ঢাকা: পল্লী-কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেছেন, কিছু মানুষ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা বলছে; এখনো দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবই পুরোপুরি সমাপ্ত হয়নি। কিছু মানুষের কাছে সেই পরিমাণ সম্পদ আছে, তারা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা বলছে, বাকিদের ভেড়া বানিয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব করে, অর্থ লুট করে পাচার করতে চায়।
বুধবার (২৯ মার্চ) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তন ওয়েব ফাউন্ডেশন ও এশিয়া ফাউন্ডশনের যৌথ আয়োজনে ‘সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির নীতিগত সংস্কার সম্পর্কিত পলিসি কনফারেন্স’ শীর্ষক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, উন্নয়ন হচ্ছে, কিন্তু সকল মানুষের কাছে পৌঁছায় না। মুষ্টিমেয় মানুষের কাছে সম্পদ থেকে যাচ্ছে। তারা যে পরিমাণ রাজস্ব দেওয়ার কথা, তা দেয় না, বিদেশে পাচার করছে। কর-অভ্যন্তরীণ মোট উৎপাদনে অনুপাত সর্বনিম্ন। এর ফলে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসহ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে যে অর্থ দরকার, সেটা সরকারের কাছে থাকছে না।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অর্থ বিতরণ ব্যবস্থায় সমস্যা রয়েছে উল্লেখ করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, প্রথমে সমস্যা হয়েছিল, সমস্যা থেকে উত্তরণে ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এবার নির্দিষ্ট মোবাইল ফাইনান্সিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সহায়তার খবর ভুক্তভোগীর কাছে পৌঁছানোর আগেই রাতের আঁধারে টাকা আউট হয়ে যায়।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে সরকারের ইচ্ছা আছে। এটা সঠিকভাবে ভুক্তভোগীর কাছে পৌঁছাতে ডেটাবেজ সমৃদ্ধ করতে জোর দেন এই রাজনীতিক।
তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। এ খাতে বরাদ্দের ৪৫ ভাগ চলে যায় সরকারি কর্মচারীদের পেনশন বাবদ। অতি দরিদ্র, বয়স্ক জনগোষ্ঠী, দুস্থ মায়ের জন্য যেসব কর্মসূচি রয়েছে, সেগুলো স্বচ্ছতার অভাবে ভুক্তভোগীর কাছে শতভাগ পৌঁছায় না।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক শারমিন্দ নিলোর্মী। তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় যে সহায়তা দেওয়া হয়, সেটাও শতভাগ দরিদ্র মানুষের কাছে পৌঁছায় না, তারা পাচ্ছে ৫৫ শতাংশ। বাকি ৪৫ শতাংশ পাচ্ছে অ-দরিদ্র মানুষ। এ অবস্থায় সরকারের সহায়তা বৃদ্ধির পাশাপাশি সহায়তা কর্মসূচি স্বচ্ছ করতে হবে।
বিআইআইএসএস গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবীর বলেন, সরকারের যথেষ্ট সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি আছে। কিন্তু অনেক এলাকা আছে তারা জানেই না। অথচ এসব এলাকার মানুষ চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। আয় রোজগার নেই। কিন্তু না জানার কারণে এসব মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ধারে কাছে আসতে পারছে না। এসব মানুষের জন্য সরকারের বরাদ্দ থাকলেও তা তারা পাচ্ছে না। মানবেতর জীবনযাপন করছে। এসব মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনতে হবে।
ওয়েবফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী বলেন, করোনা মহামারি সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা বাড়িয়েছে। দারিদ্র্য বেড়েছ। মানুষের সে সমস্যাগুলো এখনো রয়েছে। করোনা পরবর্তী সমস্যাগুলো প্রকট হয়েছে। মানুষ ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. আসিফ সাহান। তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির নগদ সহায়তা মোবাইল ফাইনান্সিংয়ের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। যাদের কাছে এ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, তাদের ৭০ ভাগ মানুষের মোবাইল ফাইনান্সিংয়ের একাউন্ট রয়েছে।
তিনি বলেন, মোবাইল ফাইনান্সিং ব্যবহার করে সহায়তা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে, এটা ভালো। তবে এ জন্য মানুষের যে জ্ঞান থাকার কথা তাদের তা নেই। এর ফলে যেটা হয়েছে সেটা হলো, মানুষ মনে করছে বিষয়টি জটিল। আরেকজনের ওপর নির্ভর করছে। এতে ঝামেলা তৈরি হয়েছে। অনলাইন কার্যক্রম ধরে রেখে ডিজিটাল জ্ঞান দেওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২৩
জেডএ/এমজেএফ