ব্যবসা উন্নয়ন সূচকে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। উন্নতি হয়েছে ব্যবসা শুরু করতে যে সব ঝক্কি ঝামেলার মুখোমুখি হতে হয় তারও।
বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) এমসিসিআই ও পিইবি যৌথ উদ্যোগে ‘বাংলাদেশ বিজনেস ক্লাইমেট ইনডেক্স (বিবিএক্স)’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে তারা এ মত দেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের (পিইবি) চেয়ারম্যান ড. এম মাশরুর রিয়াজ।
গবেষণায় বাংলাদেশ বিজনেস ক্লাইমেট ইনডেক্স তৈরিতে ১০টি মানদণ্ড বিবেচনা করা হয়। মানদণ্ডগুলো হলো ব্যবসা শুরু করা, জমির সহজলভ্যতা, নিয়ন্ত্রণমূলক তথ্যের সহজলভ্যতা, অবকাঠামো, শ্রম বিধিবিধান, বিরোধ নিষ্পত্তি, সীমান্ত বাণিজ্যের সহজীকরণ, কর পরিশোধ, প্রযুক্তির অভিযোজন ও ঋণের প্রাপ্যতা।
গবেষণায় বলা হয়, ২০২২ সালে বাংলাদেশের ব্যবসায় উন্নয়ন সূচকে উন্নতি হয়েছে। ২০২২ সালে ব্যবসা সূচকে উন্নতি হয়ে ৬১ দশমিক ৯৫ শতাংশ হয়। যেটি আগের বছর ২০২১ সালে ছিল ৬১ দশমিক শূন্য এক শতাংশ।
প্রতিবেদনে উঠে আসে, ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রেও কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ২০২২ সালে এ সূচক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ২০২১ সালে তা ছিল ৬৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। একজন উদ্যোক্তা ব্যবসা শুরু করতে গেলে কমপক্ষে ২৩টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের মুখোমুখি হতে হয়। এর মধ্যে তাকে ১৫০টি বিধি-বিধান মানতে হয়। বাংলাদেশে এখন কৃষি, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ে উদ্যোক্তা হওয়ার চেয়ে ফার্মাসিউটিক্যালস, কেমিক্যাল ও পোশাক খাতের ব্যবসা দেওয়া সহজ হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কারখানার জমি পাওয়ার সূচকে অবনতি হয়েছে। ২০২২ সালে এ সূচক হয়েছে ৫৩ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ, ২০২১ সালে যা ছিল ৫৮ দশমিক ৯০ শতাংশ। জমি পাওয়ার ক্ষেত্রে জরিপে অংশ নেওয়া ৮৬ শতাংশ ভুক্তভোগী বলেছেন, সরকারি সংস্থাগুলোকে ঘুষ দিতে হয়। দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে তুলনামূলকভাবে ঢাকা, ময়মনসিংহ ও রাজশাহীতে জমি পাওয়া কিছুটা সহজ।
১০টি পিলারের মধ্যে ব্যবসা করতে গিয়ে অবকাঠামো নির্মাণে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট পেয়েছে। গত বছরের চেয়ে এ খাতে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ২০২২ সালে তা বেড়ে ৭২ দশমিক ৪৯ শতাংশ, আগের বছরে এ সূচক ৭২ দশমিক শূন্য দুই শতাংশে ছিল।
সরকারি তথ্য প্রাপ্তিতে গত বছরের চেয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে। এ বছর সূচক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক ৮৫ শতাংশ, ২০২১ সালে তা ছিল ৫৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
গবেষণায় উঠে আসে, ২০২২ সালে শ্রম বিধি-বিধান সূচক উন্নতি হয়ে ৭৪ দশমিক ৪০ শতাংশ স্পর্শ করে। ২০২১ সালে যা ছিল ৬৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে শ্রমিকরা ফার্মাসিউটিক্যালস, কেমিক্যাল ও অবকাঠামো নির্মাণ খাত পোশাক ও পরিবহনের তুলনায় অনেক ভালোভাবে কাজ করছে।
ব্যাংক থেকে অর্থায়নের ক্ষেত্রে বড় ধরণের ঝামেলা পোহাতে হয়। ছোট উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে ঋণ না পেয়ে এনজিও-এর মুখোমুখি হয়। জরিপে অংশ নেওয়া ৮৭ শতাংশ মানুষ বলছেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে গেলে বা বিনিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে গেলে তারা অনেক জটিলতার সম্মুখীন হয়েছেন।
ব্যবসা ক্ষেত্রেও বিরোধ নিষ্পত্তিতে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ২০২২ সালে এ খাতে সূচক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪ দশমিক ২৪ শতাংশে। আগের বছর ২০২১ সালে ছিল ৫৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
করোনা মহামারী সময়ে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসার পরও তা ক্রমান্বয়ে উন্নতি হয়েছে। ২০২২ সালে এ খাতে সূচক দাঁড়ায় ৬০ দশমিক ৬০ শতাংশ, ২০২১ সালে যা ছিল ৫৭ দশমিক ৭০।
করোনা মহামারীর পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি ব্যবসা বাণিজ্যে এক ধরণের কালো মেঘের উপস্থিতি দেখা গেছে। এ জরিপেও তার লক্ষণ ফুটে উঠেছে। জরিপে দেখা যায়, ২০২২ সালে এ সূচকের অবনতি হয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ দশমিক ২২ শতাংশে। আগের বছর যা ছিল ৫০ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
বক্তারা ব্যবসায় বাণিজ্যে বাধা দূর করতে সরকারের যে সব উদ্যোগ নিয়েছে সেগুলো গতিশীল করার তাগিদ দেন। যাতে ব্যবসায় বাণিজ্যের সূচকে হওয়া এ উন্নতি টেকসই হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এমসিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বিশেষ অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সেক্রেটারি) মাসুদ বিন মোমেন, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) লোকমান হোসেন মিয়া।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২৩
জেডএ/এসআইএ