ঢাকা: নতুন বছরে প্রবাসী আয়ে সুবাতাস দিয়ে শুরু করে দ্বিতীয় সপ্তাহেও এ ধারা অব্যাহত ছিল। তৃতীয় সপ্তাহে এসে কিছুটা ছন্দ পতন হয়েছে।
রোববার (২২ জানুয়ারি) বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রবাসী আয়ের এ তথ্য প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
জানুয়ারি মাসের ২০ দিনে দেশে প্রবাসী আয় আসে ১৩১ কোটি ৫২ লাখ ৫০ হাজার ডলার। এর মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহে আসে যথাক্রমে ৪০ কোটি ৮৩ লাখ ৮০ হাজার ও ৫২ কোটি দুই লাখ ৬০ হাজার ডলার। তৃতীয় সপ্তাহে কিছুটা কমে ৩৮ কোটি ৬৬ লাখ ১০ ডলারে নামে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ১৭৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার ছাড়িয়ে যাবে। আর তাতে ইতিবাচক ধারায় থাকবে প্রবাসী আয়।
মাসের তৃতীয় সপ্তাহে বেশি প্রবাসী আয় আসা ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাহ কমে যাওয়ায় রেমিট্যান্সের ইতিবাচক ধারা ব্যাহত হয়েছে। একক ব্যাংক হিসেবে দেশের সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় আসে বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে।
বছরের প্রথম মাস জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে আসা প্রবাসী আয় অর্ধেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে মোট প্রবাসী আয়েও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ব্যাংকটির মাধ্যমে ১৪ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত এক সপ্তাহে রেমিট্যান্স আসে পাঁচ কোটি ২৬ লাখ ৭০ হাজার ডলার। আগের দুই সপ্তাহে যা ছিল যথাক্রমে নয় কোটি ৫২ লাখ ৬০ হাজার ও ১০ কোটি ডলার। ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংকটির মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছে ২৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় আনা ব্যাংক হলো আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকটির মাধ্যমে এ সময়ে প্রবাসী আয় এসেছে ১০ কোটি ১২ লাখ ৭০ হাজার ডলার। অন্যান্য ব্যাংকের মধ্যে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে আট কোটি ৯৪ লাখ ৭০ হাজার ডলার, সাউথইস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে পাঁচ কোটি আট লাখ ডলার, এনসিসি ব্যাংকের মাধ্যমে পাঁচ কোটি ১০ লাখ ডলার, ডাচ বাংলার মাধ্যমে পাঁচ কোটি ১২ লাখ ৪০ হাজার ডলার উল্লেখযোগ্য। এর বাইরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এসেছে অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংকটির মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছে সাত কোটি ৬০ লাখ ডলার।
সাধারণত কম প্রবাসী আয় আসে- এমন ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসা কিছুটা বেড়েছে। এ ধরণের ব্যাংকগুলো হলো ব্যাংক এশিয়া, পূবালী, শাহজালাল ইসলামী ও সোশ্যাল ইসলামী।
প্রবাসী আয়ের তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রথম দুই মাসে ভালো রেমিট্যান্স আসে। বছরের প্রথম মাস জুলাই-এ আসে ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ এবং আগস্টে আসে ২০৯ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। এরপর সেপ্টেম্বর মাসে রেমিট্যান্স কমে ১৫২ কোটি ৬৯ ডলারে নামে। ডলারের এ ছন্দপতন অর্থনীতির অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে দেয়।
সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয়ের ছন্দ পতনের পরপরই নড়েচড়ে বসে সরকার। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে সরকার বিভিন্ন রকম উদ্যোগ নেয়। এ সময় মানি ট্রান্সফার ও ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসার ক্ষেত্রে ফি মওকুফের ঘোষণা দেওয়া হয়, নির্দিষ্ট পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠাতে অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন না তোলা, মোবাইল ফাইনান্সিং ব্যবহার করে দ্রুত টাকা পাঠানো সুবিধার ঘোষণা এবং রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানোর কুফল প্রচার করা শুরু হয়।
এর সুফলও পাওয়া যায়। পরের মাস থেকে বাড়তে শুরু করে প্রবাসী আয়। ডিসেম্বর মাসে এটি একটি দৃশ্যমান ভালো অবস্থানে এসে দাঁড়ায়। ফলে স্বস্তির আভাস মেলে বৈদেশিক বাণিজ্যে। চলতি বছরের শুরুটা ইতিবাচক ধারা দিয়েই শুরু হয়। এরই মধ্যে তৃতীয় সপ্তাহে এসে কিছুটা কমে যায়। তবে প্রবাসী আয় চলমান থাকায় আশার সঞ্চার হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২৩
জেডএ/এসআইএ