ঢাকা: ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণকারী সংস্থার (এনজিও) মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়। ঋণের এ অর্থ বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে থেকে ৮ থেকে ৯ শতাংশ সুদ হারে নিয়ে এনজিওগুলো সর্বোচ্চ ২২ শতাংশ হারে বিতরণ করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাডভান্স ক্লাসিফাইড বাই ইকোনমিক পারপাস (অল ব্যাংক) শীর্ষক ভিন্ন ভিন্ন প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এমন চিত্র মিলেছে।
তথ্যে দেখা গেছে, ২০২২ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর তিন মাসে এনজিওর ২০১২ কৃষকের মাঝে ১০ হাজার ৩৮৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। একই সময়ে দেশে বিতরণ মোট ঋণের দশমিক ৭৮ শতাংশ। এক বছর আগে ২০২১ সালের একই সময়ে এ হার ছিল দশমিক ৬৩ শতাংশ। টাকার অংকে যা ৭ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা।
যেসব ব্যাংকের পল্লী অঞ্চলে শাখা নেই সব ব্যাংক এনজিও লিংকেজ ব্যবহোর করে কৃষকদের মাঝে ঋণ পৌঁছে দিচ্ছে, এটা ভালো। এটা উত্তরোত্তর বাড়ছেও। এর মাধ্যমে কৃষকের কাছে অর্থ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যপূরণ হচ্ছে বলে মনে করেন পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর।
দেশে ব্যবসারত দেশি-বিদেশি সব বাণিজ্যিক বিতরণ করা মোট ঋণের ২ শতাংশ কৃষিঋণ হিসাবে বিতরণ করে। এর বাইরে বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের প্রায় পুরোটাই কৃষি ঋণ হিসাবে বিতরণ করে। দেশি বেসরকারি ও বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও তাদের ঋণের ২ শতাংশ কৃষিঋণ হিসাবে বিতরণ করে।
এর মধ্যে যেসব বাণিজ্যিক ব্যাংকের পল্লী অঞ্চলে নিজস্ব শাখা নেই, সে সব ব্যাংক ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণী সংস্থার (এনজিও) নিয়ন্ত্রক সংস্থা (এমআরএ) নিবন্ধিত এনজিওর মাধ্যমে বিতরণ করে এবং ব্যাংকগুলোর কৃষিঋণে নির্ধারিত সুদ হারে অর্থায়ন নিয়ে এমআরএ নির্ধারিত সুদ হারে বিতরণ করবে। এক্ষেত্রে এমআরএর নির্ধারিত সুদ হার রয়েছে ২২ শতাংশ।
এনজিওগুলো তাদের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রান্তিক কৃষক, কৃষিজীবী ও পল্লীর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মাঝে এ ঋণ বিতরণ করে থাকে। এনজিওগুলো কিস্তির মাধ্যমে যথারীতি এ ঋণ তুলেও আনে এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ফেরত দেয়। বাণিজ্যিক ব্যাংক এ ঋণ বিতরণ না করলেও জরিমানার ব্যবস্থা থাকার কারণে প্রতিবছরই এনজিওর মাধ্যমে কৃষিঋণ বিতরণ বাড়ছে।
এতে অন্যান্য ঋণ বিতরণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃষিঋণ বিতরণও বাড়ছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে কৃষি যেখানে ১০ হাজার কোটি টাকার নিচে ছিল। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে শুধু নিয়মিত কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রা ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। অন্যান্য বছরের ন্যায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বিতরণও হবে।
করোনা পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে পড়ে। বাংলাদেশেও যাতে খাদ্য সংকট সৃষ্টি না হয়, এজন্য দেশে খাদ্য উৎপাদনে উৎসাহ দিতে স্বল্প সুদের বিশেষ প্রণোদনা স্কিম তৈরি গঠন করে সরকার। নিয়মিত কৃষি ঋণের সঙ্গে এ প্রণোদনা স্কিমের অর্থও যুক্ত হয়।
এ ঋণের কৃষকপর্যায়ে সুদ হার বেশি গুনতে হয়। এর ফলে কৃষকের কাছে কম সুদে অর্থ পৌঁছে দেওয়ার যে লক্ষ্য সেটা ব্যাহত হয়। তবে কৃষকের কাছে টাকা যাচ্ছে এবং কৃষিতে ব্যবহার হচ্ছে। সেদিক থেকে এনজিওর মাধ্যমে কৃষি ঋণ বিতরণ একটি ভালো দিক বলে মনে করেন কৃষি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কৃষকের কাছে সহজ শর্তে ঋণ পৌঁছে দিতে মানুষের সচেতনতা বাড়াতে হবে। মানুষ যাতে ব্যাংকগুলোকে গিয়ে বলতে পারেন তিনি কৃষি ঋণ নেবেন। নিজে থেকে ঋণ নিতে উদ্যোগী হলে কৃষিঋণ দেওয়ার যে লক্ষ্য সেটা পূরণ হবে।
রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সক্ষমতা ব্যবহার করে কৃষিঋণ বিতরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে চাপ সৃষ্টি করতে হবে। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো প্রধানত এনজিও লিংকেজ ব্যবহার করে কৃষিঋণ বিতরণ করছে। নিজস্ব চ্যানেলে বিতরণের সক্ষমতার বাড়াতেও জোর দিতে হবে, বলেন সবচেয়ে বেশি কৃষিঋণ বিতরণকারী রাষ্ট্রায়ত্ত কৃষি ব্যাংকের সাবেক ওই ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সুদ হার যাইই হোক কৃষকের কাছে অর্থ যাচ্ছে, এনজিও লিংকেজ ব্যবহার করে কৃষিঋণ বিতরণের প্রধান সার্থকতা। যদি কোনো ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণ না করে, বা শহুরে ভদ্রলোককে ঋণ দিয়ে কৃষিঋণের মিথ্যা বিবৃতি তৈরি করে তার চেয়ে তো ভালো হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২৩
জেএ/এএটি