বরিশাল: প্রতিবছরের মতো এবারও বরিশাল নগরের পোর্টরোডের ফলের আড়তের পাশাপাশি মাছের আড়তগুলোও মৌসুমি ফল তরমুজে ছেয়ে গেছে।
দিন যত যাচ্ছে তরমুজের আমদানি তত বাড়ছে।
শ্রমিকরা জানান, অভয়াশ্রমে সব ধরনের মাছ শিকার বন্ধ থাকায় বরিশালের সর্বোবৃহৎ বেসরকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র অনেকটা নিস্তব্দ থাকে। তবে গত ১ দশকের বেশি সময় ধরে আশপাশের ফলের আড়তসহ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের বিভিন্ন জায়গাগুলোও তরমুজের দখলে চলে যায়। অনেক মাছ ব্যবসায়ী বা আড়তদার এ সময়টাতে তরমুজে লগ্নি করেন এবং বেশ ভালো মুনাফাও তুলে নেন। এ কারণে এখানকার শ্রমিকরা কর্মহীন থাকে না বললেও চলে।
এদিকে গোটা দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে আবাদের পরিমাণ বেড়েছে জানিয়ে কৃষকরা বলেন, আবাদের পরিমাণ বাড়ায় তরমুজের উৎপাদনও গত বছর থেকে এবার বেড়েছে।
পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার চরশাহজালালর এলাকার কৃষক কলিম হাওলাদার বলেন, প্রাকৃতিক কারণে এবারও তেমনভাবে তরমুজের কোনো ক্ষতি হয়নি। আর ফলন ভালো হওয়ায় লোকসানের কোনো শঙ্কাও দেখছেন না।
বাউফলের কৃষক কাশেম দরজি বলেন, আমরা যারা দীর্ঘদিন ধরে তরমুজ চাষ করছি, আমাদের দেখাদেখি তরমুজের প্রতি অন্য কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। এবার তরমুজের আবাদ বেড়েছে। তবে কোনো কোনো জায়গায় তরমুজে ছত্রাকের মতো নতুন রোগ দেখা দিয়েছে। যদিও তাতে উৎপাদনে তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি।
গলাচিপার চরকাজল এলাকার কৃষক আল-আমিন বলেন, বরিশালে যে দাম পাওয়া যাচ্ছে, সেই হিসেবে যে খরচ হয়েছে তাতে সব তরমুজ বিক্রি করে লাভ তেমন একটা হবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে মোস্তফাপুরসহ ঢাকার দিকে দাম বেশি বলে শুনছি।
দক্ষিণাঞ্চলের যেসব জায়গা থেকে বরিশালে তরমুজ আসছে তার মধ্যে ভোলার চরফ্যাশন, পটুয়াখালীর দশমিনা, গলাচিপা, বাউফলের অনেক কৃষকের অভিযোগ, সময়মতো কৃষি কর্মকর্তাদের কাছে পান না। তাই পাশের অভিজ্ঞ চাষি নয়তো বীজ ও সার সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানের লোকদের সহায়তা নিতে হয়েছে তাদের।
এদিকে আবাদের কারণে তরমুজের উৎপাদন বাড়লেও দাম এ বছর তেমন একটা বাড়েনি। আবার কমেওনি বলে জানিয়ে পোর্টরোডের ফল ব্যবসায়ী গনেশ দত্ত বলেন, ১৫ দিন আগে থেকে তরমুজের আমদানি শুরু হয় পোর্টরোডের ফলের আড়তগুলোতে। আর এখন তো ফলসহ মাছের আড়তও তরমুজের দখলে চলে গেছে। আর এখান থেকেই ট্রাকবোঝাই করে তরমুজ যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এ অবস্থা চলবে আরও একমাসজুড়ে।
তিনি বলেন, পটুয়াখালীর বাউফলের ধুলিয়ার দিকে নৌপথের দস্যুরা তৎপর রয়েছে। তারা তরমুজবাহী ট্রলারে এবারও হানা দিচ্ছে। এ কারণে কৃষক ও নৌযান চালকরা শঙ্কায় রয়েছেন। তাই নৌপথ নিরাপদ না রাখলে কৃষকের পণ্য যথা সময়ে ভোক্তার কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে না। সেইসঙ্গে কৃষকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
এদিকে খুচরা বাজারে এরইমধ্যে তরমুজের বেচা-বিক্রি জমে উঠেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রাকিব নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ১৫ হাজার টাকা দামে ১০০ পিস মাঝারি সাইজের তরমুজ কিনেছি। আর খরচ মিলিয়ে ১৭ হাজার টাকা পড়েছে। সেই হিসেবে ১৭০ টাকার প্রতি পিস তরমুজ ২০০ টাকার নিচে বিক্রি করা যাবে না। আর ২০০ টাকার নিচে কোনো তরমুজ ক্রেতাদের পছন্দও হবে না। এখন একটু দাম বেশি বলে মনে করছেন ক্রেতারা।
মনির হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, শুরুর দিক হওয়ায় চাহিদা থেকে আমদানি কমের কারণে দাম মনে হচ্ছে বেশি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দাম কমবে বলে মনে করেন তিনি। আর বিক্রিতা জালালও বলছেন, গরম বাড়লে তরমুজের চাহিদা বাড়ে। তাতে দামও বাড়ে। তবে সামনে রমজান হওয়ায় তরমুজের দাম কমবে।
পাইকার বাজারে আকার অনুযায়ী শত প্রতি ১০ থেকে ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পোর্টরোডের আড়তদার ইব্রাহিম জিতু।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩২ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২৩
এমএস/আরবি