা চীন থেকে অন্য কোথাও স্থানান্তর করতে চায়। ব্যবসা স্থানান্তরের এই সুযোগটা বাংলাদেশকে নিতে হবে। বিদেশি কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে নিয়ে আসতে হলে আমাদের সেই পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সরকার ইতোমধ্যে এজন্য কাজ শুরু করেছে।
তিনি বলেন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের তরুণরা উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেই তাদের আগ্রহের পেশা অনুযায়ী প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। ২০২৬ সালের এলডিসি গ্রাজুয়েশন, চতুর্থ শিল্প বিল্পব মোকাবিলায় আমাদের শিক্ষানীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। চাহিদা অনুযায়ী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা চালু করতে ব্যবসায়ীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
যেখানে কাঁচামাল আছে সেখানে কারখানা স্থাপন করতে হবে উল্লেখ করে জসিম উদ্দিন বলেন, এখন একটি প্রচলিত ধারা হলো রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কাঁচামাল নিয়ে এসে ঢাকায় সেগুলো প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। এরফলে একদিকে পচনের ফলে যেমন খাবার অপচয় হয়, তেমনি পরিবহন খরচসহ সামগ্রিকভাবে ব্যবসার খরচ বেড়ে যায়। ব্যয় কমাতে প্রচলিত রীতি ভেঙে স্থানীয় পর্যায়ে কারখানা স্থাপনের অনুরোধ জানান তিনি।
রমজান মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় খাবারের মূল্য ঠিক রাখতে ব্যবসায়ীদের স্বক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রংপুর চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, রংপুরে বৈষম্য দূরের পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কাজ করতে হবে। রংপুর দেশ-বিদেশের ব্যবসায়ীদের জন্য একটি আদর্শ স্থান হতে পারে। এখানে জমির দাম অনেক কম। স্বল্পমূল্যে লোকবল পাওয়া যায়। তাই এই সুযোগকে কাজে লাগাতে দেশি-বিদেশিদের পাশাপাশি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের আরও উদ্যোগী হতে হবে।
এফবিসিসিআইর সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, বিগত দশকে দেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বেসরকারি খাতের হাত ধরেই অথনীতির এই উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। সামনের দিনের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সু-পরিকল্পিত কর্মসূচি হাতে নিতে হবে।
রংপুর বিভাগের বিদ্যমান ব্যবসা-বাণিজ্য পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোরশেদ হোসেন।
মতবিনিময় সভায় এফবিসিসিআই’র পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, বিভিন্ন সরকারি অফিসের উচ্চপদস্থ কর্মর্তা, রংপুর বিভাগের বিশিষ্ট ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২৩
এমকে/এমজেএফ