ঢাকা: ওষুধ শিল্পে ব্যবহৃত মেশিনারিজ, কাঁচামাল, প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংসহ সবকিছু এক ছাদের নিচে উপস্থাপন করা হয়েছে ১৪তম এশিয়া ফার্মা এবং ল্যাব এক্সপোতে। শুক্রবার (৩ মার্চ) ঢাকার কুড়িলে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) ওষুধ খাতের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ‘১৪তম এশিয়া ফার্মা অ্যান্ড ল্যাব এক্সপো’র দ্বিতীয় দিনে মেলা ঘুরে এমনটাই দেখা গেছে।
কীভাবে ওষুধ শিল্পের আরও প্রসার ঘটানো যায় সে লক্ষ্যে তিন দিনের এ মেলায় বাংলাদেশসহ ২৭টি দেশের ৬৫০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। প্রদর্শনীতে কোম্পানিগুলো নিজেদের ফার্মা প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, বায়োটেক ল্যাব ইকুইপমেন্ট, এপিআই ম্যানুফেকচারিং প্লান্টস অ্যান্ড মেশিনারিজ, ফার্মা ফর্মুলেশন অ্যান্ড ম্যানুফেকচারিংয়ের বিভিন্ন যন্ত্র, যন্ত্রাংশ, প্রযুক্তি সবার সামনে উপস্থাপন করছে।
ফলে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা ওষুধ শিল্প সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের আধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রাপাতি, যন্ত্রাংশ এবং কাঁচামাল সম্পর্কে বিস্তর অভিজ্ঞতা নিতে পারছেন।
এ আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী সাধারণত ওষুধ খাত সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্যে আয়োজন করা হলেও এবারের মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। যে কেউ চাইলে শনিবার (৪ মার্চ) পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আসতে পারবেন এ এক্সপোতে।
প্রথম দিনে মেলায় দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল ছোখে পড়ার মতো। কিন্তু সে তুলনায় মেলার দ্বিতীয় দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লোক সমাগম ছিল কিছুটা কম। দ্বিতীয় দিনে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায় বিভিন্ন কোম্পানি তাদের পণ্য প্রদর্শন করছেন। আর ওষুধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা এসব পণ্য ঘুরে ঘুরে দেখছেন। স্টলগুলোতে দ্বায়িত্বরতরা তাদের পণ্যগুলোর সম্পর্কে বিস্তারিত উপস্থাপন করছেন সবার কাছে।
ঘণ্টায় চার লাখ ক্যাপসুল তৈরি করতে পারে এমন মেশিন একটি বেসরকারি ওষুধ কোম্পানির কয়েকজনকে দেখাচ্ছিলেন ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ‘পার্লে গ্লোবাল টেকনলজি’ এজির এক্সপোর্ট কর্মকর্তা মি. পারেশ শর্মা। মেশিনটি সম্পর্কে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এটি হচ্ছে মূলত একটি ট্যাবলেট প্রেস মেশিন। এই মেশিন দ্বারা ঘণ্টায় প্রায় চার লাখ ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল তৈরি করা যায়। এতে কোনো মানুষের সাহায্যের প্রয়োজন হয় না। উৎপাদন বাড়াতে এখন পর্যন্ত ২০টির বেশি বাংলাদেশি ওষুধ কোম্পানি এই মেশিনটি ব্যবহার করছে।
মেলায় ‘ভায়াল লেবেলিং মেশিন’ বা ইঞ্জেকশনের সিরাপের বোতলে লেবেলিং করার মেশিন নিয়ে এসেছেন জেএবিএস ফার্মাটেক কোম্পানি। এর সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার মো. জুয়েল বাংলানিউজকে বলেন, মেশিনটি ভারতের তৈরি। এতে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওষুধের গায়ে লেবেলিং করা হয়। এই মেশিন দ্বারা ঘণ্টায় দুই হাজার পিস বোতল লেভেলিং করা যায়। এ ধরনের যন্ত্রের ব্যবহার বাংলাদেশে বাড়ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
মেলায় মেডিসিন এবং যন্ত্রাংশ বাদেও ল্যাবে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন সেফটি সোলিউশন আইটেমও আছে।
ওষুধ শিল্পে, বিশেষ করে মেডিসিন এবং যন্ত্রাংশে কী ধরনের বিকাশ বা উন্নয়ন হয়েছে তা দেখতে মেলায় এসেছেন স্কয়ার স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ওষুধ গবেষক তুষার দেবনাথ। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা যেহেতু ওষুধ নিয়ে কাজ করি তাই মেলায় এসেছি দেখতে কী ধরনের নতুন প্রযুক্তি এসেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মেলায় অংশ নেয়ায় অনেক নতুন কিছু জানতে পারি। ফলে নতুন যে সব পণ্য আছে তা উন্নয়ন করতে সুবিধা হয়। বিশ্ব অনেক এগিয়ে গেছে, এর সঙ্গে তালমিলিয়ে চলতে হলে প্রতিনিয়ত আপডেট হওয়ার দরকার আছে। এ ধরনের মেলা যা অনেকটাই পূরণ করতে পারে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশে বিশ্বমানের ওষুধ উৎপাদিত হচ্ছে এবং দেশের মোট অভ্যন্তরীণ চাহিদার ৯৮ শতাংশ পূরণ করছে। একই সঙ্গে বর্তমানে বিশ্বের ১৫৩টি দেশে বাংলাদেশের উৎপাদিত মানসম্মত ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে। যা বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনাময় হিসেবে দেখছেন এ শিল্পের সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২৩
ইএসএস/এমএমজেড